বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

জুয়ায় মাতোয়ারা সাভার আশুলিয়া

সাভার থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৫:৫৮ পিএম

সাভার-আশুলিয়ায় একসময় ফুটবল, ক্রিকেট, হাডুডু, কাবাডি ও ব্যাডমিন্টন খেলার খ্যাতি থাকলেও এখন তা শুধুই অতীত। খেলার ক্লাব নেই বললেই চলে। হারিয়ে গেছে খেলার অনেক মাঠ। তবে পরিচিতি পেয়েছে ‘জুয়া খেলা’। একশ্রেণীর মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠা এই খেলা শহর থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। তাস দিয়ে খেলা জুয়ার আসরে উড়ছে টাকা। ব্যবসায়ী, ছাত্র, যুবকরা নিয়মিত খেলছেন বিভিন্ন ধরনের জুয়া। অনেকের আবার আয়ের একমাত্র উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে জুয়ার টাকা। বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে ‘নিপুণ, চড়চড়ি, ডায়েস, ওয়ান-টেন, ওয়ান-এইট, তিন তাস, নয় তাস, রেমি, ফ্ল্যাসসহ বিভিন্ন ধরনের তাস খেলা বা কথিত “ইনডোর গেমস”-এর নামে চলছে রমরমা জুয়া। জুয়া খেলা ঘটেছে খুনের ঘটনা। অপর ঘটনায় আসরে একজনকে গুলি করে আহত করা হয়েছে। ক্রিকেট খেলা নিয়ে হরহামেশা চলছে জুয়া। অনলাইনেও চলছে জুয়া।

জানা গেছে, সাভার বাজার রোডের রশিদ ম্যানশনের দোতলায় যুগ যুগ ধরে চলছে জুয়া। ‘সেন্ট্রাল ক্লাব’ নামের আড়ালে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে কয়েক গ্রুপে জুয়াড়িরা চিহ্নিত হলেও ধরতে নেই কোনো অভিযান। এছাড়া পৌর এলাকার ঘোড়াদিয়া, কোর্টবাড়ি, ভাগলপুর, বক্তারপুর, নয়াবাড়ি, বনপুকুর, গেন্ডা, কাতলাপুর, সিরামিকস খিচুরিপাড়ার বিভিন্ন বাসাবাড়িতে রয়েছে জুয়ার স্পট। ঢাকা ও চট্রগ্রামে ক্যাসিনো ও জুয়ার আসরে র‌্যাব-পুলিশের অভিযানের মধ্যে জুয়াড়িরা ‘চুপ মেরে’ আছেন বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, জুয়ার আসর থেকে ২১ সহযোগীসহ র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন কাউন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল আলম খান। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদেরকে এক মাসের কারাদন্ড দেন। পরে ১ আগস্ট তাদের কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। র‌্যাব-৪ এর তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার রিফাত বাশার তালুকদার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাবের একটি দল রাজধানীর শাহআলী থানার একটি বাড়িতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালায়। সেখানে কাউন্দিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল আলম খানসহ ২১ ব্যক্তিকে জুয়া খেলারত অবস্থায় আটক করা হয়। জুয়ার আসরের ৭১ হাজার ৭শ’ ৫৭ টাকা, জুয়া খেলার ৯ প্যাকেট তাস, প্যাড কাগজসহ নানা উপকরণ জব্দ করা হয়। পরে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজাম উদ্দিন আহমেদ ১৮৬৭ এর ৪ ধারা মতে আটক জুয়াড়িদের প্রত্যেককে এক মাস করে কারাদন্ড প্রদান করে কারাগারে পাঠান।

২০১৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর রাতে সাভারে জুয়া খেলার টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। মুমুর্ষ অবস্থায় গুলিবিদ্ধ ওই গার্মেন্টস ব্যবসায়ী লিটন মিয়াকে (৩৮) সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শরীরে অস্ত্রোপচার শেষে তাকে হাসপাতাল টির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। ঘটনাটি ঘটে পৌর এলাকার আনন্দপুর মহল্লায় ঝুট ব্যবসায়ী পারভেজের বাসায়।

পুলিশ বলেছে, পৌর এলাকার আনন্দপুর মহল্লার পারভেজের বহুতল ভবনের একটি ফ্ল্যাটে প্রতিদিনের ন্যায় ওইদিন রাতে মদ ও জুয়ার আসর বসে। ঈদের আগের রাতে ওই আসরে সাভার সিটি সেন্টারের সিনহা কালেকশনের মালিক কাপড় ব্যবসায়ী সোহেল ও একই মার্কেটের রেডিমেড গার্মেন্টসে ব্যবসায়ী লিটন ওই জুয়ার আসরে যান। জুয়া খেলার এক পর্যায়ে নলাম এলাকার কফিল উদ্দিনের ছেলে ব্যবসায়ী লিটন প্রায় ৩ লাখ টাকা জিতে যান। এতে তার প্রতিপক্ষের (হেরে যাওয়া পার্টি) সোহেলের সাথে তর্ক বিতর্কের এক পর্যায়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে আশুলিয়ার দূর্গাপুর এলাকার সোহেল উত্তেজিত হয়ে তার সাথে থাকা শটগান দিয়ে লিটনকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছুড়ে। এ সময় লিটন পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। রাত ১১ টার দিকে জুয়ার আসরে উপস্থিত অন্যান্য জুয়াড়িরা লিটনকে গোপনীয়তার সাথে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর ওইদিন রাতেই এনাম মেডিকেল কলেজের সার্জন আসাদুজ্জামান রিপন তার শরীরে দীর্ঘ পাঁচ ঘন্টা ধরে অস্ত্রোপচার করে পা থেকে গুলি বের করেন।
অন্যদিকে সাভারে জুয়া খেলা নিয়ে দ্বন্দের জেরে মাত্র তিন হাজার টাকার জন্য ভ্যানচালক নয়নকে পাঁচ বন্ধু মিলে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার মো. ছগীর, কালাম, লাবু, সোহাগ ও আনিস হত্যাকান্ডের কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। গতবছরের ৮ জুন রাতে নিহত নয়ন তার পাঁচ বন্ধুকে নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ভেতরে জুয়া খেলতে বসে। খেলায় তিন হাজার টাকার মতো জিতে যায় ভ্যানচালক নয়ন। এ সময় ইয়াবা খেয়ে নেশাগ্রস্ত বন্ধুরা বিষয়টি মেনে নিতে না পারায় নয়নকে ইট ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে। এক পর্যায়ে নয়নের মাথায় ইটের আঘাত করা হলে সে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরে তারা লাশটি গুম করার জন্য স্মৃতিসৌধের দক্ষিণ পাশের বাউন্ডারি ওয়ালের ১০ ফুট ভেতরে কচুক্ষেতের ভেতরে ফেলে রেখে যায়।

এদিকে আশুলিয়ায় শত শত স্পটে চলছে জুয়া। ডেন্ডাবরের বাঁশতলা, গাজীরচট, ইউনিক, বাইপাইল, নরসিংহপুর, বান্দের পুকুরপাড়, পলাশবাড়ি, পল্লীবিদ্যুৎ, দক্ষিণ গাজীরচট, নবীনগর কুড়গাঁও সোসাইটি, নিরিবিলি এবং ভলিভদ্র বাজারে দেখা মিলে এমন অসংখ্য জুয়াড়ি। এদের মধ্যে অনেকে ব্যবসায়ী হলেও বেশিরভাগ বেকার যুবক। আশুলিয়ার এসব স্থানের জুয়াড়ির রাত-দিন নেই। এসব স্থানের চক্রগুলো অনেক সময় দেখা যায়, ক্রিকেট খেলায় প্রতি বলে কখন কত রান হবে তার ওপরও টাকা লাগিয়ে থাকে।

জানা গেছে, আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকার জুয়া খেলার সঙ্গে জড়িত বেশিরভাগ অল্পশিক্ষিত যুবক হওয়াতে দ্রুত সমস্যাটি বড় হচ্ছে। ফলে বেকার যুবকদের মধ্যে টাকার নেশা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তারা জুয়াকে দ্রæত বেশি টাকা আয়ের সহজ পথ বলে বেছে নিচ্ছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন