মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ক্ষমতাসীনদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

উত্তরা ও শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে অভিযান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

গতকাল শাহজাহানপুর কলোনি এলাকায় অবৈধ স্থাপনার উচ্ছেদ অভিযান চালায় রেলওয়ে -ইনকিলাব


রাজধানীর শাহজাহানপুরে রেলওয়ে কলোনি ও উত্তরায় ফুটপাথ দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয়েছে। গতকাল রোববার দিনভর বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) পৃথকভাবে এ উচ্ছেদ অভিযান চালায়। অভিযানে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন তথা ছাত্রলীগ, যুবলীগ, রেলওয়ে শ্রমিক লীগ, রেলওয়ে বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগসহ প্রভাবশালীদের নামে বেনামে বিভিন্ন ক্লাব, বাজার, দোকান, কোচিং সেন্টারসহ পাকা-কাঁচা বিভিন্ন ধরণের হাজারখানিক অবৈধ স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, গতকাল সোমবার তৃতীয় মতো দিনের রেলওয়ে কলোনিতে এ অভিযান চলে। রেলওয়ের দু’টি টিম উচ্ছেদে অংশ নেয়। সকাল ১০টার দিকে অভিযান শুরু হয়ে দুপুরের পর পর্যন্ত চলে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে একটির পর একটি স্থাপনা ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। দখলকৃত জায়গায়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্লাব ছাড়াও ছাত্রলীগ, রেলওয়ে শ্রমিক লীগ, রেলওয়ে বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগসহ ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠনের নামে বেনামে বিভিন্ন ক্লাব, বাজার, দোকান, কোচিং সেন্টারসহ পাকা-কাঁচা বিভিন্ন ধরণের স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছিল। অভিযানের সময় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্লাব থেকে জুয়া খেলার টেবিল এবং কয়েক বান্ডিল তাস পাওয়া যায়।

অভিযান দেখতে হাজার মানুষ ভিড় করেন। তারা উচ্ছেদ অভিযানকে সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি উদ্ধার হওয়া এসব জায়গা দখলমুক্ত রাখতে নিয়মিত তদারকি করার দাবি জানান। অভিযান চলাকালে অনেক দখলদার উচ্ছেদ করা ঘরবাড়িগুলোকে নিজস্ব সম্পত্তি বলে দাবি করলেও তারা প্রমাণ হিসেবে কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।
রেলওয়ে সূত্র ও স্থানীয়ররা বলেন, বহু বছর ধরে রেলওয়ের এই জায়গা দখল করে ঘর-বাড়িসহ হাজার হাজার স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। রেলওয়ের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালীদের পাশাপাশি স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ছত্রচ্ছায়ায় এসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। এখান থেকে প্রতি মাসে কোটি টাকার ওপরে আয় করতো সিন্ডিকেটের লোকেরা। তারা আরও বলেন, বছরের পর বছর ধরে এসব জায়গা অবৈধভাবে দখল করে রাখলেও রেলওয়ের পক্ষ থেকে এতদিন জোড়ালোভাবে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এখান থেকে আয় হওয়া টাকার ভাগ পাওয়ায় রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সব সময় নিরব থেকেছেন।

স্থানীয়রা বলেন, কলোনি অঞ্চলের অবৈধ দখল স্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে ‘বাংলদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ’ নামে ওই ক্লাবঘরটি গড়ে তোলা হয়েছিল। ওই ক্লাবে বখাটেদেরে আড্ডার পাশাপাশি নিয়মিত জুয়ার আসরও বসতো। এছাড়া অনেকগুলো ঘরে মদ, জুয়া ছাড়াও নিয়মিতভাবে অসামাজিক কাজ চলতো।
ফাহিমা বেগম নামের এক বাসিন্দা বলেন, দু-তিন মাস ধরে উচ্ছেদ অভিযান চলানোর মাইকিং করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেকে অবৈধ দখল ছেড়ে ঘর-বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিলেও প্রভাবশালীরা আগের মতোই ছিলেন। তিনি বলেন, আমাদের ধারণা ছিল- এসব অবৈধ স্থাপনা কখনো উচ্ছেদ করা সম্ভব হবে না। তবে সব গুঁড়িয়ে দিতে দেখে খুবই ভালো লাগছে।

এদিকে অভিযানকালে রেলওয়ে কলোনির একটি মসজিদ ও মাদরাসার আঙিনায় থাকা একটি মেস বাসাও ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। মসজিদ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই মেসের ভাড়ার টাকা দিয়ে মসজিদ ও মাদরাসার খরচ চলতো। রেলওয়ে কলোনি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও জামিয়া মাহমুদিয়া মাদরাসার কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ১৯৬৬ সাল থেকে এই জমি মসজিদ কর্তৃপক্ষের মালিকানায় ছিল। আজ (গতকাল) বিনা নোটিশে ভেঙে ফেলা হয়েছে। এতে প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তাদের দাবি।

অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় প্রধান ভূসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ওপর মহলের নির্দেশে আমরা এ উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছি। এখানে কোনো অবৈধ স্থাপনা থাকতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, দখলকৃত জায়গায় আনুমানিক ২ হাজার অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দিন ২৫০, দ্বিতীয় দিন ৪০০ ও গতকাল তৃতীয় দিনের মতো ৭০০ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এছাড়া বাকি স্থাপনাগুলো আরও কয়েকদিনের অভিযানে উচ্ছেদ করা হবে। এটা অব্যাহত থাকবে। অভিযানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি রেলওয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অংশ নেন।

এতদিন কেন অভিযান চালানো হয়নি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি এখানে এসেছি মাত্র ৯ মাস। এই সময়ে কাগজপত্র ঠিকঠাক করতে একটু সময় লেগেছে। এখন আর কোনো সমস্যা নেই। সামনে কোন বাধা উচ্ছেদ অভিযান থামাতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, এবার উচ্ছেদের পর নতুন করে আর কাউকে দখলের সুযোগ দেওয়া হবে না। এখন থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা হবে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শেষে নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে এলাকাটিকে ঢেলে সাজানো হবে।

রেল সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২৫ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে চারতলা ভবন রয়েছে ১০৮টি। এসব ভবনের ফ্ল্যাটগুলো দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির আড়াই হাজার চাকরিজীবী পরিবারের নামে বরাদ্দ দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তবে এসব কলোনির ৮০ শতাংশ জায়গা বহু বছর ধরে অবৈধভাবে দখল করে রাখে ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালীরা। দখলকৃত জায়গায় বস্তি থেকে শুরু করে দোকানপাট, রাজনৈতিক কার্যালয়, ক্লাব, মসজিদ-মন্দির, বাজার, কোচিং সেন্টারসহ অনেক স্থাপনা ছিল। এর আগে ২০১১ সালে একবার উচ্ছেদে গেলে দুর্বৃত্তদের হাতে ভূ-সম্পদ কর্মকর্তাসহ ৩ জন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য আহত হয়।

উত্তরায় ডিএনসিসির অভিযান
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সূত্র জানায়, রোববার বেলা ১১টায় উত্তরায় অভিযানের প্রথম দিন ফুটপাথ দখল করায় দুটি প্রতিষ্ঠানকে তিন লাখ টাকা জরিমানা এবং দু’জনকে কারাদন্ড দেয় করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে সোনারগাঁও জনপথ, গরীবে নেওয়াজ এভিনিউ, রবীন্দ্র সরণিসহ বিভিন্ন এলাকার ফুটপাথ ও সড়ক থেকে প্রায় তিনশ অস্থায়ী দোকান, শেড, সিঁড়ি উচ্ছেদ করা হয়। এছাড়া ফুটপাতে গড়ে তোলা যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যালয়ও ভেঙে ফেলা হয়েছে। ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিনুল ইসলাম, সাজিদ আনোয়ার, আব্দুল হামিদ মিয়া, জুলকার নাইন অভিযানে নেতৃত্ব দেন।

উত্তরার গরীবে নেওয়াজ এভিনিউর ১৫৬ নম্বর বাড়ির সামনের অংশে ফুটপাথ ঘেঁষে বানানো দোকান বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। ওই বাড়ির মালিকের স্ত্রী শেলী অভিযোগ করেন, তার বাড়ির বাণিজ্যিক অনুমোদন থাকলেও সামনের অংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। অথচ পাশেই আরেকটি ভবনের সামনের অংশও ফুটপাথের ওপর থাকলেও সেটি ভাঙা হয়নি। বেলা দেড়টার দিকে তিন নম্বর সেক্টরের দুই নম্বর সড়কের ‘হাংরি ডাক’ রেস্তোরাঁর ফটক, সামনের অংশ এবং দোতলায় ওঠার সিঁড়ি ভেঙে দেওয়া হয়। ফুটপাথে চলাচলে বাধা সৃষ্টি করায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা ছাড়াও এক নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ এবং আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের একটি অস্থায়ী কার্যালয় ভেঙে ফেলা হয়। ৭ নম্বর সেক্টরের ৩৫ নম্বর সড়কে অভিযানে বাধা দেওয়ায় সাঈদ নামের একজনকে তিন মাস এবং অবৈধভাবে ফুটপাথ দখল করে ব্যবসা করায় বিপুল চন্দ্র নামের আরেকজনকে সাতদিনের কারাদন্ড দেওয়া হয়।

বেলা ১টার দিকে উচ্ছেদ অভিযান দেখতে আসেন ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, পথচারীদের জন্য তৈরি করা ফুটপাথ দখল করে অবৈধভাবে ব্যবসা বাণিজ্য করতে দেওয়া হবে না। ফুটপাথে কোনো ধরনের দোকান এমনকি কোনো ধরনের পলিটিক্যাল অফিসও থাকতে পারবে না।
এদিকে, বিকাল ৫টার দিকে ফুটপাথের বড় স্থাপনার অংশ ভাঙা হয়নি কেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ বলেন, তারা সব অবৈধ স্থাপনাই উচ্ছেদ করবেন। কোনো স্থাপনা অল্প ভাঙা বা না ভেঙে চলে আসার মতো ঘটনা ঘটলে সেগুলো পুরোপুরি ভাঙা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Mohammad Jakir Hossain ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:২৫ এএম says : 0
Gd
Total Reply(0)
ফ রা জী ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:২৫ এএম says : 0
এসবের ভাড়া যারা তুলতো তাদের ধরেন
Total Reply(0)
জাহেদ সিকদার এ ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:২৬ এএম says : 0
বার হয়তো লীগের স্থায়ী বাসা বাড়ি হবে।
Total Reply(0)
Md Saha Alam ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:২৬ এএম says : 0
পারে তো শুধু গরিব মানুষের পেটে লাথি দিতে। এই গরিব মানুষ গুলো এখন কোথায় যাবে।। এই দেশে রহিঙ্গারা নিরাপদে ই আছে শুধু নিরাপদে নাই আমাদের মত মানুষ গুলো।
Total Reply(1)
Yourchoice51 ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:২৬ এএম says : 4
রাশিয়ান বিপ্লবে যা হয়েছিল,,, মানে উপরতলার লোকদের ভাগ্যে যা জুটেছিলো, এদেশেও সেরকম কিছু একটা হলে অবাক হবো না।

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন