বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

এবার বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে শিলিগুঁড়ি যাবে ভারতের ট্রেন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৪০ এএম

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ দিয়েই যাচ্ছে ভারতকে। বিনিময়ে কি পেয়েছে তা নিয়ে হাজারো প্রশ্ন। ‘তিস্তা চুক্তি’ মুলো ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। ট্রানজিট কার্যত রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন। বাংলাদেশের ট্রানজিটসহ অনেক কিছুই ভারত পেয়েছে। ১০ বছর দিল্লি যা চেয়েছে তাই পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন দিল্লি সফরে।

এই সময় গতকাল আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গণমাধ্যম বিবিসি বাংলা ‘বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে শিলিগুঁড়ি যাবে ভারতের ট্রেন’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ইনকিলাব পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো। কলকাতা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ভেতর ঢুকে খানিকটা পথ অতিক্রম করার পরে আবার ভারতে প্রবেশ করতো। কিন্তু ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর সেটি বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ৫৫ বছর পরে সেই পথ আবার চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারত। সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যেকার চিলাহাটি-হলদিবাড়ি ব্রডগেজ রেলপথের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক খোন্দকার শহিদুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, গত ২১ সেপ্টেম্বর ওই রেলপথের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করা হয়েছে। চিলাহাটি থেকে সীমান্ত পর্যন্ত সাত কিলোমিটার রেলপথ আগামী জুন মাসের মধ্যে নির্মাণ শেষ করা হবে।

তিনি জানান, দুই দেশের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী ভারত তাদের দেশের ভেতরের রেলপথ নির্মাণ কাজ শেষ করেছে। বাংলাদেশ অংশের কাজ শেষ হলেই রেল চলাচল শুরু করা যাবে। চিলাহাটি থেকে সীমান্ত পর্যন্ত রেলপথ তৈরি করা হলে ভারত ও বাংলাদেশের মূল রেলপথের সঙ্গে সংযোগ তৈরি হবে। ট্রেন ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকে আবার ভারতে চলে যাবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, ২০১১ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় এই রেলপথের বিষয়ে একটি চুক্তি হয়। সেই চুক্তির ভিত্তিতে ভারতীয় অংশে কাজ শুরু হলেও, একটু দেরিতে শুরু হয় বাংলাদেশ অংশের কাজ।

২১ সেপ্টেম্বর উদ্বোধনের সময় ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাস বলেছেন, একসময় দার্জিলিং মেইল শিয়ালদহ থেকে ছেড়ে আসা রেল, রানাঘাট, ভেড়ামারা, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, সান্তাহার, হিলি, পার্বতীপুর, নীলফামারী, চিলাহাটি, ভারতের হলদিবাড়ি, জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়িতে চলাচল করতো। সেটার আদলেই এই পথে আবারও দুই দেশের মধ্যে রেল চালু হবে। এর ফলে কলকাতা থেকে ছেড়ে আসা একটি রেল বাংলাদেশের ভূখ-ে প্রবেশ করে খানিকটা পথ পাড়ি দিয়ে আবার ভারতে প্রবেশ করে গন্তব্যে পৌঁছাবে। এভাবে যাতায়াতের ফলে ভারতের রেলে যাত্রাপথ অন্তত ২০০ কিলোমিটার কমে যাবে। বর্তমানে শিয়ালদহ থেকে শিলিগুড়ির দূরত্ব ৫৩৭ কিলোমিটার। চিলাহাটি থেকে সীমান্ত পর্যন্ত রেলপথ তৈরি করা হলে ভারত ও বাংলাদেশের মূল রেলপথের সঙ্গে সংযোগ তৈরি হবে।

২০২০ সালের জুলাই মাস নাগাদ এই পথে রেল যোগাযোগ চালু করতে চায় দুই দেশের সরকার। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা আশা করছেন, এই রেলপথ চালু হলে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্যে সহায়ক হবে।

বাংলাদেশের কী লাভ ঃ বাংলাদেশের রেলওয়ের কর্মকর্তা খোন্দকার শহিদুল ইসলাম বলছেন, রেলপথটি বাংলাদেশ ও ভারত, উভয় দেশের রেলই ব্যবহার করবে। ভারতের রেল যেমন এই পথ ব্যবহার করে শিলিগুড়ি যাবে, তেমনি বাংলাদেশের রেলও পথটি ব্যবহার করে শিলিগুড়ি থেকে পণ্য আনা নেওয়া করতে পারবে। তিনি বলছেন, যেভাবে এখন খুলনা-কলকাতা বা কলকাতা-ঢাকা রেল যোগাযোগ রয়েছে, এটিও তেমন একটি রেল যোগাযোগ হবে।

কিন্তু এই রেলপথে বাংলাদেশের স্বার্থ একটু সুদূরপ্রসারী? মি. ইসলাম বলছেন, নেপাল ও ভুটান বাংলাদেশের মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে মালামাল পরিবহন করতে চায়। এখন সেটা সড়ক পথে করতে হচ্ছে, যার খরচও বেশি। কিন্তু এই রেলপথটি চালু হয়ে শিলিগুড়ির সঙ্গে যুক্ত হলে, আমাদের রেল পথটি ব্যবহার করে শিলিগুড়ি যেতে পারবে। ফলে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও এই পথে আমদানি রপ্তানি করা যাবে। শিলিগুড়ির সেখানকার আশেপাশের এলাকার সঙ্গও সংযোগ তৈরি হবে। যেখান থেকে পাথরসহ অনেক দ্রব্য বাংলাদেশে আমদানি হয়, ব্যবসা-বাণিজ্য হয়। রেলপথের কারণে আমাদেরও অনেক সুযোগ তৈরি হবে। ফলে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের রেল চলাচলে তারা যেমন সুবিধা পাবে, তেমনি ভারতের ভেতর দিয়ে শিলিগুড়ির সঙ্গে রেল যোগাযোগ তৈরি হওয়ায় বাংলাদেশের ব্যবসাবাণিজ্যের নতুন সুযোগ তৈরি হবে বলে তিনি বলছেন।

তিনি জানাচ্ছেন, হলদিবাড়ি থেকে চিলাহাটি আসার পর রেল যেমন আবার ভারতে চলে যেতে পারবে, তেমনি সেখান থেকে সরাসরি মোংলা বন্দরে যোগাযোগ থাকবে। ফলে মোংলায় জাহাজের পণ্য শিলিগুড়ি, সিকিম বা ভারতের উত্তর এলাকায় যেমন যেতে পারবে, তেমনি নেপাল ও ভুটানও বন্দর ব্যবহার করে আমদানি করতে পারবে। এখানে থাকা সার্কের দেশগুলো এই রেলপথ ব্যবহার করে আমদানি-রপ্তানিতে মোংলা বন্দর ব্যবহার করতে পারবে, যার ফলে আর্থিক লাভ হবে বাংলাদেশের। বলছেন মি. ইসলাম।

পণ্যবাহী নাকি যাত্রীবাহী ঃ কর্মকর্তারা বলছেন, কোন প্রক্রিয়ায়, কী ধরণের রেল চলাচল করবে, সেটা চূড়ান্ত হবে আরো আলোচনার পরে। আপাতত পণ্যবাহী রেল যোগাযোগের বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। খোন্দকার শহিদুল ইসলাম বলছেন, ভারতীয় রেল ও বাংলাদেশের রেলের মধ্যে কি ধরণের ট্রাফিক হবে, সেটা নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।
২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে এই নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। অর্থাৎ জুলাই মাস থেকে রেল চলাচল শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা।

মি. ইসলাম বলছেন, পটুয়াখালী পায়রা বন্দরের সঙ্গেও রেল যোগাযোগ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। পদ্মা ব্রিজ হয়ে গেলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রেলে সংযোগ তৈরি হবে। ভবিষ্যতে এই রেলের সঙ্গে পায়রা বন্দর সংযুক্ত করার আশাও তারা করছেন। তুলনামূলক সস্তা ও নিরাপদ বাহন হওয়ায় অনেক মানুষ ট্রেনে ভ্রমণ করবে।

বন্ধ রেলপথ পুনরায় চালু ঃ বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক খোন্দকার শহিদুল ইসলাম বলছেন, পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে থাকা অন্য রেলপথগুলোও চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে দুই দেশের সরকারের। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাতটি রেল সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে এখন তিনটি চালু রয়েছে। বুড়িমারি-বাংলাবান্ধা, সিলেটের শাহবাজপুরের কুলাউড়া-মহিসাসন, ফেনী থেকে বেলুনিয়া রেলপথ ভারতের ঋণ সহায়তায় আর আগরতলা-আখাউড়া রেলপথ ভারতের অর্থায়নে নির্মাণ কাজ চলছে।

ভারত আশা করছে, আগরতলা থেকে আখাউড়ার মধ্যে পাঁচ কিলোমিটার রেলপথ সংযোগ তৈরি করা গেলে, আগরতলা থেকে কলকাতায় সরাসরি রেল যোগাযোগ চালু করা যাবে।
রেল পথ নির্মাণের খরচ ঃ নীলফামারীর জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, চিলাহাটি রেলস্টেশন থেকে সীমান্ত পর্যন্ত ৬ দশমিক ৭২৪ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণে সরকারের ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৮০ কোটি ১৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। তবে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এই ব্যয়ের পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
abdul gani ৪ অক্টোবর, ২০১৯, ৮:৩১ এএম says : 0
সবকিছু দিতে দিতে এক সময় দেশটাই নাকি ওরা দাবি করে এটা ভেবেই খারাপ লাগে।আমরা কি পেয়েছি ওদের কাছে? এতকিছু দেওয়ার পরও সওমান্তে হত্যা প্রতিনিয়ত চলছেই। এই কি বন্ধুত্বের প্রাপ্য?
Total Reply(0)
Amir ৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:৪৯ এএম says : 0
বাংলাদেশের স্বার্থ একটু সুদূরপ্রসারী---কোন কারণে (যুদ্ধ বা অন্য কিছু) বাংলাদেশের ট্রেন ভারতে ঢুকতে না পারলে তখন ভুটান নেপালে রপ্তানির কি হবে?বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য তখন পুরন হবে কি ভাবে?অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপ ও উড়িয়ে দেওয়া যায় না!
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন