বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ফারাক্কা দিয়ে হু হু করে আসছে পানি

ভাসছে বিভিন্ন অঞ্চল পাউবো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ভারতের উজান থেকে প্রবল বেগে আসা পানির কারণে গতকাল মঙ্গলবার বিপদসীমা ছাড়িয়ে গেলো গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীর ভাটি অঞ্চল। ভারত বন্যামুক্ত থাকতে নিজ স্বার্থেই গঙ্গায় ফারাক্কা বাঁধের বাংলাদেশের দিকে ১০৯টি গেটের সবকটিই খুলে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে ফারাক্কা বাঁধের সবকটি গেট-স্পিলওয়ে দিয়ে পুরোদমে পানি ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম জানায়।

অথচ কয়েক সপ্তাহ যাবৎ রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও আশপাশ অঞ্চলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে- এমন কোন বৃষ্টিই নেই। ফারাক্কার পানি একযোগে হঠাৎ ছেড়ে না দেয়া হলে এ ধরনের অকাল বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না বলে বন্যার অতীত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিরাও জানান।

গঙ্গার উজানের অববাহিকায় বিহার ও মধ্য-ভারতে প্রবল বন্যার পানির সঙ্গে ফারাক্কা বাঁধের ছেড়ে দেয়া ঢল-বানের পানি বাংলাদেশের দিকে হু হু করে ধেয়ে আসছে। আর ভাসছে একের পর এক পদ্মা ও এর সাথে যুক্ত নদ-নদী পাড়ের বিভিন্ন অঞ্চল। এদিকে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতিতে মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়ে গতকাল এক অফিস আদেশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট এলাকাসমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটিছাঁটা বাতিল করা হয়েছে। পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল জানায়, উজানের প্রবাহ বেড়ে গিয়ে গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানির প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। গঙ্গা নদীর পানির সমতল গতকাল বিকেল পর্যন্ত আরও বৃদ্ধি পেয়ে রাজশাহী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আর, পাংখা ও রাজশাহী এই দুই পয়েন্টে বিপদসীমার যথাক্রমে ৩৫ ও ৪১ সে.মি. নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

গঙ্গার ভাটিতে পদ্মা নদীর পানি আরও বেড়ে গেছে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে বিপদসীমার ৯ সে.মি. ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে সকাল পর্যন্ত পদ্মার সুরেশ^র ও ভাগ্যকুল পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপরে থাকলেও বিকেলে তা হ্রাস পেয়ে যথাক্রমে ১০ ও ৩৬ সে.মি. নিচে দিয়ে প্রবাহিত হয়। গঙ্গার প্রবেশ মুখে রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানির বিপদসীমা হচ্ছে ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। গতকাল বিকেলে পানির প্রবাহ সমতল ছিল সেখানে ১৮ দশমিক ০৯ মিটার।

এছাড়া গড়াই নদী কামারখালী পয়েন্টে বিপদসীমার ৬ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর গড়াই রেলব্রিজ পয়েন্টে ৩৭ সে.মি. নিচে রয়েছে। রাজশাহী অঞ্চলের চাপাই নবাবগঞ্জে মহানন্দা নদীর পানি আরও বেড়ে গিয়ে গতকাল বিকেল পর্যন্ত বিপদসীমার ২৯ সে.মি. নিচে পৌঁছে গেছে।

পাউবো’র সর্বশেষ পূর্বাভাসে জানা গেছে, গঙ্গা-পদ্মা নদীসমূহের পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ৭২ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের নদ-নদীসমূহের ৯৩টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে বিগত ২৪ ঘণ্টায় ৭৪টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি এবং ১৮টিতে হ্রাস পায়।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে ভারতের বিহার প্রদেশে অতি ভারী বর্ষণসহ অনেক অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। যা চলতি অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
উজানে অতিবৃষ্টির প্রভাবে গঙ্গা-পদ্মা নদীর বিপদসীমা অতিক্রমের কারণে চলতি সপ্তাহে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও মাগুরা জেলার কতিপয় স্থানে মাঝারি মাত্রার স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। ভাটিতে পদ্মা নদী সংলগ্ন দেশের মধ্যাঞ্চলে মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও শরীয়তপুর জেলাসমূহের নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

এদিকে পাউবো’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল সম্পর্কিত গতকাল দেয়া এক অফিস আদেশে বলা হয়, পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে পাউবো’র রাজশাহী, ফরিদপুর জোনের আওতাধীন সকল দপ্তর এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় অঞ্চলের অধীন ঢাকা, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ এবং কুমিল্লা জোনের অধীন চাঁদপুর, লক্ষীপুরসহ পদ্মা নদীর প্রবাহিত এলাকাসমূহে পাউবো’র অবকাঠামোসহ জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি রক্ষাকল্পে বোর্ডের মাঠ পর্যায়ের ওইসব অঞ্চলের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বাতিল করা হলো। এ অবস্থায় বোর্ডের সংশ্লিষ্ট এলাকাসমূহে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বন্যাজনিত সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় স্ব স্ব কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে সদাপ্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
দীনমজুর কহে ২ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:৪৩ এএম says : 0
হু হু করে ধেয়ে আসছে পানি ।ভাংগন কবলিত তেতুঁলিয়া নদির তীরবর্তি ধুলিয়া বাসির বুকটা দুরু দুরু করছে।নদীর খরস্রোতে ভাংগন আর ও তিব্র থেকে তিব্রতর হবে ।ইতি পুর্বে দুই শতাধিকের ও বেশি পরিবার মাথাগোজার ঠাইটুকু হারিয়ে ফেলেছে ।আজ তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। এই ফারাক্কা থেকে আসা পানি তেতূঁলিয়া নদী দিয়ে সাগরে গিয়ে পড়বে।ভাংগন তিব্রতা আর ও বেশী দেখা দেবে।এদের দেখার কি কেউ নেই??
Total Reply(0)
Neel ২ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:৫৫ এএম says : 0
এগুলো বন্ধুত্বে নিদর্শন
Total Reply(0)
Hossni Mubarak ২ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:৫৬ এএম says : 0
a ar notun ki, tara to ta e kore asse
Total Reply(0)
LIAQUAT ALI ২ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:৫৬ এএম says : 0
kisu bolar nai, bolle e abar desh birodi hoye jete pari
Total Reply(0)
Nazrul Islam ২ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:৫৭ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুক।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন