শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ছাত্রলীগে আওয়ামী লীগের হস্তক্ষেপ কি আরপিও ভঙ্গ হয় না প্রশ্ন রিজভীর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৬:২৩ পিএম

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরী বৈঠকে গঠনতন্ত্র ও গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ লংঘন করে বাই ফোর্স ছাত্রলীগের সভাপতি শোভন ও সেক্রেটারি রাব্বানীকে পদচ্যূত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সংশোধিত চূড়ান্ত গঠনতন্ত্রের ২৫ (১) ধারা অনুযায়ী ছাত্রলীগ তাদের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন মাত্র। এদিক থেকে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগকে কোনও আদেশ- নির্দেশ দেওয়া বা তাদের ওপর হস্তক্ষেপ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। তারা কেবল পরামর্শ দেয়ার অধিকার রাখে। কিন্তু নিয়ম নীতি, বিধি বিধান আইন-কানুন সব লংঘন করে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে ঢাকঢোল পিটিয়ে হুমকী ধামকী দিয়ে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করছেন। এতে কি আরপিও ভঙ্গ হয়না? আইন-আদালতের মারপ্যাঁচে ছাত্রদলের কাউন্সিল বন্ধ থাকলে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সরিয়ে কোন আইনে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেয়া হলো? মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও এক সময়ের ছাত্রলীগ সভাপতি তোফায়েল আহমেদ (৫ আগস্ট ২০১৬ একটি শীর্ষস্থানীয় মিডিয়াকে) বলেছিলেন, নীতিগতভাবে ছাত্রলীগকে আমরা কিছু বলতে পারি না। ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের শুধুমাত্র ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। জনপ্রতিনিধিত্ব (আরপিও) আইন অনুযায়ী তারা স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সংগঠন। ফলে ছাত্রলীগকে কোনও নির্দেশ দেওয়া সম্পূর্ন বেআইনি। তবে আমরা পরামর্শ দিতে পারি মাত্র। কিন্তু বাস্তবে কি দেখতে পাচ্ছি? আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে পদচ্যূত করে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেকথা স্বীকার করে পরদিন গত রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ফ্লাইওভার পরিদর্শন করতে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং বাধ্যতামূলক পদত্যাগ করানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেই ছাত্রলীগের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও দেখভাল করছেন। ছাত্রলীগের পরবর্তী সম্মেলন সম্পন্ন করতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি।

রিজভী বলেন, বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের লক্ষে নিয়ম-নীতি অনুসরন করে গত ১৪ সেপ্টেম্বর কাউন্সিল অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছিল। এই কাউন্সিল ও নেতৃত্ব নির্বাচনকে ঘিরে সারাদেশে ছাত্রদলের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও উৎসবের আমেজ তৈরী হয়। কিন্তু কাউন্সিল অনুষ্ঠানের মাত্র দু’দিন আগে বর্তমান মিডনাইট নির্বাচনের ফ্যাসিস্ট সরকার আজ্ঞাবহ নিম্ন আদালত থেকে তড়িঘড়ি করে কাউন্সিলের ওপর একটি নিষেধাজ্ঞা জারী করে থামিয়ে দেয়া হয় ছাত্রদলের কাউন্সিল। কোন ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থন করার কোনো সুযোগ না নিয়ে যেভাবে দ্রুততার সাথে রাতের অন্ধকারে আদালতের এই আদেশ বের করা হয়েছে তা থেকে প্রতীয়মান হয়, এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরকারের সর্বোচ্চ মহল জড়িত। এমনকি বিএনপি ও তার নেতাদের উপরে অন্যায্য ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে আদেশ জারি করা হয়েছে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ না দিয়েই। এটা শেখ হাসিনার বিদ্বেষমুলক রাজনীতির আরেকটি কলংকজনক ও নজিরবিহীন অধ্যয়।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগের অব্যহতিপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের ২৯ তম কাউন্সিলের সময় ছাত্রলীগের নতুন নেতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ৬ জনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক- জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক-খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও এনামুল হক শামিম। ঢাকার চতুর্থ সহকারী জজ আদালতকে দিয়ে ছাত্রদলের কাউন্সিলের ওপর সাময়িক স্থগিতাদেশ জারি করিয়ে তারপরদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপির নেতৃত্ব সংকটের কারণেই নাকি ছাত্রদলের সম্মেলন স্থগিত হয়েছে।’-কি হাস্যকর আজব কথা। এবারও ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকে অব্যহতি দেয়ার আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সচিবালয় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে বলেছেন ছাত্রলীগের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের ৪ নেতাকে।

বিএনপির এই নেতা প্রশ্ন রেখে বলেন, এখন যদি কেউ এই অবৈধ কর্মকা- এবং শোভন-রাব্বানীর পদচ্যূতিকে চ্যালেঞ্জ করে ঐ একই ঢাকা চতুর্থ সহকারী জজ আদালতে একই ধারায় একটি ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করে, তবে বিএনপির উপরে যেমন শোকজ ও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, আওয়ামীলীগ ও শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের উপর একই রকম স্থগিতাদেশ এবং শোকজের আদেশ দিতে পারবে কি? ওবায়দুল কাদেরের কথা অনুযায়ী তারা যে আরপিও এবং দলীয় গঠনতন্ত্র লংঘন করেছেন সেটা বৈধ আর বিএনপি সকল নিয়মনীতি অনুসরণ করেও অপরাধী? আওয়ামীলীগ গনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও আওয়ামী লীগের সংশোধিত চূড়ান্ত গঠনতন্ত্রের ২৫(১) ধারা লংঘন করেছে। এখন আদালত বা নির্বাচন কমিশন চুপ কেন? এখন কেন তাদের টনক নড়েনা?

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন