মাত্র ৭দিনের ব্যবধানে হিরো থেকে জিরো হয়ে সর্বশান্ত ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। মোটর সাইকেলের বহর থেকে আবার একাকী যাত্রা দুই নেতার। ছাত্রলীগের ৭২ বছরের ইতিহাসে কমিটির মেয়াদ শেষ হবার আগেই পদত্যাগ বা অপসারিত হয়ে ব্যতিক্রমি উদাহরণ সৃষ্টি হল এই দুই নেতাকে ঘিরে। কিন্তু সংগঠন থেকে পদ গেলেও বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না তাদের। একদিকে শোভন-রাব্বানীর বিচারের দাবি, আরেক দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চাঁদাবাজির ঘটনার ফোনালাপ ফাঁস যেন শোভন-রাব্বানীর মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে কাজ করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট থেকে পদত্যাগ করেছেন শোভন। ডাকসুর জিএস রাব্বানীরও পদত্যাগের জোর দাবি উঠছে। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চাঁদাবাজির ঘটনার ফোনালাপ ফাঁস হবার পর দুইজনের বিরুদ্ধেই প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছে ছাত্রলীগেরই পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। এছাড়াও তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে এখন মুখ খুলছেন নেতারা।
এদিকে বিগত সময়ে এই দুই নেতাকে যারা ছত্রছায়া দিয়েছেন তারাও এখন পাশে নেই। একদমই একা সময় পার করছেন তারা। যোগাযোগ করলেও কাউকে পাশে পাচ্ছেন না, এমনকি কথা বলারও সুযোগ দিচ্ছেন না বেশিরভাগ আওয়ামী লীগ নেতা। সার্বক্ষণিক পাশে থেকে প্রটোকল দেয়া নেতাকর্মী আর সহমত পোষণকারী কেউ আর পাশে নেই। পদ যাওয়ার কয়েক ঘন্টা পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে এই দুই নেতার সামনেই নতুন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির নামে সেøাগান দেই তাদেরই অনুসারীরা। কিন্তু বিদায়ের সঙ্গে বিতর্ক বিদায় নিচ্ছে না। ফাঁস হওয়া ফোন আলাপে রাব্বানী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কথায় উঠে আসে এক কোটি ষাট লাখ টাকার চাঁদার কথা। এরপরই শোভন রাব্বানীর বিচারের দাবি মিছিল হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও উঠছে।
এ নিয়ে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) থেকে জিএস রাব্বানীর পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, বিতর্কিত, দুর্নীতিবাজ তো থাকতে পারেন না। আমি এ বিষয় নিয়ে ডাকসু সভাপতি ও ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, গঠনতন্ত্র দেখে ব্যবস্থা নেবেন। দরকার হলে ডাকসুর সভা ডেকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। তবে বহিষ্কৃত হওয়ার চেয়ে নিজে থেকে সরে গেলে সেটাই হবে সম্মানের।
তবে ডাকসু থেকে পদত্যাগের বিষয়ে গোলাম রাব্বানী বলেন, ডাকসুতে আমি নির্বাচিত প্রতিনিধি। শোভন ছাত্রলীগ সভাপতি হিসেবে সিনেট সদস্য হয়েছিল, সে অনির্বাচিত তাই পদত্যাগ করেছে। আমি ছাত্রদের দ্বারা নির্বাচিত। পদত্যাগ করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের অপমান করা হবে।
এদিকে ছাত্রলীগ থেকে অপসারণের বিষয়টি সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন রাব্বানী। তিনি বলেন, ঠিক মতো তদন্ত হলে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন।
এদিকে শোভন রাব্বানীর বিতর্কের শেষ না হতেই ছাত্রলীগের নতুন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্যকে নিয়ে উঠেছে নতুন বিতর্ক। লেখক হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সংগঠন ইসকনের ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক বলে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ বিষয়ে লেখক গতকাল বলেন, ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ছাড়া আমি অন্যকোনো সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। কোনো রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় কোনো সংগঠনের সঙ্গেও নয়।###
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন