মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী বিশ্ব

কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়

অষ্টম কিস্তি

মুনশী আবদুল মাননান | প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৫:১৪ পিএম | আপডেট : ৫:১৪ পিএম, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

বিজেপি সরকারের আলোচ্য বেপরোয়া পদক্ষেপ ভারতের অভ্যন্তরেও ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। মানবাধিকারবাদী ও গণতন্ত্রকামী কোনো দল ও ব্যক্তি সংবিধান বর্ণিত কাশ্মীরের মর্যাদা ও সুযোগ বিলোপ করা সমর্থন করেনি। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসসহ বাম দলগুলো এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। অন্যদিকে সংবিধানে আরো যেসব রাজ্যের জন্য বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়েছে তারাও বিচলিত হয়ে পড়েছে। ৩৭০ ধারাকে ভিত্তি করে সংবিধানে অন্তত আরো পাঁচটি ধারা রয়েছে, যার আওতায় নাগাল্যান্ডের নাগা, অরুণাচলের নাগা, মিজো ও অন্যান্য উপজাতি, মেঘালয়ের গারো, খাসি ও মিকির উপজাতিরা অতিরিক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে। ভবিষ্যতে তাদের সুবিধাও খর্ব করা হতে পারে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে। বলা বাহুল্য, কাশ্মীর নিয়ে আবার যদি কোনো যুদ্ধ বাধে, তাহলে কাশ্মীরকে যেমন ভারতের নিয়ন্ত্রণে রাখা দুরূহ হয়ে পড়বে। তেমনি বিভিন্ন স্বাধীনতাকামী ও বিক্ষুব্ধ রাজ্য বিশেষত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর অসহযোগিতা বা বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হবে ভারতকে।
অমিত শাহ যখন পাকিস্তান থেকে আজাদ কাশ্মীর উদ্ধার ও চীনের কাশ্মীরি ভূখÐ দখল করার খায়েশ ব্যক্ত করেছেন তখন চীনের নীরব থাকার কথা নয় এবং নেইও। চীনা প্রতিক্রিয়া থেকেই সেটা বুঝা যায়। ওদিকে দৃষ্টি দিলে পরিণতি যে শুভ হবে না, সেটাও বলা নিষ্প্রয়োজন। ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধে আকসাই চীন চীনের দখলে গেছে। চীন তাকে তিব্বতের ও জিংজিয়াং প্রদেশের অংশ মনে করে। চীন লাদাখের অংশবিশেষ ও তার বলে দাবি করে, যার কিছু অংশ পাকিস্তান তাকে দিয়েছে। চীন কখনই তিব্বত অঞ্চলে জনসন লাইন মানে না। শুধু তাই নয়, অরুণাচলের মালিকানাও চীন এখনো পরিত্যাগ করেনি। ১৯৬২ সালের যুদ্ধে দখল করা অরুণাচলের অংশবিশেষ থেকে চীন সরে গেলেও তার দাবি অরুণাচল তিব্বতের অংশ হওয়ায় তার অচ্ছেদ্য অংশ। ভারতের হুমকির প্রেক্ষিতে চীন তার দাবিকৃত ভূখÐ উদ্ধার করার উদ্যোগ-পদক্ষেপ নিতে পারে। সেক্ষেত্রে ভারত নতুন করে বড় ধরনের বেকায়দায় পড়তে পারে।
চীন জাতিসংঘে যে বক্তব্য দিয়েছে, তাতে ভারতকে কাশ্মীরের ব্যাপারে একতরফা পদক্ষেপ না নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে সতর্ক করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের অবস্থানের প্রতি সুদৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেছে। ভারতের দীর্ঘদিনের মিত্র রাশিয়া ভারতকে সমর্থন করেনি। শুরুতে রাশিয়া একে ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বললেও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অন্য চার সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে অভিন্ন মত প্রকাশ করে পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে ফয়সালা করার কথা বলেছে। ওদিকে এর আগেই ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাহারকে সমর্থন করেনি। ভারতের ধারণা ছিল, এ ব্যাপারে মুসলিম বিশ্বের কোনো কোনো দেশের বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমর্থন সে পাবে। শেষ পর্যন্ত তার এ আশা পূরণ হয়নি। সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত প্রথম দিকে এটি ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বললেও ওআইসি যে বক্তব্য দিয়েছে তাতে দেশটি দ্বিমত করেনি। ওআইসি ভারতের একতরফা পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা ও সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছে। বুঝতে অসুবিধা হয় না, ভারত তার গৃহীত পদক্ষেপের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

সপ্তম কিস্তি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন