বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বেশির ভাগই দুর্নীতিবাজ

রাজনীতিবিদদের বিষয়ে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মূল্যায়ন : দেশের ৮৯ শতাংশ মানুষ ঘুষ-দুর্নীতির শিকার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:৫১ এএম

ঘুষ ছাড়া প্রশাসনে কোনো কাজ হয় না। দেশের ৮৯ শতাংশ সাধারণ মানুষ ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশ মানুষ কোনো প্রতিবাদ বা অভিযোগ করা ছাড়াই ঘুষ দিতে বাধ্য হন। আর প্রতিবাদ করা ২৫ শতাংশের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ ফল পেয়েছেন। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী সংগঠনটি বলেছে, দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষ ঘুষ-দুর্নীতির শিকার। জরিপকৃতদের ৬৫ শতাংশ মনে করেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলন তেমন কার্যকর নয়। কেননা জরিপকৃতরা বিশ^াস করেন বেশির ভাগ রাজনীতিবিদ দুর্নীতিবাজ।

আন্তর্জাতিক তথ্য জানার অধিকার দিবস ২০১৯ এবং তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯-এর ১০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে ‘তথ্য অধিকার আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ : আইনের প্রথম দশকের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘুষ দেয়া মানুষের মধ্যে ৫০ শতাংশ মানুষকে সরাসরি ঘুষ দিতে হয়। ৪০ শতাংশকে একটু আড়ালে আর ১০ শতাংশ মানুষের কাছে ঘুষ চাওয়া হয় সরাসরি। ৮৫ শতাংশ ব্যক্তি মার্কেট বা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। আর জরিপে অংশ নেয়া ৭১ শতাংশ ব্যক্তি মনে করেন সচেতনতাই দুর্নীতি রোধ করতে পারে।
গবেষণা প্রতিবদেনটি উপস্থাপন করেন অধ্যাপক আফসান চৌধুরী। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ছাড়াও অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, ড. অনন্য রায়হান, অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের প্রমুখ।
গবেষণায় ঘুষ দেয়া ১৬ হাজার ব্যক্তির মতামত নেয়া হয় জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তথ্য অধিকার আইনের প্রথম দশকে বেশ ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে তবে তা এখনও প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। যদিও অগ্রগতি মূল্যায়নের জন্য ১০ বছর খুব বড় একটা সময় নয়। সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের একাংশের মধ্যে গোপনীয়তার সংস্কৃতি প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তথ্য যে জনস্বার্থে জনগণের জ্ঞাতার্থে প্রকাশযোগ্য একটি বিষয় এবং তা জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত, এ উপলব্ধি ও চর্চা অপরিহার্য। তথ্য কমিশনকে অধিকতর শক্তিশালী ও কার্যকর করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সম্পৃক্ততায় স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তথ্য অধিকার আইনের সাথে সাংঘার্ষিক আইন বিশেষকরে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট যা বাকস্বাধীনতা ও তথ্য প্রকাশের সম্ভাবনাকে খর্ব করার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে তাকে ঢেলে সাজাতে হবে।
গবেষক ও গণমাধ্যম বিশ্লেষক অধ্যাপক আফসান চৌধুরী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে ১০০ জন ব্যক্তির ওপর পরিচালিত জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন। যেখানে বলা হয় দেশের ৮৯ শতাংশ মানুষ তাদের জীবনযাপনে দুর্নীতির শিকার হয়ে থাকেন। এ ছাড়া তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে জানেন মাত্র ২৫ শতাংশ মানুষ। তার মধ্যে ২০ শতাংশ মানুষ পরিষ্কার ধারণা আছে বলে উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি, জরিপকৃতদের ৬৫ শতাংশ মনে করেন তথ্যের ফলে দুর্নীতি কমে বলে বিশ^াস করেন। অন্যদিকে, রাজনৈতিক আন্দোলন তেমন কার্যকর নয়। কেননা জরিপকৃতরা বিশ^াস করেন বেশির ভাগ রাজনীতিবিদ দুর্নীতিবাজ। বরং তারা সামাজিক আন্দোলনের প্রতি তাদের আস্থা বেশি। তাছাড়া, তথ্য অধিকার আইনকে পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শও দেয়া হয় জরিপে। তিনি বলেন, সরকারি ও বেসরকারি কর্মকাÐে জনগণের অধিকার সচেতনতা ও অংশগ্রহণ করার পদ্ধতি হচ্ছে তথ্য অধিকার আইন। একে কার্যকর করার মাধ্যমে জনগণ সরকারকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে পারে।
মূল প্রবন্ধের সমর্থন করে ড. অনন্য রায়হান বলেন, ভিন্নমত প্রকাশের যে স্বাধীনতা তা ভীষণভাবে সঙ্কুচিত হয়েছে। আর সেই অবস্থার উন্নতি সম্ভব যদি তথ্য অধিকার আইনের কার্যকর প্রয়োগ করা যায়। গণমাধ্যমকে বিশেষ ধন্যবাদ দিয়ে তিনি আরো বলেন, তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বড় বড় যে দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমকর্মীদের জন্যই জনগণ জানতে পেরেছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে আমন্ত্রিত অতিথি ও গণমাধ্যমকর্মীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন ও বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া গয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑ গোপনীয়তার সংস্কৃতি পরিবর্তন; তথ্য কমিশনের কার্যক্রমের গতিশীলতা ও কার্যকরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সম্পৃক্ততায় কমিশনের স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং বার্ষিক জাতীয় বাজেটে অর্থবরাদ্দ নিশ্চিতের উদ্যোগ; তথ্য অধিকার আইনে তথ্য প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিধান; তথ্য অধিকার আইনের পরিপন্থ’ী বিদ্যমান আইনসমূহ সংস্কার ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বাতিল, যেমনÑ জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ৩২ ধারাসহ বাক স্বাধীনতার পরিপন্থী অন্যান্য ধারা; সংশ্লিষ্ট অংশীজনকে সম্পৃক্ত করে পরবর্তী দশকের জন্য বাস্তবায়ন কৌশল এবং আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ; দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জ্ঞান ও তথ্য প্রদানে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা অর্জনে বিভিন্ন কারিগরি ও অনলাইন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা জোরদার; তথ্য অধিকার আইনের অধিকতর বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণমূলক কার্যক্রমে সুশীলসমাজ, জনগণ ও গণমাধ্যমের কার্যকর অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
ash ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৫:৫৫ এএম says : 0
BANGLADESH E SHOCHENOTA DIE KAJ HOBE NA, JETA DORKAR SHORKAR KE HARD LINE JAWA !! JEVABE CHINA HARD LINE JEA ONEK KAJ HOESE, AUSTRALIA, UK EVEN ONNANO DESH E HARD LINE JAWATE GHUSH NAI BOLLE E CHOLE ! HARD LINE SARA BANGLADESH THEKE GUSH JABE NA, KARON BANGLADESH E DURNITI BLOODER SHATHE MISHE GASE
Total Reply(0)
শাহজালাল ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১০:১৮ এএম says : 0
গ্রামের মুরগি চোর থেকে মন্ত্রী পর্যন্ত কেউ রক্ষা পাবেনা. দুর্নীতি ত্ত সন্ত্রাস বিরুদ্ধে এত বড় ভয়ঙ্কর অপারেশন ৪৮ বছরে মধ্যে হয় নাই. এটা বুঝতে পারলে ভাল, না বুঝতে পারলে আরো ভাল.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন