বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গণপূর্ত নিয়ন্ত্রণে ‘ফাইভ স্টার’ গ্রুপ!

জি কে শামীম কান্ডে সারাদেশে তোলপাড়

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

পুলিশ হেফাজতে থাকা যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার জি কে শামীম শুধু নয়, গণপূর্ত অধিদফতরের হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ ভাগিয়ে নেয়া প্রভাবশালী ঠিকাদারদের দেয়া কমিশনের সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠানটির পাঁচ কর্মকর্তার একটি সিন্ডিকেট। ‘ফাইভ স্টার গ্রুপ’ নামে গণপূর্ত কর্মকর্তাদের এই সিন্ডিকেটে মাঠের প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে শুরু করে রয়েছেন সর্বোচ্চ পদধারী প্রধান প্রকৌশলীও। কমিশনের টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে কারো অ্যাকাউন্টে যায় না। সিন্ডিকেটের দায়িত্বশীল দুইজন কর্মকর্তা প্রতিটি কাজের জন্য নির্ধারিত কমিশন নগদে নিয়ে নেন, যাতে অনৈতিক এই কাজের কোনো প্রমাণাদি না থাকে। শুধু ঠিকাদারি কাজ নয়, বদলি বাণিজ্য, পদোন্নতি বাণিজ্য, পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেয়া, অসাধু কর্মকর্তাদের ঘুপচি টেন্ডার অনুমোদনসহ সব ধরনের অনিয়মের জন্য প্রধান প্রকৌশলীর জন্য নির্ধারিত কমিশন কালেকশন করে একই সিন্ডিকেট।

গণপূর্ত অধিদফতরের কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং ঠিকাদারদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে সরকারি চুক্তি ভঙ্গ করলে সচিবালয়-র‌্যাব হেড কোয়ার্টারসহ জি কে শামীমের ১৭টি প্রকল্পের কাজ বাতিল হবে। তার আগে বাতিল হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন।

কর্মকর্তাদের ওই ফাইভ স্টার সিন্ডিকেটে রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, মেট্রো জোন ও ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে, সাভার গণপূর্ত সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শঙ্কর কুমার মালো, শেরেবাংলা নগর-১ গণপূর্ত বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী বর্তমানে তদন্ত কোষের দায়িত্বে থাকা ফজলুল হক মৃধা ও সিটি ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত উল্লাহ।

জানা গেছে, বর্তমান গণপূর্তে প্রধান প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন চলতি বছরের প্রথমার্ধ্বে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই এই ফাইভ স্টার গ্রুপটি গড়ে উঠে। আগের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের সাথে আগে থেকেই সখ্যতা ছিল জি কে শামীমসহ প্রভাবশালী ঠিকাদারদের। কাজের বিপরীতে প্রধান প্রকৌশলীর জন্য পূর্ব নির্ধারিত হারে (১০ শতাংশ) কমিশনের টাকা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যথাসময়ে পেয়ে যান শাহাদাত হোসেন। তাই প্রভাবশালী ঠিকাদাররা হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ সহজেই পেয়ে যান। বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আগের প্রধান প্রকৌশলীরা প্রতিটি কাজের জন্য পৃথক টেন্ডার আহ্বান করলেও ইজিপি এড়িয়ে ওটিএম’র মাধ্যমে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিতে পুরো প্রকল্পের টেন্ডার একসাথেই করেন শাহাদাত। যে কারণে একদিকে যেমন ঢাকার বাইরে থাকা ঠিকাদাররা কাজে অংশ নিতে পারেন না অপরদিকে সামর্থ্যরে বাইরে হওয়ায় ঢাকায় থেকেও টেন্ডারে অংশ নিতে পারেন না ছোট ঠিকাদাররা। এছাড়া হুমকি-ধমকি তো থাকেই। ফলে জি কে শামীমসহ প্রভাবশালী ঠিকাদাররাই বড় বড় সব কাজ পেয়ে যান সহজেই।

এদিকে বদলি বাণিজ্য, পোস্টিং বাণিজ্য, পদোন্নতি বাণিজ্য, পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেয়া, অসাধু কর্মকর্তাদের ঘুপচি টেন্ডার অনুমোদনসহ এমন কোনো অনিয়ম নেই যা করেন না প্রধান প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন। প্রতিটি বদলি এবং পোস্টিংয়ের জন্য ক্ষেত্রভেদে ১০ লাখ থেকে শুরু করে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। টাকা পেলে নিয়মকে অনিয়ম বানাতে সময় লাগে না তার। নানা অভিযোগে শাস্তিমূলক বদলি হওয়া বাপিডিপ্রকৌস’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর সরকারকে দুই মাসের মাথায় ঢাকায় পোস্টিং দিয়ে নিয়ে আসেন টাকার বিনিময়ে। পূর্তভবনে চাউর রয়েছে এই কাজের জন্য তিনি ৭০ লাখ টাকা নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছ থেকে। তার মতের বিরুদ্ধে যাওয়ায় তিনি গণহারে বদলির ঘটনাও ঘটিয়েছেন। ফাইভ স্টার সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য হলেন গণপূর্তে ঘুপচি টেন্ডারের আবির্ভাবকারী অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়েছে এর আগে। আধুনিক জেলখানা নির্মাণকাজে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, নিজস্ব ঠিকাদারদের অবৈধভাবে কাজ পাইয়ে দিয়ে অতিরিক্ত কমিশন আদায়সহ নানা অনিয়মে তার জড়িত থাকার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। মেট্রো জোনের দায়িত্বে থাকায় জাতীয় সংসদ, গণভবন, বঙ্গভবন থেকে শুরু করে সচিবালয়, মন্ত্রীপাড়াসহ সব ভিভিআইপি এলাকার পূর্ত কাজ তার অধীনেই হয়। এই সুযোগটিই কাজে লাগিয়ে ভিআইপি বরাদ্দ নিয়ে টাকা আত্মসাৎ করছেন তিনি। এর ভাগ দিচ্ছেন প্রধান প্রকৌশলীকেও। যে কারণে দুর্নীতিবাজ চিহ্নিত হওয়ার পরও ঢাকার অতিগুরুত্বপূর্ণ দু’টি জোনের দায়িত্ব ভাগিয়ে নিয়েছেন তিনি।

এই সিন্ডিকেটের অপর অন্যতম সদস্য তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শঙ্কর কুমার মালো। সাবেক দুর্নীতিবাজ প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের আস্থাভাজন থাকার সুবাদে তিনি বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীরও আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। প্রকৌশলীদের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের দায়িত্ব পালনের সময় তিনি নানাভাবে টাকা আত্মসাৎ করে নেন। এতকিছুর পরও তিনি ভাগিয়ে নিয়েছেন ভালো পোস্টিং। ফাইভ স্টার সিন্ডিকেটের সদস্য হওয়ায় সাভার গণপূর্ত সার্কেলের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সার্কেলের দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে।

সিন্ডিকেটের অপর দুই সদস্য হলেন নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল হক মধু ও শওকত উল্লাহ। এদের মধ্যে ফজলুল হক মধুর সাথে জি কে শামীমের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। পঙ্গু হাসপাতালের আধুনিক ভবন নির্মাণ, চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ভবন, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, নিউরো সাইন্স, বিজ্ঞান জাদুঘরসহ বেশ কয়েকটি বড় বড় প্রকল্প জি কে শামীমের জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড (জি কে বিল্ডার্স) করেছে। আর এসব প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন ফজলুল হক মধু। যে কারণে নিজেরটাসহ প্রধান প্রকৌশলীকে দেয়া জি কে শামীমের সব কমিশন তিনিই গ্রহণ করতেন। আর সিটি ডিভিশনের দায়িত্বে থাকা শওকত উল্লাহ মন্ত্রীপাড়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকার দায়িত্বে থেকেও প্রধান প্রকৌশলীর ডান হাত হিসেবে কাজ করেন। সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের সিন্ডেকেটের অন্যতম এই সদস্য বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীর ক্যাশিয়ার হিসেবেও পরিচিত। সব ধরনের কমিশনসহ বদলি, পদোন্নতি, পোস্টিং বাণিজ্যের মূল হোতা তিনি। কাকে কোথায় পোস্টিং করতে হবে সেই তালিকা তিনিই নাকি প্রধান প্রকৌশলীকে দেন। এছাড়া পূর্তকাজে অনিয়ম তো আছেই।

এসব অভিযোগের বিষয়ে ফাইভ স্টার সিন্ডিকেটের কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি। সিন্ডিকেটের অন্যতম কারিগর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে’র সাথে কথা বলতে তার দফতরে পরপর তিন দিন গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। এসএমএস দিয়ে জানতে চাইলে তিনি পাল্টা এসএমএস দিয়ে এসব বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
fanu miah ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৯ এএম says : 0
He should return all money to govt ASAP and should investigate matters urgently that who's behind him ??
Total Reply(0)
Md Manik Dhali ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৯ এএম says : 0
এই অবৈধ পথে উপার্জন করা টাকাগুলো বাংলাদেশের রাস্তাঘাট তৈরি করা হোক।। মানুষ যেনো সুন্দরমতন চলাফেরা করতে পারে
Total Reply(0)
Sk Md Bahar Ullah ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৯ এএম says : 0
অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ সম্পদের দালান কোঠা সহ সমস্ত সম্পদ জব্দ করে রাষ্ট্রের তহবিলে নিয়ে দারিদ্র্য দূরীকরণে ব্যয় করা হলে গরীব মানুষ উপকৃত হবে।
Total Reply(0)
MD Aslam Uddin ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৪০ এএম says : 0
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, জি কে শামীম এর কাছ থেকে নগদ প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা,১৬৫ কোটি টাকার এফডিআরের নথি অস্ত্র ও মাদক জব্দ করা হয়, যে অর্থ দিয়ে পাঁচটা পদ্মা সেতু এবং ঢাকার শহরে হাজারো এসি বাস নামানো সম্ভব, আমরা এত কিছু চাইনা। আপনি একটু দৃষ্টি দিলেই দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু করা সম্ভব, এতে করে উপকৃত হবেন রাজবাড়ী ফরিদপুর কুষ্টিয়া ঝিনাইদা রংপুর এবং কি আপনার গোপালগঞ্জ জেলাও। হোকনা সেটা জি কে শামীম এর নামে?
Total Reply(0)
Emdadul Hoque Emdadul Hoque ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৪০ এএম says : 0
এসব দুর্নীতিবাজদের টাকা জব্দ করে বাংলাদেশের গরিব-দুঃখীর মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি আরো বহু দুর্নীতিবাজ দেশে আছে তাদেরকে অতি তাড়াতাড়ি আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি জয় বাংলা
Total Reply(0)
Monirul Haque ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৪১ এএম says : 0
গণপূর্ত অধিদফতরের যে সকল কর্মকরতা তাকে সহযোগিতা করেছেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক।
Total Reply(0)
Mir Jihad ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৪২ এএম says : 0
সবাই সুভিধাবাজ। আগে কখনো তার রাজকীয় চলাফেরা কোন মিডিয়া দেখায় নি।এখন তার অফিসে দুদকের অভিযান,চলার পর সব মিডিয়া উঠে পড়ে লেগেছে নিউজ করার জন্য
Total Reply(0)
শেখ রবিন ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৪৩ এএম says : 0
এধরনের কিছু কিছু লোক দের কারনে দেশের আজ করুন অবস্থা। তই এধরনের লোকদের ব্যাপারে কোন কথা নেই সরাসরি ফাঁসি দাবী করছি, এরা বেচে থাকিলে দেশ আরো পিছিয়ে যাবে বলে মনে করি, তাই এই জি কে শামীম কে ফাঁসি দেওয়া হোক।
Total Reply(1)
Yourchoice51 ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৮:২৬ এএম says : 4
বেটা বলে কি? ফাঁসি কি ছেলেখেলা? এসব লোকদের এতো সম্পদের মালিক হতে যেসব সরকারি লোকজন আর মন্ত্রী-তন্ত্রীরা সহায়তা করেছে তারা গেলো কই?
Mohammed Rezaur Rahman ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:৫৮ এএম says : 0
I feel ashamed to call myself an engineer. Their Engineer designation should be taken right away. Government should make special law to punish those criminals in summary court with no scope of appeal. Their total asset should be confiscated. Death penalty is not enough. They should be executed in public in front of their families.
Total Reply(0)
মাহফুজুল ইসলাম ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৮:১০ এএম says : 0
আমাদের মাননীয় পূর্তমন্ত্রী জনাব শ ম রেজাউল করিম সাহেবের দ্রষ্টি আকর্ষনপৃর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি। পূর্বে উনাকে অনেক সরব দেখেছি, এত বড় ঘটনার পর ও তাঁর কৌন প্রতিক্রিয়া দেখছিনা কেন?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন