শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট

রাজধানীর ভাটারায় জনজীবন বিপর্যস্ত

স্টাফ রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

রাজধানীর ভাটারা ছোলমাইদ এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি ও দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ওই এলাকায় গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি না পেয়ে গোসল, খাওয়া ও রান্নার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এতে বাসিন্দাদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এই এলাকাবাসীর জন্য এখন পর্যন্ত কোনো বিকল্প ব্যবস্থাও নেয়নি ঢাকার পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ এলাকার পাম্পগুলোতে নেই জেনারেটর ব্যবস্থা। তাই কখনও পাম্প নষ্ট, আবার কখন বিদ্যুত থাকে না। একটা না একটা সমস্যার কারণে পানি নিয়ে সারা বছরই এই এলাকার মানুষদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ভাটারা থানার ছোলমাইদ উত্তর পাড়া ও এর আশেপাশের এলাকায় পানির তীব্র সঙ্কট চলছে। পানির সঙ্কটে এই এলাকার প্রায় ৭০ হাজার মানুষের দুর্ভোগ এখন চরমে। অজু, গোসল, রান্ন-বান্নাসহ গৃহস্থালী কাজ করতে হচ্ছে অন্য এলাকা থেকে সংগ্রহ করা পানি ও কেনা পানির উপর নির্ভর করে। অথচ এ এলাকার বাসিন্দারা প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকার বিল পরিশোধ করতে হয় ওয়াসাকে। কিন্তু বাস্তবে তারা পানি সমস্যা দূর করতে পারছে না।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পরেশনের (ডিএনসিসি) ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ঢালী বলেন, এ বিষয়ে আমি প্রতিদিন ওয়াসায় যাচ্ছি ও যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। তিনি বলেন, আমি তাদের এখানকার ইনচার্জকে অনুরোধ করেছি, আপনি নিজে এসে এখানকার মানুষের দুর্ভোগ দেখে যান। পানির অভাবে এ এলাকার মানুষ কত কষ্টে আছে। কিন্তু এই এলাকার পানির সমস্যা সমাধানের তাদের কোন উদ্যোগ এখন পর্যন্ত লক্ষ্য কারা যায়নি।
বিশুদ্ধ পানি সঙ্কটের সমাধান না পাওয়ায় এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে খাওয়া এবং রান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য দোকান থেকেই কিনছেন পানি। সেই সঙ্গে এ সমস্যা সমাধানেরও আশা করছেন। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে এমন সমস্যা থাকলেও কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনো সমাধান পাননি তারা। তাই খাওয়া, রান্না এবং গোসলসহ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার উপযোগী পানির তীব্র সঙ্কট বাসিন্দারা দোকান থেকে পানি কিনে খাচ্ছেন। এতে তারা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল বাসিন্দারা টাকার অভাবে যেন তেনভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে জ্বর, সর্দি, কাশি, চর্মরোগসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে বাসিন্দারা।
ছোলমাইদ এলাকার বাসিন্দা এবং গৃহিণী সামসুন্নাহার বলেন, সাতদিনের ওপরে হয়ে গেল আমাদের এলাকায় পানি নাই। কাপড় ধোয়া, গোসল, এসব না হয় বাদ দিলাম। কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য তো খেতে হয়, তাও ঠিকমত করতে পারছি না। কারণ রান্না-বান্না করার মত পানিও নেই আমাদের ঘরে। রান্নার জন্য প্রতিদিন কিছু পানি দোকান থেকে কিনে আনি। কিন্তু এভাবে কতদিন চলতে হবে কে জানে। এলাকার অন্য আরেক বাসিন্দা এবং একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা প্রণব কুমার বলেন, সিটি কর্পোরেশনের মত এলাকায় এভাবে দিনের পর দিন পানি নেই, এটা হতে পারে না। বারংবার ওয়াসার লোকেদের বলার পরেও কোনো সমাধান হচ্ছে না। তিনি বলেন, আমাদেরকে দূরের এলাকা থেকে কোনো পরিচিতজনের বাসা থেকে অথবা মসজিদ থেকে পানি নিয়ে আসতে হচ্ছে। অথবা মাঝে মাঝে পানি কিনে নিতে হচ্ছে। খুবই দুর্বিষহ দিন যাচ্ছে আমাদের। পানি ছাড়া এভাবে আর কতদিন চলতে হবে আমাদের সেটাও কেউ বলতে পারছে না।
জানা যায়, ভাটারা এলাকার জন্য ওয়াসার পানির পাম্প আছে দুইটি। জোন-৮ এর আওতাধীন এই পাম্প দুইটির একটি সপ্তাখানেকের বেশি সময় ধরে নষ্ট হয়ে আছে। সেই পাম্প দিয়ে পানি তুলতে গেলে বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা ও মাটি উঠে আসে পানির সাথে। তাই বন্ধ আছে পাম্পটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াসার অঞ্চল-৮ এর নির্বাহী প্রকৌশলী এমরানুল ইসলাম বলেন, এই এলাকার জন্য দুইটি পাম্প রয়েছে। এর মধ্যে একটি নষ্ট। সেটি দিয়ে পানি উঠাতে গেলে পানির সাথে মাটি ও পাথর উঠে আসে। তাই এটি বন্ধ রাখা হয়েছে।
আগামী ৫/৬ দিনের মধ্যে পাম্পটি মেরামত করা হয়ে যাবে। তখন থেকে পানি সরবরাহ আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তিনি আরও বলেন, আমরা ওই এলাকার জন্য আরেকটি পাম্প স্থাপন করতে চাই। এজন্য ওই এলাকার কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি জমির জন্য। জমি পেলেই পাম্পটি বসানোর কাজ শুরু হবে।
জমির বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ঢালী বলেন, নতুন পাম্প বসানোর কাজ যদি আজ থেকেও শুরু হয়, তাহলেও সেটি থেকে পানি সরবরাহ করতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে। তার আগে বর্তমান পানির এই সমস্যা তো সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমি ভাটারার চিতাখোলায় এলাকাবাসীর পানি সমস্যা সমাধানে নতুন পাম্প বসানোর জন্য দেড় কাঠা জমির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। রাস্তার কিছু কাজ বাকি আছে। সেটি হয়ে গেলেই ওয়াসা পাম্প বসানোর কাজ শুরু করতে পারবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন