শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আ. লীগের তৃণমূল কর্মীরা খুশি

দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

দলের দুর্নীতি ও অপরাধগ্রস্ত নেতাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থানে খুশি সংগঠনের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগ, যুবলীগ দিয়ে শুরু হলেও সারাদেশে জেলা থেকে উপজেলায় যেসব নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, বালুমহাল দখল, অপরাধ ও অসামাজিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে আওয়ামী লীগ। দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি প্রশাসনিকভাবেও অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইন-প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ‘গ্রিন সিগনাল’ দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা।

মন্ত্রী-এমপিদের ছত্রছায়ায় অপকর্ম হলেও সকল বাধা উপেক্ষা করে সরাসরি ব্যবস্থা নিতেও বার্তা দেয়া হয়েছে। দলে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে বার্তা দেয়া হয়েছে তৃণমূলে। অপরাধ নির্মূল ও দলের শুদ্ধি অভিযানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদক্ষেপ ও জিরো টলারেন্স নীতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে স্বাগত জানাচ্ছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

তৃণমূল নেতারা বলছেন, দলের কিছু চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, মাদক ব্যবসায়ী ও বিএনপি-জামায়াতের অনুপ্রবেশকারীদের কারণে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আকাশসমান অর্জন ম্লান হয়ে যাচ্ছে কিছু কিছু সময়। তাদের মতে, দলে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করতে হবে। গুটিকয়েক অপরাধী ও দুর্নীতিবাজ নেতাদের কারণে সকল নেতাকর্মীদের ঢালাওভাবে খারাপ বলে জনগণ। কিন্তু অপরাধের সঙ্গে জড়িত এসব নেতার সংখ্যা খুবই সামান্য। নব্বই শতাংশ নেতাকর্মী সুস্থভাবে রাজনীতি করেন, জনগণের জন্য রাজনীতি করেন। কিন্তু অপরাধী, দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের কারণে ভালো ও সুস্থধারার রাজনৈতিক ব্যক্তিরা কোণঠাসা হয়ে থাকেন।

নেতাকর্মীদের আরো অভিযোগ, দলের সিনিয়র কিছু নেতা ওইসব দুর্নীতিবাজ, মাদক ব্যবসায়ী ও বিতর্কিতদের দলের বিভিন্ন পদ দিচ্ছেন এবং তাদের ছত্রছায়া দিয়ে বড় অপরাধ করার সাহস জোগাচ্ছেন। তাই সেই সকল প্রশ্রয়দাতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনে সুস্থ পরিবেশ ফিরে আসবে। ত্যাগী নেতাদের দলে মূল্যায়ন করতে হবে। দলের প্রতি জনগণের আস্থা অনেক বেশি বাড়বে।

এ বিষয়ে ধানমন্ডি থানা মহিলা লীগের সভাপতি শেখ মিলি ইনকিলাবকে বলেন, দলের অপরাধী, অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই। কিছু নেতার অপকর্মের কারণে পুরো দলের ভাবমূর্তি ও অর্জন নষ্ট হতে পারে না। দেশব্যাপী দলে শুদ্ধি অভিযান জোরদার করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন নেতাকর্মীরা। দলের কারো অপরাধ প্রমাণ হলে বা প্রশাসনের কোন দুর্নীতি ধরা পড়লে নেতাকর্মীরা সরব হয়ে উঠছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, শুদ্ধি অভিযান, জয়তু শেখ হাসিনা হ্যাশট্যাগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এসব পদক্ষেপ প্রমোট করছেন সবাই।

আওয়ামী লীগ নেতা রেদওয়ান খান বোরহান ইনকিলাবকে বলেন, প্রত্যেক জেলা ও উপজেলায় দলের অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রীর সম্মান আরো হাজার গুণ বেড়ে যাবে। অপকর্মকারীরা এমপি-মন্ত্রীদের নাম ভাঙিয়ে অনেক কিছু করছে, কিছু ক্ষেত্রে এমপি-মন্ত্রীরাও জানে না তার নাম ভাঙিয়ে কত ধরনের অপরাধ করা হচ্ছে। অথচ প্রশাসনের অনেকে ভয়ে তাদের কিছু বলে না যে তারা তো এমপি-মন্ত্রীর লোক। তাই এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা প্রত্যেক জায়গায় পৌঁছে দিতে হবে। মাদকবিরোধী অভিযান ও সম্প্রতি দলের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের কারণে শুধু আওয়াম লীগ নয়, বিএনপিসহ সকল দলের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপকে স্বাগত জানাচ্ছেন।

গত শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী বৈঠকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে চাঁদা দাবির ঘটনায় অপসারিত হয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। এরপর শোভন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট থেকে পদত্যাগ করে। এদিকে রাব্বানী বলছেন, তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আপাকে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ভুল বোঝানো হয়েছে।

এরপর গতকাল ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। শনিবারের বৈঠকে খালেদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাস্তায় প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করেন যুবলীগের এই নেতা। অথচ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় কেউ এগিয়ে আসেনি। তাই এ রকম নেতা দলে কোনো প্রয়োজন নেই। তারা যদি না শোধরায় জঙ্গি দমনের মতো করে তাদের দমন করা হবে।

এই ঘটনার পর যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেন, দলের কারো বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ থাকলে তা সংগঠনের নিজস্ব ট্রাইব্যুনালে তদন্ত করা হবে। তাই অভিযোগগুলো চেয়ারম্যান বরাবর পাঠাতে অনুরোধ জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর কঠোর অবস্থানে হঠাৎ পেরেশানি তৈরি হয়েছে দলের মধ্যে। কখন কে অপরাধের কারণে আলোচিত হন এবং শাস্তির মুখে পড়েন তা নিয়ে টেনশনে নেতারা। তবে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা এ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করছেন। তাদের মতে, ওইসব নেতা দলের খারাপ ছাড়া ভালো কোনো কাজে আসে না। দলের সুন্দর পরিবেশ ও সুস্থ রাজনীতির জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আরো কঠোর হতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন