বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জেল থেকে চিরকুট পাঠিয়ে খুনের নির্দেশ!

প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ১০ দিন পার হয়েছে। এখনও পর্যন্ত হত্যাকা-ের রহস্য উদঘাটন হয়নি। অধরাই থেকে গেছে খুনীচক্রের সদস্যরা। হত্যাকা-ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হলেও তাতে যে নাম্বার প্লেট সেটি ভুয়া। আর মোটরসাইকেলটিও চুরি করা। ভিডিও ফুটেজ ধরে সন্দেহভাজন যে মাইক্রোবাসটি শনাক্ত করা হয় সেটিও এ ঘটনায় জড়িত ছিল না বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।
সন্দেহভাজন যে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের কাছ থেকেও কোন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে এখনও পর্যন্ত দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী এ হত্যা মামলার তদন্তে কোন অগ্রগতি হয়নি। গত ৫ জুন নগরীর জিইসি মোড়ের অদূরে ও আর নিজাম রোডে শিশু পুত্রকে স্কুল বাসে তুলে দিতে গিয়ে নির্মম হত্যাকা-ের শিকার হন মিতু। দুর্বৃত্তরা তাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে ও গুলি করে মাত্র এক মিনিটের কম সময়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর খুনের জন্য জঙ্গিদের সন্দেহের তালিকায় শীর্ষে রেখে তদন্ত ও অভিযানে নামে পুলিশ। তবে এ ঘটনা কারা ঘটিয়েছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। রোববার চট্টগ্রাম সফরকালে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক জানান, খুনীরা যে জঙ্গি তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে গাইবান্ধার জঙ্গি আস্তানায় পাওয়া একটি চিরকুটের সূত্র ধরে চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দি জঙ্গি সদস্য বুলবুলকে ৫ দিনের রিমান্ডে এনেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বাকলিয়া থানার একটি হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে (শ্যোন এরেস্ট) রিমান্ডে আনা হয়। সে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মোজাহেদীন বাংলাদেশ জেএমবির সদস্য। ফুয়াদ ওরফে মো. বুলবুল নামে ওই জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে গতকাল আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম হারুন অর রশিদ ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী জানান, ২০১৫ সালের ২৫ মে বাকলিয়া থানার সৎসঙ্গ আশ্রম সংলগ্ন নদী থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধারের মামলায় বুলবুলকে গ্রেফতার দেখিয়ে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানায় পুলিশ পিবিআই। শুনানি শেষে আদালত পাঁচদিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর নগরীর সদরঘাট এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় এক ব্যবসায়ী ও দুই ছিনতাইকারী নিহত হওয়ার মামলা তদন্ত করতে গিয়ে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায়। এর জের ধরে গত বছরের ৫ অক্টোবর নগরীর কর্ণফুলী থানার খোয়াজনগরে তৎকালীন অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) বাবুল আক্তারের নেতৃত্বে নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি টিম অভিযান চালিয়ে বুলবুলসহ পাঁচ জেএমবি সদস্যকে গ্রেফতার করে। ওইদিন রাতে জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিস্ফোরক শাখার প্রধান মো. জাবেদ ওরফে জায়েদকে নিয়ে ডিবি আরেকটি অভিযানে গেলে সে গ্রেনেড বিস্ফোরণে মারা যায়। ডিবির দাবি তার দেখানো মতে, জঙ্গি আস্তানা থেকে গ্রেনেড উদ্ধার করতে গেলে গ্রেনেড বিস্ফোরণে জাবেদ মারা যায়। বুলবুলসহ বাকি চার জঙ্গি সদস্যের কাছ থেকে পুলিশ জঙ্গি কর্মকা- সম্পর্কিত বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
সম্প্রতি বুলবুলের লেখা একটি চিরকুট ফাঁস হওয়ার পর পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু আক্তার হত্যাকা-ের সঙ্গে জেএমবির সম্পৃক্ততা আছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে পিবিআই। এ ব্যাপারে বুলবুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন জানায় পিবিআই। ফাঁস হওয়া চিরকুটে জাবেদকে ‘হত্যা’ এবং জিজ্ঞাসাবাদে নির্যাতনের অভিযোগ এনে বাবুল আক্তারসহ অভিযান পরিচালনাকারী পুলিশ সদস্যদের হত্যার আহ্বান জানিয়েছে ফুয়াদ ওরফে মো. বুলবুল। এক মাস আগে গাইবান্ধার একটি জঙ্গি আস্তানা থেকে ওই চিরকুটটি উদ্ধার করা হয়। পরে নিশ্চিত হওয়া যায়, ওই চিরকুটের হাতের লেখা চট্টগ্রামে বন্দি বুলবুলের। কারাবন্দি বুলবুল জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের সেকেন্ড ইন কমান্ড বলে জানিয়েছিল নগর গোয়েন্দা পুলিশ। এর আগেও কয়েকবার বুলবুলকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। যে কোন সময় তাকে কারাগার থেকে বের করে নিজেদের হেফাজতে নিবে পিবিআই। একটি হত্যা মামলায় তাকে রিমান্ডে আনা হলেও মূলত চিরকুটের রহস্য উদঘাটন এবং সেইসাথে ওই চিরকুটের সঙ্গে মিতু হত্যার যোগসূত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখবে পিবিআই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন