বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

মাগুরার কাঁচা সড়কের করুণ দশা

৩৫ গ্রামের মানুষের চরম দুর্ভোগ

সাইদুর রহমান, মাগুরা থেকে | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০৫ এএম


মাগুরা জেলার গ্রাম্য রাস্তাগুলো কাঁদা পনিতে ছয়লাব হয়ে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করে চলছে। অথচ এসব রাস্তা সংস্কারের কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছেনা দীর্ঘদিন ধরে। বর্ষা মৌসুমে এসব রাস্তার পাশের মানুষের এ করুন অবস্থা দেখার কেউ আছে বলে মনে হয়না। এসব রাস্তার মধ্যে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামের ২৫ হাজার মানুষের চলাচলের তিনটি সড়কের কাঁচা রাস্তার একেবারে বেহাল দশা। সাড়ে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কে এলাকাবাসীর দুর্ভোগের যেন শেষ নেই।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চলাচলের এসব সড়ক বৃষ্টি হলেই একেবারে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। বৃষ্টির ফোটা পড়ার পরেই কাঁদা পানিতে একাকার হয়ে যায়। প্রচন্ড এ কাঁদায় চলতে গিয়ে অনেকেই পড়ে গিয়ে গন্তব্যে যাবার আগেই বাড়িতে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। কৃষি ফসল ধান, পাট মাথায় করে ছুটতে হয় বাজারের দিকে। বাচ্চারা সময় মতো স্কুলে যেতে পারে না। স্কুলে কমে যায় উপস্থিতির। অসুস্থ্য রোগীকে সময় মতো হাসপাতালে নিতে না পারায় বড় ধরণের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। দুর্ভোগ থেকে মুক্তির আশায় বছরের পর বছর ভোগান্তীর স্বীকার এসব লোকেরা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে জানালেও রাস্তার কোনো উন্নয়ন হয়নি। মহম্মদপুর উপজেলার পাশর্^বর্তী বালিদিয়া ইউনিয়রেন মৌশা গ্রামটির দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার। গ্রামের মধ্যে প্রবেশের পথেই কাঁদা। গ্রামে কাদার কারণে ঠোকা যায়না।

বেহাল সড়কের মধ্যে বড়রিয়া নতুন বাজার থেকে মৌশা আশ্রায়ন প্রকল্পের মধ্য দিয়ে নিখড়হাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাড়ে তিন কিলোমিটার। ঘোষপুর মিলন মাস্টারের বাড়ি থেকে মৌশা জাফর মোল্লার বাড়ি পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এবং চরবড়রিয়া মোড় ব্রীজ থেকে হরেকৃষ্ণপুর ¯øুইচ গেইট পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার রাস্তা বর্তমানে চলাচলের একেবারেই অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

এসব সড়ক দিয়ে ধোয়াইল, মৌশা, মাইজপাড়া, বড়রিয়া, নিখড়হাটা, ছোটকলমধারী, মঙ্গলহাটা, চাবিনগর, গোপিনাথপুর, মৌলী, চরবড়রিয়া, হরেকৃষ্ণপুর লক্ষীপুর, বালিদিয়াসহ দুর দুরান্তের মানুষ নিয়মিত চলাচল করে। জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের যেতে হয় এই পথে। রাস্তা উন্নয়নের কোনো পদক্ষেপ না থাকায় নিয়মিত ভোগান্তীতে পড়ছেন এলাকাবাসী।

মৌশা গ্রামে সরকারের আশ্রায়ণ প্রকল্প আবাসন রয়েছে যেখানে বসবাস করে সাধারণ কৃষি ও ভ্যানচালক পরিবার। কিন্তু সড়কের কাঁদার কারণে বৃষ্টির পরে ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে পারেন না অনেকে। এমনও হয়, অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে অনেক পরিবার অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাাঁন।

মৌশা আশ্রায়ন প্রকল্পের বাসিন্দা আবু তাহের (৬০) জানান, আমি ভ্যান চালায়ে খায়। যা আয় ইনকাম হয় তাই দিয়ে মোটামুটি চলে। কাদার কারণে বাড়িতে ভ্যান ঠেলে নেয়া যায় না। আর যেদিন ভ্যান চালাতে না পারি সেদিন পেটে ভাত যায়না।

মৌশা সরাকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফায়েক আলী জানান, শুকনোর সময়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত উপস্থিত হলেও বৃষ্টির সময় তার অর্ধেক হয়ে যায়। কাঁচা-কাঁদা হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসার পথে রাস্তায় পড়ে গিয়ে কাঁদার কারণে আবার বাড়িতে ফিরে যায়।

অপরদিকে চরবড়রিয়া গ্রামের মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া সড়কে শুষ্ক মওসুমেও চলাচলের অনুপোযোগী থাকে। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই পায়ে হেটে যাতয়াত করেন।
চরবড়রিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও বছরের অর্ধেক সময় কাঁদার বেষ্টনিতে থাকে আবদ্ধ। একটু বৃষ্টি হলেই কাঁদার ভয়ে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীরা আসতে চায় না।
মহম্মদপুর উপজেলা প্রকৌশলী বিকাশ চন্দ্র নন্দী বলেন, সড়কগুলো উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাবনাভুক্ত (ডিপিপি) হলে আমরা কাজ করতে পারব। আর যদি না হয় তাহলে সদস্যের সাথে পরামর্শ করে সম্ভব হলে রাস্তার কাজ করা হবে। মাগুরা সদর উপজেলার বেরইল দক্ষিণপাড়ার মুকুলের দোকানের মোড় থেকে কুঠিবাড়ি পর্যন্ত ১ কিলোমিটার রাস্তাটির বেহাল দশা। পলিতা বাজার থেকে ভাঙ্গা খাল যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়ক এটি। শালিখা উপজেলার চতুরবাড়িয়া রাস্তার একই অবস্থা। শ্রীপুর উপজেলার ঘাষিয়াড়া চৌরঙাগী মোড় হতে মাঠপাড়া রাস্তায় বর্তমানে কাঁদায় পরিপূর্ণ থাকায় চলাচল করা যায়না। গ্রামাঞ্চলের সংযোগ রাস্তাগুলোর বর্তমানে জনগনের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি করেছে। জনগনের অসুবিধা বিবেচনা করে রাস্তাগুলোর উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন