শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কাওরান বাজারে ফের অভিযান

উচ্ছেদের পর দখল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

উচ্ছেদের পর আবারও দখল হয়ে গেছে রাজধানীন কাওরান বাজার থেকে সাতরাস্তার সড়কটিসহ আশেপাশের এলাকা। এতে কাওরান বাজার রেলগেট থেকে সাতরাস্তার সড়কটিতে আবারও দেখা দিচ্ছে যানজট, বাড়ছে দুর্ভোগ। উত্তর সিটির কাওরান বাজার অফিসের আশেপাশের উচ্ছেদ করা স্থানসমূহ পূর্বের অবস্থায় ফিরে গেছে। এর আগে দুই দফায় কাওরান বাজার থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত সড়ক ও এর আশেপাশের এলাকার সড়কগুলোর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এসময় উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম উপস্থিত থেকে এ উচ্ছেদের তদারকি করেছিলেন। উচ্ছেদ শেষে মেয়র সাংবাদিকদের বলেছিলেন, কাওরান বাজার ডিএনসিসি অঞ্চল-৫ অফিসের আশেপাশের সড়কগুলো সর্বোচ্চ প্রাইওরিটি দিয়ে আমরা উচ্ছেদ করেছি। এ সড়কগুলো যেন নতুন করে আর কেউ দখল করতে না পারে সেজন্য এখানে আমরা একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করবো।
মেয়রের এমন হুঁশিয়ারীকে থোড়াই কেয়ার করে অবৈধ দখলদাররা আবারও দখল করে নিয়েছে এই এলাকার সড়কগুলো। সেই আগের মত যে যার দোকান কিংবা স্থাপনা দখল করে আবার ব্যবসা শুরু করেছে। এ নিয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ইনকিলাবে সংবাদ প্রকাশের পর গতকাল সোমবার তৃতীয় দফায় এই এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে উত্তর সিটি কর্পোরেশন।
উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ার। এসময় আগের উচ্ছেদ করা জায়গায় গড়ে উঠা স্থাপনা উচ্ছেদসহ নতুন প্রায় দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।
এর আগে গত ২৪ ও ২৬ সেপ্টেম্বর দুই দফায় এ এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন উত্তর সিটি কর্পোরেশন। ২৬ সেপ্টেম্বেরের অভিযানে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে একই এলাকা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল। একই দিন তেজগাঁও রেলক্রসিং সংলগ্ন জায়গায়ও উচ্ছেদ অভিযান চলানো হয়। তবে চারদিন না যেতেই আবারও দখল হতে শুরু করে এসব জায়গা। ফলে আবারও এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানায় ডিএনসিসি। তবে চলমান অভিযানে পুরোনো দখলের পাশাপাশি নতুন কিছু অবৈধ স্থাপনাও উচ্ছেদ করা হয়েছে। এর মধ্যে কাওরান বাজারের চালের আড়তের প্রায় ৫২টি দোকান বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ২০০২-০৩ সালের দিকে অবিভক্ত সিটি কর্পোরেশন এসব দোকান অস্থায়ী ভিত্তিতে ভাড়া দিয়েছিল ইজারাদারদের কাছে। তবে ২০০৭-০৮ এ এসে সে অস্থায়ী ইজারা বাতিল করা হয়েছে। তারপর থেকেই অবৈধভাবে এখানে দোকানিরা আছেন বলে দাবি ডিএনসিসি কর্মকর্তাদের।
উচ্ছেদ অভিযানের সার্বিক দিক নিয়ে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, একটি এলাকা সম্পূর্ণরূপে উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত অন্য এলাকায় যাব না। এখানে আমরা কিছুদিন আগে উচ্ছেদ করে গেছি তারপরও দখলদারেরা আবার বসেছে। সেজন্যই আমরা আবার এসেছি। তারা যতবার বসবে আমরা ততবার উচ্ছেদ করব।
বর্তমানে এ দোকানগুলো যাদের দখলে রয়েছে তাদের কয়েকজন অভিযোগ করেন, তারা সিটি কর্পোরেশনের লোকদের নিয়মিত টাকা দিয়েই দোকান পরিচালনা করছেন। এমন প্রশ্নের জবাবে আমিনুল ইসলাম বলেন, এটা মিথ্যা। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এখানে কেউ টাকা নেয় না বা খাজনা নেওয়া হয় না। কারণ এগুলোর অস্থায়ী বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। যারা এখানে দোকান করছেন তারাও জানেন যে, তারা অবৈধভাবে দোকান করছেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ার বলেন, এবার দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখান থেকে হলিক্রস কলেজের রোড ধরে ফার্মগেট পর্যন্ত উচ্ছেদ করা হবে। যদি আবার কেউ দখল করে তাহলে আবারও তাদের উচ্ছেদ করা হবে।
এদিকে সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে রাজধানীর কাওরান বাজার, ফার্মগেট, উত্তরা, খিলক্ষেত ও মিরপুর এলাকায় একযোগে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালানা করেছে ডিএনসিসি। গতকাল দিনব্যাপী অভিযানে এসব এলাকা থেকে দেড় হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএনসিসি’র সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এসময় জরিমানা আদায় করা হয়েছে তিন লাখ ৬৮ হাজার টাকা।
কারওয়ান বাজার ছাড়াও ফার্মগেট থেকে ইন্দিরা রোড পর্যন্ত ফুটপাত ও সড়ক থেকে পাঁচ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম শফিউল আজমের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে মিরপুর-৬ নম্বর সেকশনের এ-বøকের বিভিন্ন সড়কে। এসময় উচ্ছেদ হয়েছে ৮৭টি অবৈধ স্থাপনা। ফুটপাত ও সড়কে অবৈধভাবে নির্মাণসামগ্রী রাখার অপরাধে দুই ভবন মালিককে মোট দুই লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ মিয়া এবং জুলকার নায়নের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে ডিএনসিসির অঞ্চল-১ এর উত্তরা ও খিলক্ষেত এলাকায়। উত্তরা ৯ ও ১০ নম্বর সেক্টর এবং খিলক্ষেত কাঁচা বাজারে অভিযান চালিয়ে ফুটপাত ও সড়ক থেকে সাড়ে ছয় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এসময় ট্রেড লাইসেন্স না থাকায় এবং ফুটপাতের উপর অ্যাম্বুলেন্স রাখার অপরাধে আটটি মামলার মাধ্যমে মোট এক লাখ ৪৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে ডিএনসিসির ভ্রাম্যমাণ আদালত। ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত অব্যাহত থাকবে বলে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। #

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন