শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শুল্কমুক্ত সুবিধার আড়ালে ২৬ কোটি টাকা ফাঁকি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

মূলধনী যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ উপকরণ আমদানির শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে প্রায় সাড়ে ২৬ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া গেছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অনুসন্ধানে সিটি এডিবয়েল ওয়েল লিমিটেড নামের একটি কোম্পানির আমদানিকৃত দু’টি বিল অব এন্ট্রির বিপরীতে এই ফাঁকি উদঘাটিত হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একটি ঊর্ধ্বতন সূত্র এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এ বিষয় আইনি ব্যবস্থা নিতে এরই মধ্যে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার কাছে চিঠি দিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। চিঠিতে প্রাইম হট রোলড প্লেট আমদানি করে ২৬ কোটি ৪৬ লাখ ২৩ হাজার ৩২৪ টাকা শুল্ক ফাঁকির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে, যা আদায় করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এনবিআর। আর আইনি ব্যবস্থাও নেয় এনবিআর। এনবিআরই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে। তবে এটুকু বলতে পারি, শুল্ক ফাঁকিবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের আইনি পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৮ সালের মে মাসে সিটি এডিবয়েল ওয়েল লিমিটেড (বিন নং- ২১০৫১০০৮৬৭৭) আর্টিক্যাল অব মেমোরেন্ডামের কপি, জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে নিবন্ধনের কপি, আয়কর সনদ, ভ্যাট নিবন্ধন কপি, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (বেজা) সদস্যের কপি, বেজা সুবিধায় আমদানিকৃত পণ্যের তালিকা ও বিল অব এন্ট্রির তথ্য ইত্যাদিসহ দাখিল করে শুল্কমুক্ত সুবিধা গ্রহণ করে। বিষয়টি শুল্ক গোয়েন্দার নজরে এলে তারা এ বিষয়ে জানতে চলতি বছরের জুন মাসে চিঠি দেয়। একই সঙ্গে এসাইকুডা ওয়ার্ল্ডে সংরক্ষিত ডাটাবেজ থেকে তথ্যাদি সংগ্রহ করা হয়। শুল্ক গোয়েন্দার চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানির মনোনীত পরিচালক প্রতিনিধি বিশ্বজিৎ সাহা ও ব্যবস্থাপক সুজয় বিশ্বাস শুনানিতে উপস্থিত হয়ে দাবি করে সিটি এডিবেল ওয়েল লিমিটেড বেজার যাবতীয় আইনকানুন অনুসরণ করে পণ্য আমদানি করে থাকেন। প্রতিষ্ঠানটি প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং নির্মাণের জন্যই প্রাইম হট রোলড প্লেট আমদানি করেছে।

বেজার শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনের (প্রজ্ঞাপন নং ২০৯/আইন/২০১৫/৪৬-কাস্টমস) আওতায় শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহ শুল্কমুক্ত সুবিধায় মূলধনী যন্ত্রপাতি ও বিল্ডিং ম্যাটারিয়ালস খালাস করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে বেজা হতে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও বিল্ডিং ম্যাটারিয়ালস হিসাবে আমদানি পারমিট (আইপি) গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু আমদানিকারক সিটি এডিবেল ওয়েল লিমিটেড খালাসকৃত পণ্য চালানে বেজার জন্য নির্ধারিত সিপিসির অপব্যবহার করেছে। কেননা উল্লেখিত চালানে প্রাইম-হট রোলড প্লেট আমদানি করা হয়। যা ওই প্রজ্ঞাপনে শর্তের পরিপন্থী।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, আমাদানিকারক সিটি এডিবেল ওয়েল লিমিটেড চট্টগ্রামের কাস্টম হাউস দিয়ে দু’টি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে প্রাইম হট রোলড প্লেটের বিভিন্ন সাইজের পণ্য আমদানি করে, যা ২০১৫ সালের ১ জুলাই বেজার শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ওই প্রজ্ঞাপনের শর্তানুযায়ী এমএস রড/বার, সিমেন্ট, প্রিফেব্রিকেটেড বিল্ডিং, আয়রন বা স্টিল সিট আমদানিতে অব্যাহতি সুবিধা প্রযোজ্য হবে না। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি প্রজ্ঞাপনের শর্ত ভঙ্গ করে রেয়াতি হারে পণ্য ছাড় করে রাজস্ব ফাঁকি হয়েছে।

ওই প্রজ্ঞাপনে মূলধনী যন্ত্রপাতি এবং নির্মাণ উপকরণ আমদানিতে উহার ওপর আরোপনীয় সমুদয় আমদানি শুল্ক, রেগুলেটরি ডিউটি, সম্পূরক শুল্ক এবং মূল্য সংযোজন কর হতে অব্যাহতি দেয়া হয়। যেখানে কিছু শর্তের কথা বলা হয়। শর্তগুলো হলো- অর্থনৈতিক অঞ্চলের শিল্প ইউনিটকে মূল্য সংযোজন কর নিবন্ধিত হতে হবে।

প্রজ্ঞাপনের আওতায় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে পণ্যের নাম, বিবরণ, পরিমাণ সংক্রান্ত বিবরণী অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত ও প্রত্যয়িত হতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে, বাংলাদেশে সহজলভ্য এমন নির্মাণসামগ্রী যথা : এমএস রড/বার, সিমেন্ট, প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং, আয়রন/স্টিল সিট আমদানিতে এই অব্যাহতি সুবিধা প্রযোজ্য হবে না।

অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন এবং নির্মাণের সহিত সরাসরি সম্পৃক্ত নয় এরূপ কোনো পণ্য যথা- অফিস সরঞ্জামাদি, এয়ারকন্ডিশনার, রেফ্রিজারেটর, গৃহস্থালি ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, খাদ্যদ্রব্য ও পানীয় এবং অনুরূপ অন্যান্য ভোগ্যপণ্য আমদানিতে এই অব্যাহতি সুবিধা প্রযোজ্য হবে না।

কিন্তু শুল্ক গোয়েন্দার অনুসন্ধানে সিটি এডিবেল ওয়েল লিমিটেডের পণ্য আমদানিতে শুল্ক ফাঁকি প্রমাণিত হয়েছে। যেখানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি পণ্যের চালানগুলোতে মোট ১১ কোটি ৮৪৮ লাখ ২৫০ কেজি পণ্যের তথ্য উপস্থাপন করে। শুল্ককরসহ যার মোট মূল্য দাঁড়ায় ৯৫ কোটি ৩০ লাখ ৬৬ হাজার ৪০০ টাকা। কিন্তু নথিপত্রে শুল্ককরসহ মূল্য ধরা হয়েছে ৬৮ কোটি ৮৪ লাখ ৪৩ হাজার ৭৭ টাকা। অর্থাৎ ২৬ কোটি ৪৬ লাখ ২৩ হাজার ৩২৪ টাকা শুল্ক ফাঁকি দেয়া হয়েছে, যা আদায়যোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ অবস্থায় শুল্ক আদায়ের জন্য চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Mohammed Shah Alam Khan ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৭:২২ এএম says : 0
শুল্ক ফাঁকি এটা একটা নিত্য নিমিত্ত বিষয় বলে নিন্দুকদের অভিযোগ। নিন্দুকেরা বলছে, এই সুযোগ বিশেষ করে গারমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজে বেশী হচ্ছে। নিন্দুকদের অভিযোগে দেখা গেছে এসব কাজে হিন্দু সম্প্রদায়র মালিক বা কর্মচারীরই বেশী করে থাকেন। নিন্দুকদের কথা প্রবাসে এদের পক্ষে যারা গার্মেন্ট আমদানী কারক হিসাবে এলসি পত্র খুলে তারাও এদের সাথে হাত মিলিয়ে এদেরকে এলসির মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দেয়ার কায়দা করে দেয়। নিন্দুকদের অভিযোগ সরকার হিন্দুদের প্রতি সদয় হবার কারনেই এসব ফন্দিফিকির তারা করে থাকে। এতে করে তারা নিজেরা লাভবান হয়; এধরনের ঘটনা শয়টার উৎপাদক ফ্যাক্টরির মালিক এক হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক ১৯৯৬ সাল থেকে আমদানী রফতানীর নামে প্রচুর শুল্ক ফাঁকি দিয়ে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। তাঁর এসব ঘটনা জানা জানি হবার সাথে সাথে তিনি বছর খানেক ধরে ব্যাবসা বন্ধ করে সরকারি যায়গা যেটা সে নাম মাত্র মূল্যে শিল্প প্রতিষ্ঠান করার জন্যে বরাদ্ধ পেয়েছিলেন সেখানে শিল্প দাঁড় না করিয়ে সেই যায়গাও বাজার দরে কোটে কোটে টাকা লাভে বিক্রিতে তুলেছেন বলে জানা গেছে। তিনি এতই লোকশান করেছেন দেখাচ্ছেন যে জন্যে এখন তিনি তাঁর ব্যাবহারের গাড়ীও বিক্রয় করে দিয়েছেন। এভাবে সমস্ত কাগজ পত্র বানিয়ে তিনি এখন ঐ ফ্যাক্টরিকে দেওলিয়া সাজাবার সবরকম পাঁয়তারায় করে ফেলেছেন বলে জানাগেছে। আল্লাহ্‌ আমাদেরকে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুষ্ট লোকদের হাত থেকে রক্ষা করুন। আমিন
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন