চাঁদাবাজির অভিযোগে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের এক সহসভাপতি এবং সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এক মহিলা নেত্রীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ সহসভাপতি হলেন- মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ। গত রোববার তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এছাড়া আওয়ামী লীগের মহিলা নেত্রী হলেন- সেলিনা আনোয়ার ময়না। তিনি কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। চাঁদাবাজি ও মারধরের মামলায় গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আদালত ও মিরপুর মডেল থানা সূত্র জানায়, গত রোববার আরিফুল ইসলামকে আদালতে হাজির করে তিন দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার এসআই মো. শাহ আলম। শুনানি শেষে আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
এসআই মো. শাহ আলম বলেন, মোহাম্মদপুর-উত্তরা রুটে চলাচলকারী প্রজাপতি পরিবহন লি. কোম্পানির রোড ইনচার্জ মো. তানজিল গত শনিবার আরিফসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। অভিযুক্ত অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। মামলার এজাহারে জানা যায়, আরিফ প্রজাপতি পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএম রফিকুল ইসলামের কাছে ফোনে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মিরপুর মডেল থানার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সামনে একই কোম্পানির বেশ কয়েকটি বাস আটকে ভেতরের একটি গলিতে ঢুকিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দেয় আরিফ গং। এরপর চালক ও হেলপারদের মারধর করে। পরে পুলিশ গিয়ে আরিফকে আটক করে এবং পাঁচটি বাস উদ্ধার করে মালিক পক্ষকে বুঝিয়ে দেয়।
মামলার বাদী মো. তানজিল বলেন, আরিফ বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আসছে। এর আগেও ছাত্রদের দিয়ে ঝামেলা করিয়ে টাকা নেয়। আমরা উপায় না পেয়ে মামলা করেছি। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহীম বলেন, ছাত্রলীগে কোন চাঁদাবাজের স্থান নেই। তাকে সাংগঠনিকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এদিকে, কলারোয়া থানার ওসি শেখ মুনীর-উল-গীয়াস বলেন, সোমবার রাতে উপজেলার দেয়াড়া থেকে পুলিশ সেলিনা আনোয়ারকে গ্রেফতার করে। দেয়াড়া ইউনিয়নের খোরদো বাওড়কে কেন্দ্র করে একজনকে মারপিট ও চাঁদা দাবির ঘটনায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কলারোয়া থানা পুলিশ সূত্র জানায়, খোরদো মৎস্যজীবী সমিতির সদস্য পাকুড়িয়া গ্রামের শচীন বিশ্বাসের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। এ চাঁদা দাবিকে কেন্দ্র করে গত ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় দেয়াড়ার পাকুড়িয়ার ব্রাক অফিসের সামনে শচীন বিশ্বাসকে মারধর করে তার পা ভেঙ্গে দেয়া হয়। এই ঘটনায় গত ১২ সেপ্টেম্বর থানায় অভিযোগ দায়ের ও ১৫ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন শচীন বিশ্বাসের স্ত্রী কনিকা বিশ্বাস। পরে পুলিশ সেলিনা আনোয়ার ও নিত্যজিৎ বিশ্বাস নামে দু’জনকে গ্রেফতার করে।
খোরদো মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি বাবুল বিশ্বাস বলেন, ১৩ মে তারা খোরদো বাঁওড়ের একসনা বন্দোবস্ত নিয়ে জেলে স¤প্রদায়ের ১০০ জন লোকসহ ১১৪ জন মাছ চাষের প্রস্তুতি নেন। ৮ লাখ টাকার মাছের পোনাসহ প্রায় ১৪ লাখ টাকা খরচ করেন ওই বাঁওড়ে। কিন্তু স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান গাজী ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সেলিনা আনোয়ার ময়নাসহ একটি মহল বাঁওড়ে মাছ চাষ করতে হলে তাদের পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে বলে দাবি করে। সেলিনা আনোয়ার কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের দলুইপুর গ্রামের বাসিন্দা ও দেয়াড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত স ম আনোয়ারুল ইসলামের স্ত্রী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন