শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তায় হুমকি - প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১৬ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৭ পিএম, ১৫ জুন, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ অন্যান্য অঞ্চলের মতো দক্ষিণ এশিয়ায়ও বিস্তৃতি লাভ করেছে, যা আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য হুমকিস্বরূপ। এরূপ বাস্তবতায় নিরাপত্তা সহযোগিতার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়াকে একটি শান্তিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ অঞ্চলের দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।  
গতকাল বুধবার দশম জাতীয় সংসদের একাদশতম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিনের (নাছিম) এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সংসদকে এসব কথা জানান। এর আগে সকাল ১০টা ৩২ মিনিটে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে দিনের কার্যসূচি শুরু হয়।  
প্রধানমন্ত্রী জানান, ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কোলকাতায় ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর দেওয়া রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে সর্বপ্রথম দক্ষিণ এশিয়ার জন্য আঞ্চলিক কূটনীতির যে ধারণা তুলে ধরেন, তাতে দক্ষিণ এশিয়াকে একটি দারিদ্র্যমুক্ত শান্তিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) বলেছিলেন, ভারতীয় উপমহাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক, এটি আমার আন্তরিক প্রত্যাশা। আমরা চাই প্রতিবেশীদের মধ্যে নিষ্ফল সংঘাতমূলক বৈরিতার চির অবসান হোক। আমাদের জাতীয় সম্পদ লক্ষ্যহীনভাবে অপচয় না করে বরং আমাদের জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে তা ব্যবহৃত হোক। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, দক্ষিণ এশিয়াকে শান্তিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসেবে পাশাপাশি বসবাস করার ক্ষেত্রে আমরা সবার সঙ্গে সহযোগিতা করব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মুক্তিযদ্ধের মূল চেতনা ছিল ক্ষুধা, দারিদ্র্য, শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ গড়া। আমরা মুক্তিযুদ্ধের এ চেতনার বিস্তৃতি ঘটিয়ে বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়াকেও একটি দারিদ্র্যমুক্ত, শান্তিপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত করতে কাজ করে যাচ্ছি।
সংসদ সদস্য বেগম নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরীর আরেক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ এখন এমন একটা বিষয়। যে কোনো বৈঠকই হোক না কেন বা দ্বিপাক্ষিক হোক বা এজেন্ডার বাইরেও আলোচনা হয়, তখন কিন্তু এ বিষয়টি অনেক সময় সামনে আসে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের নীতি রয়েছে। এই অবস্থানটা বিশ্বনেতৃবৃন্দ জানেন এবং আমার সঙ্গে বৈঠক চলাকালে বা বিভিন্ন সময়ে অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তখন বাংলাদেশ যে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী ভূমিকা নিয়েছে এবং সফলতা অর্জন করেছে সে বিষয়ে প্রায় প্রত্যেকটি দেশেই ভূয়সী প্রশংসা করেছে। এ ক্ষেত্রে সবাইকে সব রকম সহযোগিতা করার একটা প্রতিশ্রুতি আমি দিয়েছি। পাশাপাশি এটাও বলেছি, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা নিয়ে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমন করতে পারি।
আঞ্চলিক সংস্থা সার্ক ও বিমসটেকের আওতায় বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক চুক্তি বা সমাঝোতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়াকে একটি শান্তিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এসবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
তিনি বলেন, দ্বিপাক্ষিকভাবে ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাদির মাধ্যমে আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে এবং নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে পরস্পর পরস্পরকে সহায়তা করছি। এরই ধারাবাহিকতায় ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা ও কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র নাথ দেবনাথ শম্ভুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমরা যে সম্মান পাচ্ছি। এটা আমার নয়। এটা বাংলাদেশের জনগণের সম্মান।
সম্প্রতি সৌদি আরব সফরে দেশের জন্য কী কী সাফল্য বয়ে এনেছেনÑহুইপ শহিদুজ্জামান সরকারের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মাননীয় স্পিকার, প্রশ্নটা ছিল জাপান সফর নিয়ে। কিন্তু মাননীয় প্রশ্নকর্তা সংসদ সদস্য চলে গেছেন সউদী আরবে। আমি ওনাকে বলব, তিনি যদি আমাকে একটি লিখিত প্রশ্ন দেন তাহলে আগামী সপ্তাহে আমি যখন আবার প্রশ্নোত্তর দেব, তখন সউদী আরব নিয়ে বিস্তারিত উত্তর দেব। এখন আপাতত জাপানে আছি। জাপান নিয়েই থাকি। সউদী আরবের সফর অত্যন্ত সফল হয়েছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।
তিনি বলেন, আমি আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছি দেশের জন্য, দেশের উন্নয়ন, বিদেশে ভাবমূর্তি তুলে ধরা, বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন করা, বাংলাদেশকে একটি শান্তির দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিা করার লক্ষ্যে। সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। এই কাজের মূল্যায়নটাই আজকে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ করছেন। এ সুযোগ পেয়েছি দেশের জনগণের জন্য। কারণ তারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। সেজন্য আমি তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞ।
বেগম নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরীর আরেক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের উন্নয়ন চিন্তা ও উদ্ভাবনী উদ্যোগ এবং এর প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিক ও বিশ্ব কাঠামোয় টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নেতৃত্ব ও ধারণার বিষয়ে জি-৭ নেতৃবৃন্দের সম্যক ধারণা ও সমর্থন অর্জনের জন্য জি-৭ সম্মেলনে আমার অংশগ্রহণ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, জি-৭ আউটরিচ প্রোগ্রামে আমাদের অংশগ্রহণ ছিল অত্যন্ত সফল এবং বাংলাদেশের বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের আস্থা ও সম্মানের প্রতিফলন।
সরকারদলীয় সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক সুদ হারকে সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের মূল্য প্রতিযোগিতামূলক করার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় উচ্চ ব্যাংক সুদ হার। ব্যাংক সুদ হারকে সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে দেশের রপ্তানি মূল্যের ওপর ব্যাংক সুদ হার যাতে কোনো বিরূপ প্রভাব না ফেলে সেজন্য ৮ শতাংশ হারে প্রি এবং পোস্ট শিপমেন্ট ঋণ প্রদান অব্যাহত রাখা হয়েছে। নগদ অর্থে ও প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে রপ্তানি পণ্যের অধিক পরিমাণ কাঁচামাল আমদানির সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করা হয়েছে এবং এর সুদের হার মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ। বন্ড সুবিধাকে অধিকতর সম্প্রসারিত করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সুনিশ্চিত করার মাধ্যমে রূপকল্প ২০২১-এর বাস্তবায়ন করা। বর্তমান সরকার বিশ্বাস করে, আমাদের সার্বিক উৎপাদন বৃদ্ধি এবং নিজের চাহিদা মিটিয়ে উদ্ধৃত অংশ রপ্তানি করতে হবে, যার মাধ্যমে আমাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। যার প্রতিফলন পরিলক্ষিত হবে ব্যক্তি, পরিবার এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন তখনই সম্ভব হবে যখন নারীদের শিক্ষা ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা যাবে। এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু বলতেন, একজন নারী যদি দশটা টাকা আয় করতে পারে আঁচলে থাকে, তাহলে সমাজে তার গুরুত্ব বাড়ে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমি একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের ধারণাটা পেয়েছি।   
সরকার গৃহীত একটি বাড়ি একটি পরিবার প্রকল্পের বিস্তারিত দিক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামের পরিববারগুলোকে স্বাবলম্বী করতে এ প্রকল্প আমরা নিয়েছিলাম। সেইসঙ্গে জলাভূমির ব্যবহার, অব্যবহৃত জমিকে চাষ এবং উৎপাদনের আওতায় এনে কৃষকদের পণ্য বাজারজাতকরণের জন্যই এ প্রকল্প। যেখানে যেখানে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে, সেখানে ভালো ফল এসেছে। আমরা ‘সিলেক্ট’ (নির্ধারণ) করে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামে এ প্রকল্প করে দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে এ প্রকল্প সারাদেশেই বিস্তৃত করা হবে। দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থান ও আর্থসামাজিক উন্নয়নই এই প্রকল্পের লক্ষ্য। ধীরে ধীরে পরিধি বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনীর ইফতারে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে সশস্ত্র বাহিনীর সম্মিলিত ইফতার অনুষ্ঠান
গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা সেনানিবাসের সেনামালঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়।
এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী সেনামালঞ্চে এসে উপস্থিত হলে তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নিজামউদ্দিন আহমেদ, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান তাকে স্বাগত জানান।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীর সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ এবং উপস্থিত অতিথিবৃন্দের সাথে কুশল বিনিময় করে ইফতারে শরিক হন। তিনি দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নের অগ্রযাত্রা কামনা করে ইফতার অনুষ্ঠানের পূর্বে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন।
ইফতার অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিন্হাসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, সংসদ সদস্যগণসহ ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরিবেশকে ভালোবাসুন, বৃক্ষ রোপণ করুন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পরিবেশের প্রতি যতœবান হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বর্ষা মৌসুমে সবাইকে বৃক্ষরোপণে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মানুষের অধিকতর সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্যই আমাদের পরিবেশকে ভালোবাসতে হবে এবং রক্ষা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বুধবার বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবনে এ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষণে বর্ষাকালে সবাইকে অন্তত একটি ফলদ, একটি বনজ এবং একটি ঔষধি গাছের চারা রোপণে তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি একেএম রহমত আলী, আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুর রাজ্জাক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই কৃষক লীগের সভাপতি মো. মোতাহার হোসেন মোল্লা এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খন্দকার শামসুল হক রেজা ‘চ্যাম্পিয়ন অব দি আর্থ’ মনোনীত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে অভিনন্দন জানান।
উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সাল থেকেই কৃষক লীগ প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করে আসছে। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জেলার সেরা বৃক্ষরোপণকারীদের পুরস্কৃত করেন এবং বাংলাদেশ কৃষক লীগ নেতৃবৃন্দের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাছ আমাদের খাদ্য ও জীবনের প্রয়োজনীয় অধিকাংশ উপকরণের জোগান দেয়। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের মতো উর্বর ভূমির একটি দেশের মানুষ না খেয়ে থাকতে পারে না।
শেখ হাসিনা বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ে অধিক আক্রান্ত হওয়ায় এসব দুর্যোগের ঝুঁকি থেকে উপকূলীয় অঞ্চলকে রক্ষায় তার সরকার ব্যাপক বৃক্ষরোপণের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রক্ষায় এর উপকূলে ঝাউবন গড়ে তোলার উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে দেশে বনায়নের পরিমাণ ৭ থেকে ১৭ শতাংশ হয়েছে এবং তা ২৫ শতাংশে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ চলছে।
প্রধানমন্ত্রী সবুজ-শ্যামলিমার ঢাকা মহানগরের পুরানা বিমান বন্দর থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়ক দ্বীপগুলোর কৃষ্ণচূড়ার গাছ কাটার জন্য সব সামরিক একনায়ক বিশেষ করে জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে বলেন, উন্নয়নের নামে সামরিক একনায়কেরা সব জলাশয়, পুকুর, খাল-নর্দমা ও প্রাচীন গাছ ধ্বংস করেছে। প্রধানমন্ত্রী ৩১ বছর থেকে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পরিচালনা ও প্রকৃতির সুরক্ষায় জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কৃষক লীগকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বনায়ন কর্মসূচি জোরদার এবং নিজে গাছ লাগানো ও অন্যকে গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা দেশের অগ্রযাত্রায় কৃষক লীগের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমাদের মতো কৃষিনির্ভর দেশে কৃষক সংগঠনগুলোর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, তার সরকার কৃষি গবেষণায় গুরুত্বারোপ করায় দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। সরকার এখন মাংস উৎপাদনে নজর দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সংগঠনকে শক্তিশালী এবং কৃষি উন্নয়নে সরকারের কর্মসূচি তুলে ধরতে কৃষক লীগের প্রতি আহ্বান জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন