দিনাজপুর হাবিপ্রবির ৪ ছাত্র ও দিনাজপুর সরকারি মহিলা কলেজের এক ছাত্রীসহ ৫ শিক্ষার্থী নবাবগঞ্জে জাতীয় উদ্যান আশুড়ার বিলে ঘুরতে যায়। বিলের মাঝখানে গিয়ে হঠাৎ নৌকাটি ডুবে একছাত্রীসহ ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন স্থানে আরো ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে মানিকগঞ্জে ২ বরিশাল, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও পাবনায় একজন করে।
দিনাজপুর : দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার জাতীয় উদ্যান আশুড়ার বিলে ঘুরতে গিয়ে নৌকাডুবিতে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এসময় ওই নৌকাতে থাকা অপর ২ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে নবাবগঞ্জে জাতীয় উদ্যান আশুড়ার বিলে এ ঘটনা ঘটে। ওই সব শিক্ষার্থীদের বাড়ি দিনাজপুর শহর, কাহারোল উপজেলা ও ঠাকুরগাঁও জেলায় বলে জানা গেছে।
রাফিদ ইসলাম এবং সরকারী মহিলা কলেজের ছাত্রী ফারিয়া মৌ নিহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় হাবিপ্রবির ছাত্র মনোয়ার হোসেন এবং অন্তু মিয়াকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত কুমার সরকার এবং নবাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক খায়রুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ৪ ছাত্র ও দিনাজপুর সরকারি মহিলা কলেজের এক ছাত্রীসহ ৫ জন নবাবগঞ্জে জাতীয় উদ্যান আশুড়ার বিলে ঘুরতে যায়। তারা কাঠের তৈরি ব্রিজ ও শালবন ঘুরে দেখার পর নৌকায় উঠে বিল ঘুরে দেখছিলেন। বিলের মাঝখানে গিয়ে হঠাৎ নৌকাটি ডুবে যায়। সাঁতার না জানায় সবাই পানিতে তলিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয় লোকজন ও ঘুরতে যাওয়া অন্য পর্যটকরা দেখতে পেয়ে তাদের উদ্ধার করে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যায়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক একছাত্রীসহ ৩ শিক্ষার্থীকে মৃত ঘোষণা করেন।
মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জ পৌরসভার কান্দাপৌলী এলাকায় পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দুপুরে পৌর এলাকার কালীগঙ্গা নদীতে ডুবে তাদের মৃত্যু হয়। এরা হলো, কান্দাপৌলী এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে মাসুম (৩) ও আমিনুল ইসলাম বিল্টুর ছেলে আবু বক্কর ওরফে সিফাত (৪)। তারা সম্পের্ক আপন চাচাতো ভাই।
মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রাজ্জাক জানান, দুপুরে বাড়ির পাশের কালীগঙ্গা নদীর পাশে খেলতে যায় ওই দুই শিশু। খেলার কোনো এক সময় তারা নদীর পানিতে পড়ে ডুবে যায়। এক নারী গোসল করতো গিয়ে পানিতে তাদের মরদেহ ভাসতে দেখে। দ্রæত তাদের উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎকরা মৃত ঘোষণা করেন।
বরিশাল : বরিশালের উজিরপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাজার সংলগ্ন ডোবার মধ্য থেকে মো. অলি (৭) নামের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা ১১টায় ডোবার মধ্য থেকে তার লাশ উদ্ধার করে স্বজনরা। অলি পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের স্বপন হাওলাদারের ছেলে ও স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন প্লে গ্রæপে পড়ালেখা করতো।
অলির স্বজনরা জানান, কিন্ডার গার্টেন থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় অলি বাড়ি ফেরে। এরপর বাবা-মায়ের অগোচরে অলি বৃষ্টিতে ভিজতে বাড়ি থেকে বের হয়। অলিকে বাড়িতে না দেখে তার মা মুক্তি বেগম খুঁজতে বের হয়। কোথাও না পেয়ে বাড়ির পাশের ডোবাতে খুঁজতে থাকে মুক্তি বেগম। একপর্যায়ে হাতড়াতে গিয়ে ডোবার পানির মধ্যে অলিকে খুঁজে পায়। দ্রæত উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
উজিরপুর থানা পুলিশের ওসি শিশির কুমার পাল জানান, স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে পানিতে ডুবে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।
সিলেট : সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্রে বেড়াতে এসে পানিতে তলিয়ে মারা গেছেন ঢাকার হাফিজ বিন হারুনুর রশিদ (১৯)। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভোলাগঞ্জের ধলাই নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। হাফিজ বিন হারুনুর রশিদ ঢাকার কামরাঙ্গীচরের হারুনুর রশিদের ছেলে। তিনি ঢাকার মারকাজুল কোরআন মাদরাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, ঢাকার কামরাঙ্গীচর থেকে ১৪৪ জন শিক্ষার্থী বেড়াতে আসে সিলেটে। তাদের মধ্যে ছিলেন হাফিজও। শুক্রবার সকালে সিলেটে আসেন তারা। বিকেলে তারা সবাই মিলে ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্রে যান। সেখানে ধলাই নদীতে গোসল করতে নেমে ঢেউয়ের তোড়ে তলিয়ে যায় হাফিজ। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ওই সময় তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে গতকাল সকালে ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরি দল ধলাই নদীতে তল্লাশি চালিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে।
পাবনা : পাবনার চাটমোহরে লামিয়া (২) নামের এক শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলা বিলচলন ইউনিয়নের নটাবাড়িয়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। নিহত শিশু লামিয়া ঐ গ্রামের কৃষক মোতালেব হোসেনের মেয়ে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বিলচলন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী। স্থানীয়রা জানান, শিশু লামিয়া সবার অগোচরে বাড়ির বাইরে চলে যায়। এসময় বাড়ির পাশের একটি পুকুরে গিয়ে সে পড়ে যায়। তার কিছু সময় পরে পরিবারের সদস্যরা তার খোঁজ করতে থাকেন।
অনেক সময় তার সন্ধানের পরে পুকুর থেকে শিশুটির ভাসমান নিথর দেহ উদ্ধার করে স্বজনরা। স্থানীয় চিকিৎসকের নিকট নিয়ে গেলে বেশ কিছু সময় পূর্বেই শিশুটি মারা গেছে বলে চিকিৎসক জানিয়ে দেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন