রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সেলিম প্রধানের গাড়িতে সংসদের স্টিকার!

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫২ এএম

বাংলাদেশে অনলাইন ক্যাসিনো হোতা সেলিম প্রধানকে জিজ্ঞাসাবাদে নতুন নতুন তথ্য দিতে শুরু করেছেন তিনি। বাংলাদেশে আসলে সংসদের স্টিকারযুক্ত গাড়িতে চলাফেরা করতেন এই ক্যাসিনো হোতা। যেখানেই যেতেন থাকতো ভিভিআইপি প্রটোকল। বিদেশেও করেছেন অনেক সম্পদ। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে অনেকে বিদেশে গিয়েও তার রিসোর্টে সময় কাটিয়েছেন। নানা ধরণের সুযোগ-সুবিধাও নিয়েছেন তার কাছ থেকে। র‌্যাব ইতোমধ্যে কয়েকটি স্টিকারযুক্ত গাড়িও জব্দ করেছে। এছাড়া কাদের সহায়তায় তিনি সংসদের লোগো সংশ্লিষ্ট স্টিকার পেয়েছেন, কারা তাকে মদদ দিয়েছেÑ নেপথ্যের সেসব বিষয়ও এখন অনুসন্ধান করছে র‌্যাব। সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব বিষয় জানা গেছে।

এদিকে, গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক আর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপণ ভূঁইয়ার বাসায় অভিযান চালানোর পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত গেলেও এতদিনেও তাদের দুই ভাইকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তারা আদৌ দেশে আছেন নাকি বিদেশে পালিয়ে গেছে সেই প্রশ্নও এখন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে। একইভাবে ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত নেপালি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের গ্রেফতারে এতদিনেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে। সবার কাছে একটিই প্রশ্নÑ হঠাৎ করে মাঝপথে থেমে যাবে কী ক্যাসিনোর নেপথ্যের হোতাদের গ্রেফতার?

অন্যদিকে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় সেলিম প্রধান ও তার দুই সহযোগীকে চার দিন করে এবং মোহামেডানের ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে ফের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার তাদেরকে পৃথক আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গাড়িতে সংসদের স্টিকার লাগিয়ে ঘুরতেন
র‌্যাব সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদের স্টিকারযুক্ত গাড়িতে ঘোরাফেরা করতেন অনলাইন ক্যাসিনোর মূল হোতা সেলিম প্রধান। তার তিনটি গাড়িতেই ছিল সংসদের স্টিকার লাগানো। সেলিম প্রধানের ৬টি গাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। র‌্যাবের অভিযানের সময় তার বাসার গ্যারেজে নিশান পেট্রোল কালো রঙের গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-২১৬৫) সংসদের স্টিকার লাগানো ছিল। সেলিম প্রধান গাড়িতে চলাচলের সময় উচ্চশব্দে হুটার বাজানো হতো। ভিভিআইপি প্রটোকলের মতো তার গাড়ি বহরের সামনে-পেছনে থাকতো ৫/৬টি গাড়ি।

র‌্যাব জানিয়েছে, জাতীয় সংসদের সদস্যরা নিজের গাড়ির জন্য একটি করে স্টিকার পেয়ে থাকেন, যা তাদের গাড়িতে লাগাতে পারেন। সেলিম প্রধান সংসদ সদস্য না হয়েও কীভাবে সেই স্টিকার পেতেনÑ সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

সেলিম প্রধান দীর্ঘদিন থাইল্যান্ডে বসবাস করেছেন। সেখানে তার বাড়ি-গাড়ি ও বিপুল অর্থ সম্পদ রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে প্রভাবশালী ব্যক্তি, রাজনীতিক ও আমলারা থাইল্যান্ডে গেলে সেলিম তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা করতেন। এভাবেই দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। এরপর তিনি দেশে ক্যাসিনো ও স্পা ব্যবসার পথ সুগম করেন। জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, থাইল্যান্ডে তার একাধিক অ্যাপার্টমেন্ট ভবন রয়েছে। পাতায়া শহরেও ‘প্রধান স্পা’ নামে একাধিক বিউটি সেন্টার রয়েছে তার।

র‌্যাবের পরিচালক ( মিডিয়া) ও র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক ও সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, অনলাইন ক্যাসিনোর মাধ্যমে মানি লন্ডারিং হয়েছে। এই ব্যবসার সঙ্গে বিদেশি নাগরিকদেরও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। প্রাথসিকভাবে সেলিম প্রধান তা স্বীকারও করেছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। তদন্তে আরও বিস্তারিত জানা যাবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, সেলিম প্রধান জাতীয় সংসদের স্টিকারযুক্ত গাড়িতে ঘুরতেন সে ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে সেলিমের গাড়ির চালকরা।

র‌্যাব সূত্র জানিয়েছেন, গ্রেফতারের পর সেলিম প্রধান ও তার দুই মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়। গতকাল দুই মামলায় তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৪ দিনের রিমান্ডে মঞ্জুর করে। আজ তাদেরকে কারাগার থেকে র‌্যাবের হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হবে। রিমান্ডে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।

দুই সহযোগীসহ সেলিম প্রধানের ৪ দিনের রিমান্ড
আদালত সূত্র জানায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলায় সেলিম প্রধান ও তার দুই সহযোগীর চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মইনুল ইসলাম এই আদেশ দেন। রিমান্ডে অন্য দু’জন হলেন সেলিম প্রধানের সহযোগী আক্তারুজ্জামান ও রোকন।

এর আগে, গত বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ধীমান চন্দ্র মন্ডলের আদালতে সেলিম প্রধানকে গ্রেফতার দেখানো ও সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন গুলশান থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আমিনুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে গুলশান থানার মানি লন্ডারিং ও মাদক আইনের মামলার এজাহার গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গতকাল দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। এছাড়া, রিমান্ড শুনানির জন্যও গতকাল দিন ধার্য করা হয়েছিল। বুধবার গুলশান থানায় মানি লন্ডারিং আইন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে র‌্যাব। এদিকে, সেলিম প্রধানের হেফাজত থেকে দু’টি হরিণের চামড়া উদ্ধারের ঘটনায় তাকে ৬ মাসের কারাদ- দিয়েছেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এই দ-ে তিনি এখন কারাগারে রয়েছেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থাই এয়ারওয়েজের ব্যাংককগামী একটি ফ্লাইট থেকে তাকে আটক করে র‌্যাব।

তৃতীয় দফায় ফের দুই দিনের রিমান্ডে লোকমান
এদিকে, মাদক আইনে করা মামলায় তৃতীয় দফায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের ডিরেক্টর ইনচার্জ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক (বিসিবি) লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার দুই দিনের রিমান্ড শেষে তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় ফের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার এসআই কামরুল ইসলাম। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমান দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আশেক ইমাম দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনছারী তার বিরুদ্ধে দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় র‌্যাব বাদী হয়ে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করে। এরপর তাকে তেজগাঁও থানায় হস্তান্তর করা হয়। এর আগে ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে তেজগাঁওয়ের মনিপুরী পাড়ার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়।

আর যারা রিমান্ডে আছেন
যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া দুই মামলায় ১০ দিন , যুবলীগ নেতা ঠিকাদার জিকে শামীম দুই মামলায় ৯ দিন, কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ ৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। র‌্যাব তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
দীনমজুর কহে ৪ অক্টোবর, ২০১৯, ৭:৫৪ এএম says : 0
এদের দমন করার হিম্মত রাখে এমন শক্তি একমাত্র দেশ প্রেমিক সরকারেরই আছে।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন