শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

বদান্যতা ও দানশীলতা

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

যেসব নৈতিক ও চারিত্রিক সৎকর্মের ওপর কোরআনে বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে তন্মধ্যে বদান্যতা ও দানশীলতাও একটি। এর অর্থ, আল্লাহতায়ালা কোনো বান্দাকে যে ধন-সম্পদ, বিত্ত-বৈভব, শক্তি-সামর্থ্য ও নেয়ামত-আশীর্বাদ দান করেছেন তদ্দ¦ারা শুধু সে একাই উপকৃত হবে না; বরং আল্লাহর অন্যান্য বান্দাদের জন্যও তা ব্যয় করবে এবং তাদেরও উপকার করবে।

সুতরাং এর পরিধি যে অতি ব্যাপক এবং আল্লাহর বান্দাদের সেবা ও সাহায্য-সহায়তার সমস্ত দিকই যে এর আওতায় এসে যায়, সেকথা বলাই বাহুল্য। অন্য অভাবগ্রস্তের জন্য নিজের সম্পদ ব্যয় করা, নিজের বিদ্যা-বুদ্ধি এবং জ্ঞান ও যোগ্যতার দ্বারা তাদের সেবা করা, নিজে কষ্ট সহ্য করে তাদের কাজ করে দেয়া এবং যে সাহায্যের সে মুখাপেক্ষী, নিজের উপায়-উপকরণের মাধ্যমে তা করে দেয়া এ সবকিছুই দান ও বদান্যতার শাখা-প্রশাখা বিশেষ।

কোরআন মাজীদ একে মৌলিক সৎকর্ম সাব্যস্তক্রমে বিভিন্ন শিরোনামে এর প্রতি তাকীদ দিয়েছে। সূরা বাকারার প্রথম রুকূতে (যে অংশকে কোরআনের মুখবন্ধ বলাই যথার্থ) কোরআনী হেদায়াতে কল্যাণপ্রাপ্ত দলের মৌলিক যেসব গুণাবলী উল্লেখ করেছে, তার একটি হল দান ও বদান্যতা। বলা হয়েছে, ‘আর আমি তাদের যা কিছু দান করেছি, তা থেকে তারা (আমার রাহে অন্যান্য বান্দাদের জন্যও) ব্যয় করে।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ৩)।

তাফসীরবিদগণ লিখেছেন, অর্থ-সম্পদ ও বিত্ত-বৈভব ছাড়াও আল্লাহ প্রদত্ত যে শক্তি-সামর্থ্য, শ্রম ও যোগ্যতা প্রভৃতি আল্লাহ তায়ালার বান্দাদের উপকারার্থে ব্যয় করা হবে, তা সবই এর অন্তর্ভুক্ত। অতঃপর এর সূরারই শেষ ভাগে এর জায়গায় বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, আমি যা কিছু তোমাদের দান করেছি, তা থেকে (আমার রাহে, অন্যদের জন্যও) ব্যয় কর (কেয়ামতের সেদিন আসার পূর্বে, যাতে না থাকবে কোনো বেচা-কেনা, না কোনো বন্ধুর বন্ধুত্ব, নাই বা সেদিন কারও কোনো সুপারিশ কাজে লাগবে।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৫৪)।

এরই তিন রুকু পর এ সূরা বাকারাতেই আল্লাহর রাহে নিজের ধন-দৌলত, শক্তি-সামর্থ্য ব্যয় করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। এর উপকারিতা ও সওয়াব সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আর যেসব উত্তম বস্তু-সামগ্রী (আল্লাহর বান্দাদের জন্য) তোমরা ব্যয় করবে, তার লাভ ও সওয়াব তোমাদের কাছেই পৌঁছাবে। বস্তুত তোমাদের ব্যয় আল্লাহর ওয়াস্তেই হওয়া উচিত। আর যেসব উত্তম বস্তু-সামগ্রীই তোমরা আল্লাহর রাহে ব্যয় করবে তোমরা তার পরিপূর্ণ বিনিময় প্রাপ্ত হবে; তোমাদের কোনো হকই বিনষ্ট করা হবে না।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৭২)।

দু’এক আয়াত পরে আবারো ইরশাদ হয়েছে, ‘যেসব বান্দা (আল্লাহর রাহে অন্যদের জন্য) নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে রাতের বেলা ও দিনের বেলা গোপনে ও প্রকাশ্যে, তাদের জন্য তাদের পরওয়াদেগারের নিকট (জান্নাতে সেসব) প্রতিদান রয়েছে (যা সে দয়ালু পরওয়ারদেগারের মহিমার উপযোগী)। আর (তাদের অবস্থা হবে এই যে,) না তাদের কোনো ভয়-ভীতি থাকবে, না তারা চিন্তিত হবে।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৭৪)।

আল্লাহর রাহে অন্যান্য বান্দাদের জন্য নিজেদের বস্তু-সামগ্রী ব্যয়ে উৎসাহ দান প্রসঙ্গে কোরআন আরও একটি কথা বলেছে যে, এ পথে ব্যয়কারী যতই ব্যয় করবে আল্লাহর পক্ষ থেকে এর শতগুণ তাকে দেয়া হবে। সুতরাং বলতে গেলে এ পথে ব্যয় করা অত্যন্ত লাভজনক এক ব্যবসা এবং এমন এক কৃষি, যা থেকে একেকটি বীজের পরিবর্তে কৃষক শতশত এমনকি হাজার দানা লাভ করবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
মনিরুল ইসলাম ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:৩০ এএম says : 0
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দানশীলতা, উদারতা ও বদান্যতায় ছিলেন সর্বোচ্চ উদাহরণ। জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কিছু চাওয়া হলে তিনি না বলতেন না।”
Total Reply(0)
তানিম আশরাফ ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:৩১ এএম says : 0
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মাঝে অধিকতর দানশীল। তিনি রমজান মাসে অধিক দান করতেন যখন জিবরাইল তাঁর নিকট ওহি নিয়ে আসতেন, তাঁকে কোরআন শিক্ষা দিতেন। নিঃসন্দেহে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুক্ত বায়ুর চেয়ে অধিক দানশীল ছিলেন।
Total Reply(0)
তাসলিমা বেগম ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:৩২ এএম says : 0
দানশীলতা আল্লাহ তা’আলার নিয়ামত,আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে দান খায়রাত করার সুযোগ করে দেন,এবং আল্লাহ্‌ তা’আলা যার কল্যাণ চান তাকে ভালো কাজ করার জন্য তৌফিক দেন।
Total Reply(0)
জিন্নাতারা ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:৩২ এএম says : 0
বল, ‘নিশ্চয় আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিযিক প্রশস্ত করেন এবং সঙ্কুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিযিকদাতা’। (সূরা সাবা’আয়াতঃ ৩৯)
Total Reply(0)
মামুন ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:৩২ এএম says : 0
আল্লাহ তা'আলা যে বান্দাহকে ধন-সম্পদ ও ইলম (জ্ঞান) দিয়েছেন, আর সে এই ক্ষেত্রে তার প্রভুকে ভয় করে, এর সাহায্যে আত্মীয়দের সাথে সৌজন্যমূলক ব্যবহার করে এবং এতে আল্লাহ তা'আলারও হক আছে বলে সে জানে, সেই বান্দার মর্যাদা সর্বোচ্চ।
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:৩৩ এএম says : 0
ইসলাম কত মহান জীবন ব্যবস্থা। আল্লাজ সবাইকে হেদায়েত দান করুক।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন