শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

দৌলতপুরে পানিবন্দি ১০ হাজার পরিবার

দুর্ভোগ চরমে, ত্রাণ পৌঁছায়নি

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে পদ্মার পানি বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করেছে। এদিকে হঠাৎ পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের ৩৭ গ্রামের ১০ হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ৩ সহস্রাধিক পরিবারের বাড়িঘরের মধ্যে পানি ঢুকেছে।

বন্যায় চরাঞ্চলের প্রায় ১৫শ’ হেক্টর জমির মাষকলাইসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে। ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বন্যাকবলিত অসহায় মানুষ। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে অসংখ্য মানুষ পানিবন্দি থাকলেও তাদের মাঝে এখনও সরকারি বা বেসরকারি কোন ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহ ধরে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। ভারতের ফারাক্কা হয়ে পদ্মায় পড়ছে পানি। এখন প্রতিদিন গড়ে ০.১২ সেন্টিমিটার করে পানি পাড়ছে। দু’দিন আগেও পানি বৃদ্ধির পরিমান ছিল প্রায় .২৪ সেন্টিমিটার। গতকাল শুক্রবার সকালে পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১৩.৮৬ সেন্টিমিটার। বিপদসীমা হল ১৪.২৫ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ বিপদসীমার ০.৩৯ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে পানি প্রবাহি হচ্ছে।

বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে আবাদি ফসল তলিয়ে যাওয়ার পর লোকালয়ের ঘর-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। দু’দিন আগেও যেসব এলাকা শুকনা পানিশূন্য ছিল এখন সেখানে পদ্মার পানি থৈ থৈ করছে। চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৩৭ গ্রামের প্রায় ১০হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে ঘর হতে বের হওয়ার সুযোগ হারিয়েছে। নৌকায় তাদের চলার একমাত্র অবলম্বন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের সোনাতলা, চরসোনাতলা, চল্লিশপাড়া, সউদীপাড়া. ঠাকুরপাড়া, চরপাড়া, ইনসাফনগর, চিলমারী, চরচিলমারী, মানিকেরচর, বাংলাবাজার, চরবাহিরমাদী, বাহিরমাদী, ভবনন্দদিয়াড়, আতারপাড়াসহ ৩৭ গ্রামের প্রায় ৩ হাজার পরিবারের বসতবাড়ি ও ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। দু’টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ১৪টি প্রাথমিক, ৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দু’টি মাদরাসা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরাসহ পানিবন্দি সাধারণ মানুষ পরিবার নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। উপজেলার রামকৃষ্ণপুর, চিলমারী, ফিলিপনগর ও মরিচা এই ৪ ইউনিয়নের চাষকরা জমির প্রায় ১৫শ’ মাসকলাইসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে গিয়ে প্রায় ৯ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

সোনাতলা এলাকার ঘরের ভেতর এক হাটু পানির মধ্যে বসবাসকরা জয়তুন নেছা (৬৫) নামে এক বৃদ্ধা বলেন, সে দু’দিন ধরে প্রায় না খাওয়া অবস্থায় রয়েছে। একই অভিযোগ চরসোনাতলা এলাকার জমির উদ্দিন নামে পানিবন্দি এক ব্যক্তির। পরিবারের লোকজন নিয়ে খুব কষ্টে আছি। সেই সাথে পোকা মাকড়ের ভয় ও আতঙ্কও রয়েছে।

ভাগজোত এলাকার কৃষক কাবিল হোসেন জানান, বন্যার পানিতে তার ৮ বিঘা জমির মাস কলাই ডুবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফিলিপনগর গ্রামের কৃষক মাহবুবুর রহমান জানান, পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় তাদের প্রায় ৪০ বিঘা জমির মাষকলাই পানিতে তলিয়ে গেছে।

রামকৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল জানান, তার ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ২৪টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। ২ হাজারেরও বেশি বাড়ি ও ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে।
দৌলতপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সাইদুর রহমান বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী প্রস্তুত রয়েছে। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের এমপি অ্যাডভোকেট সারওয়ার জাহান বাদশা বলেন, পদ্মা নদীতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৪ ইউনিয়নের মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বহু মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন। প্রতিনিয়ত তাদের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। বন্যাকবলিত মানুষের পাশে থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে তিনি জানান। এছাড়ও তিনি চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে সেখানে বিশেষ প্রকল্প হাতে নেয়ার কথা জানান। পানিবন্দি হয়ে মানুষ যেন দুর্ভোগে না পড়েন সে জন্য বন্যা পরবর্তী সময়ে স্থায়ী রাস্তাঘাটসহ নানা উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন