রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গণহত্যার কারণে দেশটির শীর্ষ বেসামরিক নেত্রী অং সান সু চির বিচার হতে পারে। মঙ্গলবার একথা জানিয়েছে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। সুচি-কে তার সেনাদের গণহত্যার দায় কতটা বহন করতে হতে পারে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মিশনের প্রধান মারজুকি দারুসমান। তবে সরাসরি জড়িত না থাকলেও তাকে আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে। কারণ পার্লামেন্টে সুচি-র দল সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় আইন প্রণয়ন বা সংশোধনীর মাধ্যমে তিনি গণহত্যা ঠেকাতে পারতেন। এদিকে, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত দেড়শ জনের একটি তালিকা জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের কাছে হস্তান্তর করেছে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। অপরদিকে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচিকে দু’চোখ খোলার আহ্বান জানিয়েছেন মিয়ানমারে মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিউর ইয়াংহি লি। তিনি বলেছেন, ম্যাডাম স্টেট কাউন্সেল আপনার চোখ খুলুন। শুনুন। হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করুন (রোহিঙ্গাদের কথা)। অনেক দেরি হয়ে যাওয়ার আগে আপনার নৈতিক কর্তৃত্বকে ব্যবহার করুন। মঙ্গলবার মানবাধিকার কাউন্সিলকে এ বিষয়ে অবহিত করেছেন ইয়াংহি লি। তিনি বলেছেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি চরম উদ্বেগজনক। প্রায় চার বছর আগে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সুচির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) কাছে এমনটা প্রত্যাশা করেননি ইয়াংহি লি এবং অন্যরা। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা ইউএনবি। ইয়াংহি লি বলেছেন, দশকের পর দশক মুক্ত ও গণতান্ত্রিক মিয়ানমারের জন্য একটানা লড়াই করেছেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেল অং সান সুচি। তার কাছে জানতে চাই তার দেশে এখন যা ঘটছে, তিনি কি সত্যিকারভাবে আজকের এই অবস্থাকে দেখতে চেয়েছেন? ইয়াংহি লি বলেন, আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানানোর পরও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও নিষ্পেষণের যে ধারা তা ভেঙে দিতে কিছুই করেনি মিয়ানমার। এখনও রাখাইনে যেসব রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন তারা সেই একই করুণ পরিণতির শিকার, যেমনটা ২০১৭ সালের আগস্টে তাদের সঙ্গে ঘটেছিল। তিনি আরো বলেন, তাদের নাগরিকত্ব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। স্বীকৃতি নেই। নিয়মিত সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছে। অবাধে চলাচল করতে পারে না। খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, জীবিকা নির্বাহ ও চাকরির ক্ষেত্রে তাদের কোনো সুবিধা নেই বললেই চলে। ইয়াংহি লি বলেন, মিয়ানমার দাবি করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় সব করেছে তারা এবং প্রত্যাবর্তনে বিলম্বের জন্য তারা বাংলাদেশকে অব্যাহতভাবে দায়ী করে। কিন্তু আমি যে তথ্য পেয়েছি তাতে আমাকে বিশ্বাস করতে হয় যে, আসল সত্য এর উল্টো। তিনি বলতে চেয়েছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় সব করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এক্ষেত্রে বিলম্বের জন্য প্রকৃতপক্ষে দায়ী মিয়ানমার। ইয়াংহি লি বলেন, স্যাটেলাইটের ছবিতে ৩৪টি শিবির নির্মাণের দৃশ্য দেখা গেছে। এগুলো কি উদ্দেশে নির্মাণ করা হয়েছে বা হচ্ছে তা অস্পষ্ট। তিনি বলেন, দৃশ্যত মনে হচ্ছে মিয়ানমারে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা ও যারা ফিরে যাবেন তাদেরকে সেখানে আটক রাখা হবে। তিনি আরো বলেছেন, উত্তর রাখাইনে এমন নির্মাণকাজ দেখা গেছে স্যাটেলাইটের ছবিতে। এর মধ্যে রয়েছে ৬টি সামরিক ঘাঁটি। এসব ঘাঁটি নির্মাণ করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো ধ্বংস করে দিয়ে সেখানে। রাখাইনে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে ৩৯২টি গ্রাম। এর মধ্যে ৩২০টি গ্রাম পুনঃমেরামতের কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। শতকরা ৪০ ভাগ গ্রামকে পুরোপুরি মিশিয়ে দেয়া হয়েছে মাটির সঙ্গে। ইয়াংহি লি বলেন, এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে ২০১৮ সালে কিছু এবং ২০১৯ সালে বাকিগুলোতে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের গ্রহণ করতে যে মিয়ানমার প্রস্তুত, এসব বিষয় তাদের এমন বক্তব্যের বিরুদ্ধে যায়। আমি আরো দেখেছি, মিয়ানমারের ভূমি আইনের অধীনে কোনো এলাকা পুড়ে গেলে সেই এলাকার মালিকানা চলে যায় সরকারের হাতে। এই অবস্থায় যদি রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত যেতে রাজি হন তাহলে তারা ফিরে গিয়ে কি পাবেন? ইয়াংহি লি আরো বলেন, আমার বিশ্বাস সার্বিকভাবে এজন্য জবাবদিহিতা প্রয়োজন। রয়টার্স, ইউএনবি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন