বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

পুরো চীনেই এখন শহুরে পরিবেশ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ অক্টোবর, ২০১৯, ৩:৪৪ পিএম

রাজতান্ত্রিক শাসনের শিকড় উপড়ে ফেলে ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর পিপল’স রিপাবলিক অব চায়না বা প্রজাতান্ত্রিক চীন প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর এর কমিউনিস্ট পার্টির হাত ধরে একে একে ৭০ বছর পার করেছে সমাজতান্ত্রিক দেশটি। দেশ ও জাতি হিসেবে নিজেদের যে অর্জন ও সাফল্য ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর তারই উদযাপন করছে তারা।

বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে বিশাল আয়োজনের মধ্যদিয়ে আজ যে চীনকে বিশ্ব দেখছে তা ৭০ বছর আগের চীন থেকে একেবারেই ভিন্ন। বিশাল এই সময়জুড়ে দেশটির নাগরিক জীবন, অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা- সব ক্ষেত্রেই ঘটেছে আমূল পরিবর্তন। এখানে সেসব পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দিক উল্লেখ করা হল-
নাগরিক জীবন : ৭০ বছর আগে চীনা জনগণের বড় অংশই গ্রামে বাস করত। শহরে বাস করত মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ। ২০১৯ সালে এসে চীন এখন পুরোপুরি শহুরে। অন্তত ছয়টা মেগাসিটি। প্রতিটিতে ১ কোটি বা তার বেশি মানুষের বাস। জনসংখ্যার ৬০ ভাগই শহরে বাস করছে।

১০০’র বেশি শহরের প্রতিটিতে বাস করে ১০ লক্ষাধিক মানুষ। গত ৫০ বছরে রাজধানী বেইজিংয়ের আয়তন হয়েছে তিনগুণ। উঁচু উঁচু ভবনের চমকে পুরো ভূখন্ডের চেহারাই পাল্টে গেছে। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনগুলোর পাঁচটিই এখানে। নির্মাণযজ্ঞের বহরে সবার চেয়ে এগিয়ে তারাই। বিশ্বের মোট সিমেন্টের প্রায় অর্ধেকই ব্যবহার করে চীনারা।
বিদেশ ভ্রমণ : ১৯৪৯ সালে চীনের অধিকাংশ নাগরিক বিদেশ ভ্রমণের কথা কল্পনাও করতেন না। সেই চীনারা এখন প্রতি ঘণ্টায় ১৯ হাজারবার বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছেন।
এই ৭০ বছর পর চীন নিজেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত করেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বিশ্বে এখন শীর্ষে শি জিনপিংয়ের দেশ।
গাড়িঘোড়া ও অন্যান্য : ১৯৪৯ সালে মাত্র ৫০ হাজার গাড়ি ছিল চীনে। ২০১৯ সালে সেই সংখ্যা ৪০ কোটি ৯০ লাখ। ২০১৮ সালে মাত্র এক বছরেই যোগ হয় ৩ কোটি ২০ লাখ গাড়ি। স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসায় বিশ্বকে টেক্কা দিচ্ছে চীন। বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি হাসপাতাল দেশটিতে।

খেতাব ও স্বীকৃতি : সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে উঁচু, সবচেয়ে লম্বা, সর্বোচ্চ গতি- এসব খেতাব ও স্বীকৃতির সবগুলোই এখন চীনের দখলে। বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ চীন।
এরপর সবচেয়ে বড় সেতু (ম্যাকাও-ঝুহাই সেতু), সর্বোচ্চ সেতু (গুইঝু সেতু), সর্বোচ্চ গতির রেল নেটওয়ার্ক, সর্বোচ্চ অ্যাকুরিয়াম ও সবচেয়ে লম্বা প্রাচীরের মালিক এই দেশটিই। এছাড়া বিশ্বের বৃহত্তম বাজার, সবচেয়ে বেশি তামাক সেবনকারী দেশের তকমা এর। ধনীর সংখ্যার দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরই এর স্থান।
২০১৬ সালে মার্কিন বিলিয়নিয়ার ছিল ৫৬৩। ওই বছর চীনে বিলিয়নিয়ার ৩১৮। কিন্তু পরের বছরই এই সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের যেখানে ৫৮৫ চীনের সেখানে এক লাফে ৪৭৫। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই এদিক থেকে মার্কিনিদের ছাড়িয়ে যাবে চীনারা।

কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র : কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান মাও সেতুংয়ের হাত ধরে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয়। কিন্তু মাওয়ের শাসনামল ছিল বিশৃঙ্খলাপূর্ণ।
এক্ষেত্রে কৃষি অর্থনীতি থেকে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যেতে ১৯৫৭ সালে গৃহীত ‘গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড মুভমেন্ট’ নীতির কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে এক কোটির বেশি মানুষের মৃত্যু এবং ১৯৬৬-১৯৭৬ পর্যন্ত সাংস্কৃতিক বিপ্লবকালের রাজনৈতিক অস্থিরতা উল্লেখযোগ্য।

প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বর্তমান চীন আরও কর্তৃত্ববাদী। সংবিধান বদলে ক্ষমতা বাড়িয়ে কার্যত ‘চীনের সম্রাট’ হয়ে উঠেছেন শি।

নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ বিশ্ব ব্যবস্থার ভরকেন্দ্র জার্মানি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৪৯ সালে আধুনিক চীন প্রতিষ্ঠার সময় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব জার্মানি ছাড়া আর কোনো রাষ্ট্রেরই স্বীকৃতি মেলেনি। এছাড়া প্রথম দিকে বিশ্ব থেকে এক রকম বিচ্ছিন্নই ছিল দেশটি।
শুরুটা মন্থর হলেও খুব দ্রুতই এর গতি ত্বরান্বিত হয়। ৭০ বছর পরে এসে সবদিক দিয়েই চীন এখন বিশ্বের অন্যতম বড় শক্তি। পূর্ণ শক্তি নিয়ে বেইজিং এখন নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার প্রভাবকে পরিণত হয়েছে।

চীনের অগ্রযাত্রার শুরু মাও সেতুংয়ের নেতৃত্বেই। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছে দেশটি। ১৯৪৯ সালে যাত্রা শুরুর সময় চীনের অধিকাংশ নাগরিক বিদেশ ভ্রমণের কথা কল্পনাও করতেন না। সেই চীনারা এখন প্রতি ঘণ্টায় ১৯ হাজার বার বিদেশ যাচ্ছেন।
৭০ বছরে চীন নিজেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত করেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে শীর্ষে শি জিনপিংয়ের দেশ। কমিউনিস্ট শাসনের ৭০ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের এ ক্রমপর্যায় তুলে ধরেছে এএফপি।

১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর মাও সেতুংয়ের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট পার্টির শাসন শুরু হয় চীনে। ‘যেখানেই জনপদ, সেখানেই আইনি সেবা’ স্লোগানে প্রতিষ্ঠা হয় চীনের বিচার বিভাগ। সব মানুষের ঘরে ঘরে ন্যায়বিচার পৌঁছে দেয়াই ছিল লক্ষ্য। ১৯৫০-১৯৫৩ উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ হয়।

এ যুদ্ধে দক্ষিণ কোরিয়ার সমর্থনে দাঁড়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং উত্তর কোরিয়ার পাশে দাঁড়ায় চীন। যুদ্ধে লাখো চীনা সেনার মৃত্যু হয়েছিল। ১৯৫৪ ‘গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড মুভমেন্টের’ মাধ্যমে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার দিকে পা বাড়ায় চীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন