বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

রাজনীতিকদের সন্তানদের রাজনীতি

মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক | প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

শুধু নাম বা শুধু বংশই কোনো একজন মানুষের বা কোনো একটি পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। এর জন্য চেষ্টা লাগে, মেধা লাগে, বহু সময়ে আর্থিক সঙ্গতি লাগে, তার জন্য সহায়ক পরিবেশ লাগে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে দয়া লাগে। সমাজের অনেক সেক্টর বা অঙ্গ থেকে অনেক উদাহরণ দিতে পারতাম, কিন্তু কলামের কলেবর সীমিত রাখার জন্য, প্রতীকী অর্থেই উদাহরণস্বরূপ মাত্র দু’টি নাম নিচ্ছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বকালে, ভিন্ন ভিন্ন সময়ে, পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের একজন স্বনামধন্য বিচারপতি ছিলেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী এবং বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের অন্যতম স্বনামধন্য আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমেদ। বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী হাইকোর্টের বিচারপতির অতিরিক্ত হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্বও পালন করছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে। একাত্তরের মার্চ মাসের মাঝামাঝি তিনি একটি কনফারেন্সে গিয়েছিলেন লন্ডনে। মার্চ মাসের বিভিন্ন তারিখে যখন পুলিশবাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর গুলি চালায়, তখন তার প্রতিবাদে তিনি লন্ডনে থাকা অবস্থাতেই ভাইস চ্যান্সেলরের পদ ত্যাগ করেন; মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি আর লন্ডন থেকে ফেরত আসেননি; বাংলাদেশের বাইরে বিশেষত ইংল্যান্ড ও ইউরোপে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত ও রাষ্ট্রীয় সমর্থন গড়ে তোলার জন্য বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন; স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি ১৯৭২-৭৩ সালে রাষ্ট্রপতিও হয়েছিলেন। বিচারপতি আবু সাঈদের অন্যতম সন্তান আবুল হাসান চৌধুরী কায়সার, স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৯৬-২০০১ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। দ্বিতীয় নাম, অর্থাৎ বর্তমানে মরহুম ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমেদ, তার কর্মজীবনে আইনের জগতে সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তি এবং সংগ্রামী ছিলেন। তারই সুযোগ্য সন্তান হলেন বর্তমানে হাইকোর্টের বিচারপতি রিফাত আহমেদ। পাকিস্তান বা বাংলাদেশে সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্টের বিচারপতিদের সন্তানও বিচারপতি হয়েছেন তথা বাপের নাম রেখেছেন এমন ভালো উদাহরণ অনেক আছে।

১৯৪৭ সালের আগে ব্রিটিশ ভারতে, ১৯৪৭ সালের পরে পাকিস্তানে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পাঁচ বছর রাজনীতির আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন মরহুম মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। মওলানা ভাসানীর পুত্রসন্তানেরা শ্রদ্ধেয় ও সুপরিচিত, কিন্তু বিখ্যাত হওয়ার মতো কোনো বড় অর্জন তাদের নেই। ব্রিটিশ-ভারতের সর্বশেষ দশকে, তৎকালীন বঙ্গ প্রদেশের অন্যতম প্রধানমন্ত্রী (তথা মুখ্যমন্ত্রী) ও ১৯৪০ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তান প্রস্তাবের উপস্থাপক ছিলেন আবুল কাশেম ফজলুল হক; যিনি শেরেবাংলা নামেই বেশি পরিচিত। স্বাধীন পাকিস্তানে (পূর্ব পাকিস্তানের জন্য), দায়িত্ব পালনকালেই তিনি কোটি কোটি কৃষকের উপকার করেছিলেন দু’টি আইনের অনুঘটক হয়ে। যথা- ঋণ সালিসি বোর্ড গঠনের আইন এবং জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত করার আইন। শেরেবাংলার পুত্র সম্মানিত ও সুপরিচিত হলেও পিতার সুনামের পরিধির কাছাকাছি নেই। ১৯৪৭ সালের আগেকার ব্রিটিশ-ভারতের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পুত্র রাশেদ সোহরাওয়ার্দী বিদেশে অভিনেতা হয়েছেন, রাজনীতি থেকে বহু দূরে। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা (পাকিস্তানিদের ভাষায় ‘কায়েদে আযম’) মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর কন্যা দীনা ওয়াদিয়া আমেরিকায় সাধারণ নাগরিক হিসেবে প্রবাসী ছিলেন। ব্রিটিশ-ভারতের অন্যতম রাজনীতিবিদ ও বর্তমান ‘ভারতের জনক’ বলে পরিচিত মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী; ভারতে তিনি ‘মহাত্মা গান্ধী’ নামেই বেশি পরিচিত। মহাত্মা গান্ধীর পুত্র ‘হরিলাল গান্ধী’ প্রখ্যাত ছিলেন না।

ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে লাগাতার ১৭ বছরের প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরলাল নেহরুর কন্যা ছিলেন ইন্দিরা। ওই কন্যা তার পিতার পরিচয়ে বেশি পরিচিত হলেও নাম নিয়েছেন (পারসি ধর্মাবলম্বী) স্বামী ফিরোজ গান্ধী থেকে: ‘ইন্দিরা নেহরু গান্ধী’। নামটিকে সংক্ষিপ্ত করে তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত হয়েছেন ‘ইন্দিরা গান্ধী’ নামে। একাধিক মেয়াদে প্রধানমন্ত্রিত্বের ও অর্জনের মাধ্যমে তিনি বাপের নাম রেখেছেন। যে কাশ্মির নিয়ে বর্তমানে দক্ষিণ-এশিয়ার আন্তঃদেশীয় রাজনীতি বিশেষত ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক উত্তপ্ত, সে কাশ্মিরের রাজনীতিতে একজন বাবা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং ছেলেও মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন এবং তার নাতিও মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, যথাক্রমে মোহাম্মদ শেখ আবদুল্লাহ, ফারুক আবদুল্লাহ এবং ওমর আবদুল্লাহ। একই কাশ্মিরে আরেকজন বাবা (মুফতি মোহাম্মদ সাইদ) মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন এবং তার মেয়েও (মেহবুবা মুফতি) মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। শ্রীলঙ্কা নামক দক্ষিণ এশিয়ার বিখ্যাত দেশটির সাবেক নাম ‘সিলোন’। সেই সিলোন বা শ্রীলঙ্কার বন্দরনায়েক বংশের তিন ব্যক্তি যারা প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, তাদের নাম ও পরিচয় বলছি। চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এস ডবিøউ আর ডি বন্দরনায়েক। তারই স্ত্রী ছিলেন সপ্তম, নবম এবং পনেরোতম প্রধানমন্ত্রী অর্থাৎ তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমাভো বন্দরনায়েক। এই দম্পতির কন্যা চন্দ্রিকা বন্দরনায়েক কুমারাতুঙ্গা ছিলেন চৌদ্দতম প্রধানমন্ত্রী। উল্লেখ্য, চন্দ্রিকা শ্রীলঙ্কার পঞ্চম প্রেসিডেন্টও হয়েছিলেন।

বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার তিন-চার বছর পর, ১৯৭৮ সালে যখন আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত হয়, তখন ৩ থেকে ৫ মার্চ ১৯৭৮ সালে জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আবদুল মালেক উকিল ও আবদুর রাজ্জাক। ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি হওয়া নিয়ে অনাকাক্সিক্ষত প্রতিদ্ব›িদ্বতা ও সঙ্কট দেখা দিলে ড. কামাল হোসেনের বিশেষ ভূমিকায় তথা তার প্রস্তাব ও চেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতেই ভারতে প্রবাস জীবনযাপনরত বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা ওয়াজেদকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। অতঃপর শেখ হাসিনা দেশে ফেরেন। সেই থেকে হাসিনা আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনগুলোর মাধ্যমে বারবার নির্বাচিত সভাপতি। কিন্তু উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগে ড. কামাল হোসেনের রাজনীতি বেশি দিন টেকেনি। শেখ হাসিনা ওয়াজেদ জন্মসূত্রে বা বংশীয় উপাধি ‘শেখ’ উপাধি বা শব্দ নিজের নামের শুরুতে রেখেছেন এবং নিজের নামকে সংক্ষিপ্ত করেছেন ‘শেখ হাসিনা’ বলে। তিনি শুধু বঙ্গবন্ধুর কন্যার পরিচয়ে প্রখ্যাত নন, তিনি নিজের কর্ম ও অর্জনের ভিত্তিতেই সমসাময়িক বিশ্বে পরিচিত ও প্রখ্যাত। তার পুত্র বা কন্যাসন্তান কেউই রাজনীতিতে মা অথবা নানার কাছাকাছি নেই।

আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার তিন বছর পর, তার দলের হাল ধরেন তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার পিতার উল্লেখযোগ্য কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তিনি স্বামীর পরিচয়ের আনুকূল্য পেয়েছেন দলের চেয়ারম্যান হওয়ার আগ পর্যন্ত। তারপর যা কিছু অর্জন ১৯৯০, ১৯৯৬, ২০০১ সেটা তার নিজগুণে, নিজ প্রজ্ঞায়, ধারাবাহিকভাবে অর্জিত নিজ অভিজ্ঞতার আলোকেই এবং তার ক্ষেত্রে স্বামীর পরিচয়টি সম্পূরক। একজন প্রেসিডেন্ট (জিয়াউর রহমান) ও একজন প্রধানমন্ত্রী (খালেদা জিয়া) দম্পতির জ্যেষ্ঠ পুত্র তথা বর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হচ্ছেন তারেক রহমান। রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনার সময় অনেকবারই একটি বিষয় কথার মধ্যে আসে বা নিতান্তই একাডেমিক আলোচনায় আসে যে, জনাব তারেক যদি ‘তারেক রহমান’ না হয়ে ‘তারেক জিয়া’ হতেন, তাহলে রাজনীতিতে তার প্রভাব কি বেশি হতো, না কম হতো? আলোচকদের কেউ বলেন, ‘তারেক জিয়া’ নামের মধ্যে যেহেতু ‘জিয়া’ শব্দটি আছে, সেহেতু সম্ভাবনা ছিল বা আছে যে, ‘তারেক জিয়া’ নামের কারিশমা অনেক বেশি। এর কারণ আছে। বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে ‘জিয়া’ নামটি যেকোনো অবস্থাতেই বৈদ্যুতিক শকের মতো স্পন্দন চালু করে। বলাই বাহুল্য, রাজনীতিতে কারিশমা অনেক সময় না চাইলেও আসে, অনেক সময় কষ্ট করে অর্জন বা সৃষ্টি করতে হয়, আবার অনেক সময় আপ্রাণ চেষ্টা করলেও অর্জিত হয় না বা অনেক সময় পাওয়া কারিশমা ধরে রাখা সম্ভব হয় না।

বাপের নাম ছাড়া নিজের নামে কি প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায় না? উত্তর হবে, অবশ্যই যায় এবং বেশির ভাগ তথা শতকরা হিসাবে চার ভাগের তিন ভাগেরও বেশি ক্ষেত্রে, প্রখ্যাত সমাজ সংস্কারক বা সফল রাজনীতিবিদ বা প্রখ্যাত রাষ্ট্রনায়কেরা অবশ্যই নিজ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, বাবার পরিচয়-আনুকূল্য ছাড়া। ১৮৩০, ১৮৪০, ১৮৫০-এর দশকে জনৈক আব্রাহাম লিংকন সঙ্কল্প করেছিলেন রাজনীতি করবেন এবং উচ্চপদে যাবেন এবং সেই লক্ষ্য অর্জনের নিমিত্তে অভিজ্ঞতার বা প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন দায়িত্বে নির্বাচনের জন্য অংশ নিতেন; কিন্তু প্রায়ই ফেল করতেন। অনেকবার ফেল করার পরও তিনি সঙ্কল্পচ্যুত হননি। চূড়ান্ত পর্যায়ে আমেরিকার ষোলোতম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন (১৮৬১ খ্রিস্টাব্দ)। আব্রাহাম লিংকন, আমেরিকার সব প্রেসিডেন্টের মধ্যে, দেশটির স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের পরই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। আব্রাহাম লিংকনের পিতা কোনো বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন না। ইমরান খান ক্রিকেট খেলতেন; স্বপ্ন দেখেছিলেন ক্রিকেট ক্যাপ্টেন হবেন এবং তা হয়েও ছাড়লেন। শুধু ক্যাপ্টেন হলেন না, বরং তার অধিনায়কত্বেই পাকিস্তান প্রথমবারের মতো ক্রিকেট বিশ্বকাপ জেতে। তিনি স্বপ্ন দেখলেন রাজনীতি করবেন; অতএব দল গঠন করলেন এবং সহায়ক পরিবেশের আনুকূল্যে, দল করার ২২ বছরের মাথায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। ইমরান খানের পিতাও কোনো বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন না। পাকিস্তানের অন্যতম প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর কন্যা বেনজির ভুট্টো প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু বেনজিরের পুত্র বিলাওয়াল ভুট্টো প্রধানমন্ত্রী হওয়া থেকে এখনো অনেক দূরে, হবেন কি না সন্দেহ। অত্যন্ত অপরিচিত পারিবারিক পরিচয় থেকে এসেছেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জগদ্বিখ্যাত রাষ্ট্রনায়ক, মালয়েশিয়ার ২০ বছরের প্রধানমন্ত্রী ও আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি মাহাথির মোহাম্মদের পিতা কোনো বিখ্যাত রাজনীতিবিদ ছিলেন না। সারমর্মে বলা যায়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উদাহরণ ইতোমধ্যেই সৃষ্টি হয়েছে, বাংলাদেশেও সৃষ্টি হতে পারে যে, পারিবারিক রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে থেকে রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বে আসাই বেশি স্বাভাবিক। শুধু প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর কাহিনী বাদ দিই। গত ছেচল্লিশ বছরে (অর্থাৎ ১৯৭৩ সালের মার্চ মাসের প্রথম সংসদ নির্বাচনের পর থেকে) যত ব্যক্তি বাংলাদেশে মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েছেন, তাদের মধ্যে শতকরা পঁচানব্বই ভাগেরই পারিবারিক রাজনৈতিক অতীত পরিচয় নেই; কেবিনেটের ওইসব সদস্য নিজেদের রাজনৈতিক মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়েই সোজা রাস্তায় বা বাইপাস সড়কে অগ্রসর হয়ে, দলীয় প্রধানের আনুকূল্য অর্জন করে, কেবিনেটে নিজের জন্য স্থান সৃষ্টি করেছেন।

বাংলাদেশ রাজনৈতিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে সময় কাটাচ্ছে। তবে ওই সঙ্কটের মূল বিষয়টি নয়, একটি পার্শ্ব-বিষয়ের আলাপ করছি। মেহেরবানি করে খেয়াল করুন, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি নামক বাংলাদেশের দু’টি প্রখ্যাত রাজনৈতিক দলের মধ্যে, রাজনৈতিক বয়সের ও জৈবিক বয়সের জ্যেষ্ঠতায় উভয় দলের, প্রথম চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ জন ক্রমান্বয়ে পৃষ্ঠার মাঝখান থেকে মার্জিনে চলে যাচ্ছেন। দু’টি দলের মধ্যে একটি সূ² তফাৎ আছে। আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠরা যাচ্ছেন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত দলের উজ্জ্বল আলোর নিচ থেকে কম আলোকিত মার্জিনে; বিএনপির জ্যেষ্ঠরা যাচ্ছেন ক্ষমতার বাইরে উজ্জ্বল আলোবিহীন মঞ্চের সিঁড়ি থেকে অনিশ্চিত সময়ে। জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান নেতৃত্ব এখনো রাজনৈতিক মঞ্চে উজ্জ্বল আলোর নিচে আসেননি। এরশাদের জাতীয় পার্টি নামক দলটির উচ্চ নেতৃত্ব বা হাইকমান্ড উজ্জ্বল আলোর নিচে মঞ্চের কেন্দ্রস্থলে না থাকলেও ক্ষমতার মঞ্চের মার্জিনে যেমন ছিলেন, তেমন এখনো আছেন। লক্ষ করার বিষয় হচ্ছে, একটি রাজনৈতিক প্রজন্ম ক্রমেই রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে ধীরে ধীরে পর্দার অন্তরালে চলে যাচ্ছে। দলের বা দলের নেতাদের নাম ধরে ধরে, ১৪ দলীয় জোট ও ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর কথা, সঙ্গত কারণেই আলোচনা করছি না। তবে বলতে বাধা নেই, রাজনীতির প্রবাহ যেরূপ হচ্ছে, আগামী দিনে একক ব্যক্তি বা ব্যক্তিত্বের মাঝে কেন্দ্রীয় নেতা পাওয়া মুশকিল হবে। অতএব, বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বে নতুন মুখের আগমন অবশ্যম্ভাবী। ফলে, এখন অপেক্ষায় থাকাই শ্রেয় রাজনৈতিক কৌশল।
লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন