শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

বৃষ্টিতে রাজধানীবাসীর ভোগান্তি

স্টাফ রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

বর্ষা মৌসুম চলে যাওয়ার এক মাস পরেও রাজধানীতে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। লঘুচাপের প্রভাবে অসময়ে এ বৃষ্টি হচ্ছে বলে জানা গেছে। এতে রাজধানীর নিম্নাঞ্চলসহ ছোট-বড় সড়কগুলোতে দেখা দিয়েছে পানিবদ্ধতা। গতকাল দুপুরে এক ঘণ্টার ঝুম বৃষ্টিতে বিভিন্ন সড়কে পানি জমা ছাড়াও কোনো কোনো সড়ক ও পাড়া-মহল্লার অলি-গলিতে কাদা-পানি মিলে একাকার হয়ে গেছে। এতে পথচারিদেরকে পড়তে হয়েছে বাড়তি ভোগান্তিতে। সরকারি ছুটির দিন হলেও নানা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়ে নগরবাসীকে পড়তে হয়েছে চরম দুর্ভোগে। কোথায়ও যানজট আবার কোথায়ও যানবাহনের সঙ্কট। যে কারণে মানুষকে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই গন্তেব্যে যেতে হয়েছে।


ভুক্তভোগীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার কাজ হচ্ছে না। আবার কোনো কোনো এলাকায় পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থাও নেই। যে কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই রাজধানীর প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি সর্বত্রই পানিতে ডুবে যায়। ডিএনডি বাঁধ এলাকায় একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটু পানি জমে যায়। এতে বৃষ্টির পানি জমে থাকে দিনের পর দিন। হাঁটু পানিতেই চলাচল করতে হয় ওই এলাকার মানুষকে। পুরান ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা সবচেয়ে অপ্রতুল। হালকা বৃষ্টি হলেই ড্রেন ভরে রাস্তায় জমে যায় পানি। ফলে দুর্গন্ধযুক্ত ও পচা পানিতেই চলতে হয়ে পুরান ঢাকাবাসীকে। একই অবস্থা রাজধানীর অন্যান্য এলাকারও। এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে নগরীর বিভিন্ন স্থানে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির জন্যও খানা-খন্দকের সৃষ্টি হয়ে পানি জমে যায়। রাস্তার এসব গর্তে যানবাহন পড়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।
গতকাল শুক্রবার বিকালে সরেজমি দেখা গেছে, খোদ বঙ্গভবনের সামনের রাস্তাটি যেন একটি ছোটখাট নদী। আর এ নদীতে উত্থাল পাত্থাল ঢেউ খেলছে পানি। এসময় বেশ কয়েকটি সিএনজি চালিত অটোরিকশায় পানি ঢুকে বিকল হয়ে যেতে দেখা গেছে। এছাড়াও মতিঝিলের আশপাশের বিভিন্ন সড়কে দেখা গেছে, সরকারি ছুটির কারণে সড়কে তেমন কোনও যানবাহন ছিল না। ফাঁকা রাস্তায় রিকশা, লেগুনা, ব্যক্তিগত গাড়ি ও কিছু গণপরিবহন ছিল। এসব পরিবহনেও যাত্রীদের উপস্থিতি কম ছিল। একটি প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকা নাজমা আক্তার বলেন, বৃষ্টি হলেও ভালোই লাগছে। কারণ রাস্তায় যানজট নেই। রিকশায় করে ফাঁকা রাস্তায় গন্তব্যে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগবে না। যখন বৃষ্টির সঙ্গে পানিজট এবং যানজট দেখা দেয় তখনই ভোগান্তি মনে হয়।
দুপুরের পর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির মধ্যে ফাঁকা রাস্তায় দ্রুতগতিতে গাড়ি চলাচল করছে। কোথাও তেমন কোনও ট্রাফিক সিগন্যালের কবলে পড়তে হচ্ছে না যানবাহনগুলোকে। মিরপুর থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের একটি মানববন্ধনে যোগ দিতে এসেছেন রাজিব হোসেন। তিনি বলেন, মনে করেছিলাম বৃষ্টির কারণে একটু জ্যাম হবে। তাই কিছু সময় হাতে রেখেই বাসা থেকে বের হয়েছি। কিন্তু মাত্র ২৫ মিনিটেই মিরপুর ১২ নম্বর থেকে প্রেসক্লাবে চলে এসেছি। বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি চলছে, ভালোই লেগেছে।
ওয়াসা সূত্র জানায়, ঢাকা শহরে এক ঘণ্টা বৃষ্টি হলে সে পানি নামতে সময় লাগে ২৪ ঘণ্টারও বেশি। গতকালের বৃষ্টিতে আভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরাসহ মগবাজার, শান্তিনগর, বাসাবো, যাত্রাবাড়ি, সূত্রাপুর, রামপুরা, মুগদাপাড়া, মানিকনগর, মতিঝিল, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোড, জয়নাগ রোড, ওয়ারী, ল²ীবাজার, রায়সাহেব বাজার, লালবাগ এলাকার নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে পানি থৈ থৈ করতে দেখা গেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন অঞ্চল-২ অফিসের সামনের খিলগাঁও তিলপাপাড়া সড়কটি বৃষ্টিতে কাদা পানিতে একাকার হয়ে গেছে। একই অবস্থা রাজধানীর ফরিকরাপুল, আরামবাগ, রাজারবাগ, যাত্রাবাড়ি, সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, শান্তিনগর, মৌচাক, মালিবাগ, মগবাজার, আগারগাঁও, মিরপুর, গুলশানসহ পুরো নগরী। এসব এলাকায় ওয়াসার ড্রেনেজ ব্যবস্থা অনেকটা অকার্যকর। যে কারণে বৃষ্টির পানি জমে থাকলেও তড়িৎ গতিতে সরে যাওয়ার কোনো পথ নেই। তাই দিনের পর দিন হাঁটু পানিতেই চলাচল করতে হয় ওই এলাকার মানুষকে।
কাকরাইল-শান্তিনগর এলাকায় বৃষ্টিতে সড়কে যানবাহন আটকে পড়ে। হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায় সড়ক। পানিবদ্ধাতায় অনেকগুলো সিএনজিচালিত অটোরিকশা রাস্তায় বিকল হয়ে পড়ে। অটোরিকশা পরিবর্তন করে অনেককে গন্তব্যে যেতে হয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় মানুষকে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে।
অল্প বৃষ্টিতে মগবাজার, মৌচাক হয়ে মালিবাগ রেলগেট, রামপুরা ব্রিজ, মেরুল বাড্ডা, মধ্যবাড্ডা এলাকায় হাঁটুপানি জমে যায়। জমে যাওয়া পানির কারণে অটোরিকশা ও অন্য যানবাহন রাস্তায় আটকে পড়ে। মধ্য বাড্ডায় রাস্তার ওপর ময়লার ভাগাড় পানিতে মিশে একাকার হয়ে সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেয়।
ঢাকায় দীর্ঘদিন ধরে অল্প বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হলেও সিটি কর্পোরেশন দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয় না বলে অভিযোগ করেন দুর্ভোগে পড়া যাত্রীরা। নর্দ্দা, কালাচাঁদপুর থেকে বারিধারা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কে অল্প বৃষ্টিতেই হাঁটু পরিমাণ পানি জমে যায়। এতে যানবাহন আটকে পড়ে। দুর্ভোগে পড়ে অফিসগামী যাত্রীরা। ফলে গতকাল শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন দিন মানুষকে নানা প্রয়োজনে রিকশায় বাড়তি ভাড়া দিয়েই যাতায়াত করতে দেখা গেছে। তবে সামান্য বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতার জন্য সিটি কর্পোরেশনের অবহেলাকে দায়ী করেন যাত্রীরা।
বৃষ্টিতে উত্তরার জসিম উদ্দিন রোড, এয়ারপোর্ট সড়ক, মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে, আইসিসিডিডিআরবি থেকে মহাখালী বাসস্টান্ড পর্যন্ত পানি জমে যায়। পানির সাথে রাস্তায় পড়ে থাকা ময়লা-আর্বজনা মিলে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। বৃষ্টির কারণে কোথাও কোথাও তীব্র যানজট, কোথাও গাড়ি না থাকায় যাত্রীদের ময়লা পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে চলাচল করতে দেখা যায়।
অধিকাংশ স্থানে ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা ও গর্ত থাকায় যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। অনেক জায়গায় যাত্রীদের সড়কে পড়ে ভিজে যেতে দেখা গেছে। তবে সিটি কর্পোরেশনকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। এছাড়া রাজধানীর অন্যান্য এলাকায়ও সামান্য বৃষ্টিতে সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়, সৃষ্টি হয় সেই চিরাচরিত দুর্ভোগ। তাৎক্ষণিকভাবে পানি নেমে না যাওয়ায় সৃষ্টি হয় পানিবদ্ধতা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, গতকাল দুপুরে রাজধানীতে হঠাৎ একপশলা বৃষ্টি হয়েছে। পরিমাণে বৃষ্টি কম হওয়ায় পানি সহজেই নেমে যাতে পারছে। কোথাও পানিজটের খবর আমরা পাইনি। তবে আমাদের পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও পরিদর্শকরা মাঠেই আছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন