শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

সড়কে নিরাপত্তা বিধানে কঠোর হতে হবে

আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

প্রশ্নটি সহজ হলেও উত্তরটা কঠিন- কারণ এ নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই লেখালেখি হচ্ছে। আইন কানুন পরিবর্তন করা হচ্ছে শাস্তির কথা বলা হচ্ছে, নানা রকম হুঁশিয়ারী দেয়া হচ্ছে কিন্তু সড়কে মৃত্যুহার আর কমছে না, বরং বেড়েই চলেছে প্রতিনিয়ত। নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠছে এক শ্রেণির পরিবহন চালক। তাদের বেপরোয়া আচরণ, যানবাহনের মাত্রাতিরিক্ত গতি ত্রæটিযুক্ত যানবাহন এবং পথচারিদের অসচেতনতাজনিত কারণে প্রতিদিন সড়কে ঝরছে প্রাণ, আর বিনষ্ট হচ্ছে সম্পদ। একের পর এক সড়কে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও এর প্রতিরোধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ-ই চোখে পড়ছে না। সড়কে অকাল মৃত্যুর কারণে একটি পরিবারের স্বপ্নও ঝরে পড়ছে।

গত ৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর তুরাগ ও মহাখালীতে বাস চাপায় প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী আপেল মাহমুদের ছোটভাই খ্যতনামা কণ্ঠশিল্পী ও সংগীত পরিচালক মো. পারভেজ রব এবং মহাখালীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ফারহানা আক্তারের অকাল মৃত্যুতে স্ব স্ব পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সড়ক দুর্ঘটনায় এ জাতীয় মৃত্যুতে জনমনেও তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিদিনই প্রাণহানির ও সম্পদ বিনষ্ট হলেও চালকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না। শাস্তি না হওয়া আইনের ফাঁক দিয়ে জামিনে থাকা বা খালাস পেয়ে যাওয়ায় চালকরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এ প্রসঙ্গে বলা যায়, অধিকাংশ চালকই লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা না থাকলেও তা পেয়ে যাচ্ছে, হালকা যানবাহনের লাইসেন্স নিয়ে ভারী যানবাহন চালাচ্ছে। গতিবেগের সীমা মেনে না চলা, ওভারটেক করা, কাজগপত্র বা চালকের অনিয়ম ইত্যাদি দেখার দায়িত্ব ট্রাফিক পুুলিশ ও বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের হলেও তারা তাদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করছেন না। দুর্ঘটনা ঘটে থাকলেও তারা যেকোনভাবেই ম্যানেজ হয়ে যাচ্ছেন- এতে চালকরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। ভাব দেখে মনে হয়, এসব দেখার যেন কেউ নেই।

প্রতিদিনই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে, নিহত ও আহত হচ্ছে নিরীহ মানুষ। ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে কোটি কোটি টাকার। এসব দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে দিনাতিপাত করছে অজস্ত্র মানুষ। তারা পরিবারের উপর বর্ধিত বোঝা হিসাবেই বিবেচিত হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে এ পর্যন্ত অনেক কথা হলো বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখালেখি হলো, এখনও হচ্ছে। বিভিন্নভাবে সহানুভূতি বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান, সংগঠন নানা প্রকার খেদোক্তি উৎকীর্ণ ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে মিছিল মিটিংও কম হয়নি, কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। এ পর্যন্ত কম অবরোধ হয়নি, কম গাড়ি ভাংচুর হয়নি। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা যেন পাল্লা দিয়েই বেড়ে চলেছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে যে দুর্ঘটনা স্বাভাবিক আর দুর্ঘটনা না ঘটা অস্বাভাবিক। তবে সংবাদ মাধ্যমের সাথে যাদের সামান্যতমও যোগাযোগ আছে তারা কিন্তু এগুলো সম্পর্কে ভালভাবেই ওয়াকেবহাল আছেন। তাই আমি তার পরিসংখ্যানগত তথ্য উল্লেখ না করে লিখার উদ্দেশ্যেই সমস্যা এবং কারণ নিয়েই কথা বলছি।

উল্লেখ্য দুর্ঘটনা নিয়ে পরিবেশিত খবরের মাধ্যমে আমরা এর খুঁটিনাটি অনেক কিছুই উপলব্ধি করেছি। কিন্তু যে কথাগুলো কম লেখাতেই উঠে এসেছে এবং যা বলা বা জানানো একান্তই প্রয়োজন তাহলো এসব দুঃখজনক ঘটনার মূল কোথায় প্রোথিত তা খুঁজে বের করা, সত্যিকার অর্থে সংঘটিত এসব দুর্ঘটনার জন্য কাকে বা কাদেরকে দায়ী করা উচিত তা নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করা? কাদের নৈতিকতা বিবর্জিত কর্মকান্ডে এবং দায়িত্ব পালনে চরম উদাসীনতার কারণে এমন সব ঘটনাগুলো ঘটার অবকাশ সৃষ্টি হয়? অর্থাৎ এ সমস্ত ঘটনার জন্য আমরা শেষাবধি কাদেরকে নির্দিষ্টভাবে দায়ী করতে পারি? এ সবই ভাবনার বিষয় দুর্ঘটনা আসলে অপরিণামদর্শী কর্মের কম প্রক্রিয়ার প্রারম্ভিকতা থেকে চূড়ান্ত পর্যায়ে একটি শেষ পরিণতি। সুতরাং বলা যায়, যদি উক্ত নির্দিষ্ট কাজের আরম্ভটা সঠিকভাবে দক্ষতার সাথে দক্ষ জনশক্তির হাতে শুরু হয় তাহলে এরকম বিয়োগান্তক ঘটনার কাছে আমাদের অনুভূতিকে জিম্মি হতে হয় না। বাজারজাতকরণে একটি কথা আছে ‘বিক্রেতা যদি উত্তম বিক্রয়যোগ্য সামগ্রী কিনতে পারেন তাহলে সেটাকে অর্ধেক বিক্রী বলে ধরে নেয়া যায়’, তেমনি যদি যানবাহনে বা পরিবহনে চালক দক্ষ হয়, তাহলে গন্তব্যে পৌঁছার ব্যাপারেও অনেকটা নিশ্চিত হওয়া যায়। এখন ভাবনার বিষয় হলো এই যে, দক্ষ চালক এ লোকগুলোর দক্ষতার পরীক্ষা-নিরীক্ষা কারা করে থাকেন? কে বা কারা একটি আনাড়ি চালককে রাস্তার উপর অনুমতি পত্র দিয়ে এসব জীবন সংহারী জল্লাদের হাতে স্টিয়ারিং রূপী খঞ্জর তুলে দেন? পরিবহন চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করার জন্য প্রত্যেক দেশেই একটি কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব পালন করে থাকেন, এভাবে আমাদের দেশেও এ সমস্ত লাইনেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ সক্রিয় আছেন। এ কর্তৃপক্ষের কাজ হলো একটি লোক পরিবহন চালনা সংক্রান্ত যাবতীয় খুঁটিনাটি থেকে আরম্ভ করে এতদসম্পর্কিত সব রকম পারদর্শিতা নিশ্চিত হয়ে তার নামে একটি লাইসেন্স ইস্যু করা। কিন্তু আমাদের এখানে যা ঘটছে তা হলো কোনভাবে স্টিয়ারিং ধরতে পারলেই হলো, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ এটুকুও জানে না যে, যাকে লাইসেন্স দেয়া হলো বা হবে সে আদৌ ড্রাইভিং জানে কিনা? আর নকল ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়তো ইদানীং বেশ তোড় জোড় শুরু হয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে বলা যায়, রাস্তায় এত সব আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়মিতভাবে থাকার পরও কীভাবে এরা নকল ড্রাইভিং লাইসেন্স ধারণ করে ঠিকে থাকতে পারে? ড্রাইভিং লাইসেন্স দু’ নম্বও তা কি কর্তৃপক্ষ জানে না? এসব ইস্যু করে কারা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা তদন্তই বা কে করে? তাই আমাদের প্রশ্ন, গোড়ায় গলদ রেখে পরিবহন দুর্ঘটনা কমানোর উদ্ভট চিন্তা করাটা কি হবুচন্দ্র রাজার আদেশের মতো নয়? দেশে একবার আইন করা হলো, সড়ক দুর্ঘটনায় কোনো লোকের মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট পরিবহন চালকের সুষ্ঠু বিচার হবে, শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকদের আন্দোলনের ধাক্কায় শেষ অবধি সরকারকেই চুপসে যেতে হলে। আবার করা হলো যাবজ্জীবন তাও কারাদন্ড তথৈবচ। মাত্র ক’দিন বা ক’মাসে সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য বা হতাহতের ঘটনার বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন না করে আমি মূল বিষয়ের দিকে যথাযথ কর্তৃপক্ষ ও পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এখন ভাবনার সময় এসেছে, পরিবহন চালক হিসেবে যাকে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ লাইসেন্স প্রদান করলেন, তারা কি জেনেশুনে দক্ষতা যাচাই করে লোকটির ড্রাইভার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন? তাও তো খতিয়ে দেখা দরকার, কেননা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংগঠিত দুর্ঘটনায় দেখা যায় চালকের অদক্ষতাই এর জন্য দায়ী। কর্তৃপক্ষ যদি এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করেন দুর্ঘটনা কমে যাওয়া একেবারেই স্বাভাবিক। রাস্তায় গাড়ি চললে দুর্ঘটনাতো ঘটবেই। কিন্তু আমাদের দেশে যে হারে এর বিস্তৃতি ঘটছে, তাতে গোড়ায় হাত না দিলে পরিণতি আরো ভয়াবহ হতে বাধ্য।

সড়ক দুর্ঘটনার ব্যাপারে আরো একটি বিষয় বিবেচনার দাবিদার, তা হলো পরিবহন বা যানবাহনের ত্রুটিমুক্ততা। কেননা, যানবাহনের বিভিন্ন অংশ ও ইঞ্জিনে গঠিত ত্রুটির কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এ দিকটা দেখার জন্যও একটি কর্তৃপক্ষীয় ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু এখানেও সে পূর্বোল্লেখিত কায়কারবারই পুরোপুরি সক্রিয়; যাদেরকে এ সমস্ত দেখার দায়িত্ব সরকারিভাবে দেয়া হয়েছে তারা বোধ করি, হাতের মুঠোয় কত টাকা গুঁজে দেয়া হলো সেটাই ভালো করে দেখেন। জনস্বার্থে, মানুষের জীবন রক্ষার্থে সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে ত্রুটি বিচ্যুতি দেখার বা কাগজপত্র দেখার সময় তাদের নেই। যারা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করে থাকেন তাদের পরিচালনা দেখলে মনে হয়, এ বিভাগে যেন একটা প্যারালাল সরকার কাজ করছে? সম্পূর্ণ অবস্থা পর্যালোচনা করে বলা যায় পরিবহন বা যানবাহন সংক্রান্ত এ সব কর্তৃপক্ষ যার যার কাজে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন না। তাদের ইচ্ছাকৃত অবহেলার কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আনাড়ী অদক্ষ লোক ড্রাইভার হয়ে দ্বিধাহীন জল্লাদরূপে রাস্তায় নেমে আসে। আর এতেই সড়ক দুর্ঘটনার ঘন ঘন খবরে আমরা প্রতিনিয়ত শংকিত হয়ে পড়ি। রাস্তা বা যানবাহনের নিচে লাশের স্তূপ দেখে স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়।

এখন ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে আমাদের দাবি, ড্রাইভারদের শাস্তির বিধান রচনা করার সাথেসাথেই এ রকম অদক্ষ এবং আনাড়ী ড্রাইভার সৃষ্টিকারী ও ত্রুটিমুক্ততা তদারককারীদেরও দৃণ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। ইদানীং যে হারে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে এবং প্রাণহানি হচ্ছে তাতে সড়ক দুর্ঘটনার বিপক্ষে মোটামোটি জোরালো আন্দোলনের সূচনা করেছে। তাইতো সাধারণ মানুষ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে নিরীহ যাত্রী বা পথচারী নিহত হলে অবরোধ করে, আন্দোলন করে, ভাংচুর করে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ার কারণেই মানুষ বাধ্য হয়ে আইনকে হাতে তুলে নেয়।

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, সকলের মুখেই চালকের মৃত্যুদন্ডের শাস্তির কথা বার বার উচ্চারিত হয়েছে। কিন্তু এ চালক সৃষ্টির হোতাদের শাস্তির কথা তেমন শোনা যায়নি। তবে চিত্রনায়ক ইলিয়াছ কাঞ্চনের স্ত্রী বিয়োগের পর তার ‘নিারপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের সাংবাদিক সম্মেলনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি তিনি আলোকপাত করেছেন, তা হচ্ছে- সড়ক দুর্ঘটনার মৌলিক কারণগুলো চিহ্নিত করার কথা তার বক্তব্যে উঠে এসেছে, যার সাথে আমরাও পুরোপুরি একমত। কারণ সমস্যা সৃষ্টির মৌলিক দিকগুলো খুঁজে বের করলে সমস্যা সৃষ্টির পূর্বেই এটা যেমন বাধাপ্রাপ্ত হয়, তেমনি দুর্ঘটনার উৎস স্থল চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এটাকেও রুখে দেয়া সম্ভব। এখানে কর্তৃপক্ষীয় সদিচ্ছা এবং প্রয়োজনে বিভিন্ন প্রকার অনিয়ম সংগঠনকারীদের শাস্তির বিধান করাও একান্ত জরুরি।

এর অর্থ এই নয় যে, চালকদের একেবারে এমনিই ছেড়ে দেয়া হলো। দুর্ঘটনা ঘটার পর তদন্ত সাপেক্ষে চালকতো শাস্তি পাবেই, তবে সেটা নির্ভর করবে দুর্ঘটনার অনুকূলে চালকের ভূমিকা পর্যালোচনার উপর। আর ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে যারা সদর্পে গাড়ি চালাচ্ছেন তাদের প্রসঙ্গে বলা যায়, দেশে যানবাহন বা এতদ সম্পর্কিত একটি ট্রাফিক নীতি আইনের পুস্তকে লিপিবদ্ধ থাকলেও এর সঠিক প্রয়োগ বা অনুশীলন আছে বলে মনে হয় না। কারণ ভুয়া, নকল বা জাল লাইসেন্স সম্পর্কে যে সমস্ত ট্রাফিক কর্মকর্তা বা কর্মচারী তথ্য উদঘাটন বা তদন্ত করেন, অসততার জন্যেও এ কাজটি তারা ভালোভাবে করছেন না। সুতরাং শেষ কথা হলো, এ সমস্যার কার্যকর প্রতিকারের জন্য সমস্যা সৃষ্টির উৎস মূলেই উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ সমস্যার অংকুর বিনাশী কর্ম প্রক্রিয়ায় সৎ ও কর্মনিষ্ঠ জনশক্তি নিযুক্ত করতে হবে এবং যথারীতি এদের কাজের মূল্যায়ন এবং চাকরির কাঠামোগত উৎসাহ প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন