বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পল্টন থানার ওসি বরখাস্ত

অনৈতিক সম্পর্কের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ফেসবুকে পরিচয়। তারপর প্রায়ই ফোনে কথা বলতেন। তরুণীর প্রয়োজন একটি চাকরি। চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েই তাকে ঢাকায় ডেকে আনেন পল্টন থানার ওসি মাহমুদুল হক। তারপর আবাসিক হোটেলে রেখে তরুণীকে ধর্ষণ করেন তিনি। তরুণীকে বিয়ের প্রতিশ্রæতি দিয়ে মাসের পর মাস শারীরিক সম্পর্ক করেছেন ওসি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিয়ে না করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন তরুণীর সঙ্গে। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরে অভিযোগ দেয়া হলে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। পরে ওই কমিটি ঘটনার সত্যতাও পেয়ে পুলিশ সদর দফতরে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পুলিশ সদর দফতরে জমা দেয়া হয়েছে। গতকাল রাতে পল্টন থানার ওসি মাহমুদুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আইজিপির দফতরে ওই নারীর করা অভিযোগ তদন্ত করেন ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের সবুজবাগ জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোনালিসা বেগম। তিনি বলেন, ওই নারীর অভিযোগের বিষয়টি আমি তদন্ত করেছি। আংশিক সত্যতা পেয়েছি। তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্কের প্রমাণ মিলেছে। আমি ৮ থেকে ১০ দিন আগে ডিএমপিতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। প্রতিবেদনটি গত বুধবার পুলিশ সদর দফতরের পাঠানো হয়েছে।

অভিযোগকারী ওই নারী সাংবাদিকদের বলেন, ওসি মাহমুদুল হক এবং আমার গ্রামের বাড়ি একই এলাকায়। তার সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল। ২০১৭ সালে চাকরি দেয়ার কথা বলে তিনি আমাকে ঢাকায় নিয়ে যান। একটি হোটেলে নিয়ে চেতনানাশক খাইয়ে আমার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক করেন। এরপর থেকে তার সঙ্গে আমার সস্পর্ক ছিল। আমাকে কলেমা পড়ে বিয়েও করেছেন। কিন্তু স্বীকৃতি দেন না। এই বিষয়টা আমি মতিঝিলের ডিসি, এডিসিসহ সবাইকে জানিয়েছি। আমি সবাইকে বলেছি, কিন্তু কেউ প্রতিকার করেননি, বিচার করেননি। বাধ্য হয়ে আইজিপির কাছে অভিযোগ করেছি।

আইজিপির কাছে করা অভিযোগে বলা হয়েছে, কলেজে পড়ালেখা করা অবস্থায় ওসি মাহমুদুলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে ফোনে কথা হতো। ২০১৭ সালের গত ২১ সেপ্টেম্বর ওসি তাকে চাকরি দেয়ার কথা বলে ঢাকায় ডেকে আনেন। ওই নারী ঢাকায় আসার পর ওসি মাহমুদুল তাকে পল্টনের ক্যাপিটাল হোটেলের একটি রুমে নিয়ে যান। হোটেলে তাকে খাবারের সঙ্গে কিছু মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। এরপর ওই নারীকে অচেতন করে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন। পরে ওই নারীর জ্ঞান ফেরার পর তিনি বিষয়টি বুঝতে পারেন। এ সময় ওসি তাকে জানান, তিনি তাকে ভালোবাসেন। তাকে বিয়ে করতে চান। স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না। অভিযোগে আরও বলা হয়, বিয়ের কথা বলে পরে ওই নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয় ওসি। গত বছরের ২০ অক্টোবর ওই নারী বুঝতে পারেন, তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন। এ সময় বিষয়টি মাহমুদুলকে জানালে তিনি বিয়ের নামে গর্ভপাত করতে বাধ্য করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়াও হয়। পরে ওই নারী বারবার বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকলে ওসি মাহমুদুল একপর্যায়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। উপায় না পেয়ে ওই নারী ওসির অফিসে যান এমনকি ওসির বাবার কাছে গিয়ে বিষয়টি জানান। এরপরও বিষয়টির সমাধান না হওয়ায় গত ১২ এপ্রিল ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেছেন। পরবর্তীতে ১ আগস্ট আইজিপি বরাবর এ লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ওসি মাহমুদুল হকের মোবাইল ফোনে কল করলেও তিনি কল ধরেননি। এ বিষয়ে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের ডিসি আনোয়ার হোসেন বলেন, অভিযোগের তদন্ত হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, ওসি মাহমুদুল হক ২০০১ সালে এসআই পদে পুলিশে যোগ দেন। তার বাড়ি নওগাঁ জেলায়। চাকরি জীবনে তিনি একটি গুরুদন্ড (বø্যাক মার্ক) এবং ২২টি লঘুদন্ডে দন্ডিত হয়েছেন। তিনি ২০১৭ সালের ২ জুলাই পল্টন থানার ওসি হিসেবে যোগ দেন। তার স্ত্রী ও এক সন্তান রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
A Samad Azad ১ অক্টোবর, ২০১৯, ১:২৯ এএম says : 0
আহারে বেচারা!! এরকম তো কথা ছিল না।একটু আরাম করতে গিয়ে আজ কি না জামেলায় পড়লো।
Total Reply(0)
Hypatia Forhad ১ অক্টোবর, ২০১৯, ১:২৯ এএম says : 0
শুধু বরখাস্ত নয় বরং আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
Total Reply(0)
Mohammad Shamsuddoha Tapos ১ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩০ এএম says : 0
এদের হাতেই নাকি আমাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব
Total Reply(0)
Muhammad Bin Boktier ১ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩০ এএম says : 0
কি কথা? বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মেয়েটির কাপড় খুলেছে ।দুই জনই দোষী ।যে মেয়ে বিয়ের আগেই বিয়ের লোভে পরে কাপড় খোলে তাকে কোন ভাবেই বিয়ে করা উচিত নয় ।কার এই রকম মেয়ে আগেও অনেক রকম প্রলোভনে অনেক বার কাপড় খুলেছে হয়তো ।
Total Reply(1)
Yourchoice51 ১ অক্টোবর, ২০১৯, ৯:২৫ এএম says : 4
বিয়ের আগে চাকুরী কিংবা অন্য কোনো প্রলোভনে পড়ে যে কাপড় খুলে আর যে খোলায়; দুজনেরই যথোপুযুক্ত সাজা হওয়া দরকার। শুধু একজনের সাজা হলে এরকম ঘটনা চলতেই থাকবে।
Rubel Hossain ১ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩০ এএম says : 0
শুধু বরখাস্ত কেন ? জামোয়ার টা কে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হোক
Total Reply(0)
Gulamali Azmal Azmal ১ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩০ এএম says : 0
চাকরির আর বিয়ের প্রলোভনে শুয়ে পড়লো? শোয়ার আগে তো প্রলোভনে চোখ চকচক করে উঠলো! দোষ কার?
Total Reply(1)
Yourchoice51 ১ অক্টোবর, ২০১৯, ৯:১৯ এএম says : 4
হক কথা বলেছেন ভাই; এদের দুজনেরই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।
Sydul Hoque Sayed Sydul ১ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩১ এএম says : 0
একজন আইনের লোক হয়েও বেয়াইনিভাবে কাউকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বারবার শারীরিক সম্পর্ক করা ও জোরপূর্বক গর্ভপাত করানোর জন্য তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি
Total Reply(0)
Nannu chowhan ১ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:০১ এএম says : 0
Shodhu borkhasto noy eai rokkhok eakhon bokkhok,take bicharer aowtai ene shorbocho shastir bebosta kora houk,karon shodhu chakuri haraile eder moto ghusher takar malikder kisu jai ashena...
Total Reply(0)
দেলোয়ার হোসেন ১ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:৩৩ এএম says : 0
Both are guilty
Total Reply(0)
ahammad ১ অক্টোবর, ২০১৯, ১১:৫৬ এএম says : 0
শুধু বরখাস্ত করে বা আই ওয়াশ করে লাভ কি?? এদেকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি হওয়া উচিত। উপযুক্ত সস্তি না হওয়ার কারনেই ধষ্যণ মহামারী আকার ধারণ করেছে।
Total Reply(0)
আকাশ ১১ অক্টোবর, ২০১৯, ৬:৪৭ পিএম says : 0
Both are guilty
Total Reply(0)
আকাশ ১১ অক্টোবর, ২০১৯, ৬:৪৭ পিএম says : 0
Both are guilty
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন