বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

টিসিবির অনীহা

সারা বছর পণ্য বিক্রি চান ডিলাররা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশিরভাগ পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হলেও দামে সবাইকে ছাড়িয়েছে পেঁয়াজ। রপ্তানি বন্ধে ভারতের সিদ্ধান্তের পর এক লাফে সেঞ্চুরি পার করে পণ্যটি। বাজারে অস্থিরতা সামাল দিতে খোলাবাজারে ৪৫ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।
শুধু পেঁয়াজই নয় আরও টিসিবির আরও পণ্য সারাবছরই বিক্রি করতে চান ডিলাররা। তবে বছরজুড়ে নিত্যপণ্য বিক্রিতে টিসিবি’র অনীহা রয়েছে। বর্তমানে সংস্থাটি রোজার মাসে আর জরুরি ভিত্তিতে কিছু পণ্য বিক্রি করে।
এদিকে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতার মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে ট্রাকসেলে পেঁয়াজের বিক্রি চললেও তা চাহিদার কয়েক শতাংশও নয়। তার ওপর নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত স্থানে ট্রাকসেলের দেখা মিলছে না। বাজারের থেকে কম মূল্যে পেঁয়াজ কিনতে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েও অনেককে খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে। এখন পেঁয়াজ বিক্রি করলেও বছরে দুই ঈদকে ঘিরে তেল, চিনি, ডাল ও ছোলা বিক্রি করেন টিসিবির নির্ধারিত ডিলাররা। তবে এখন ছোলা বাদে বাকিগুলো বিক্রি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সারাবছরই এসব পণ্য বিক্রির সুযোগ চান ডিলাররা। আর বর্তমানে আলোচনায় থাকা পেঁয়াজের পরিমাণও বাড়িয়ে দেয়ার দাবি তাদের।
টিসিবি বলছে, অতীত অভিজ্ঞতা থেকেই এখন রাজধানীর ৩৫টি ট্রাকসেলে ৪শ’ কেজি করে পেঁয়াজ দেয়া হচ্ছে ডিলারদের। আর সারাবছর অন্যান্য পণ্য বিক্রির সুযোগ দেয়া হলে খোলাবাজারে বিক্রি না করে অনেকে দোকানিদের কাছে বেচে দেয়ার শঙ্কা আছে। যে কারণে সারাবছর নয়, ব্যবসায়ীরা যখন বাজার অস্থিতিশীল করেন তখন বাজার স্বাভাবিক রাখতেই এগিয়ে আসতে চায় টিসিবি।
বাংলাদেশ টিসিবি ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জুয়েল আহমেদ জানান, আমরা প্রায়ই দেখি ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে একেক পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। সেক্ষেত্রে স্বস্তির জায়গা করে দেয় টিসিবি। তাই শুধু উপলক্ষে বা অস্থিরতা দেখা দিলেই নয়, সারাবছর পণ্য বিক্রি করার সুযোগ করা যেতে পারে। টিসিবি চাইলে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
অন্যদিকে সরকারের কাছে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ থাকলেও টিসিবি ইচ্ছা করলে প্রতিদিন ৪শ’ কেজির বদলে এক হাজার কেজি করেও পেঁয়াজ দিতে পারে বলে জানিয়েছেন একজন ডিলার। তার দাবি, ‘সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও যখন দেখি অনেকে খালি হাতে ফিরে যান তখন খারাপ লাগে। অথচ গুদামে পেঁয়াজ আছে। এ বিষয়ে কথা বললেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, টিসিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ৪শ’ কেজির জায়গায় এক হাজার কেজি পেঁয়াজও দেয়া হয় তার পরও ডিলাররা খুশি হবেন না। তাদের যদি ট্রাক ভাড়াও দিয়ে দেয়া হয় তাহলে খুশি হবে। কারণ আমরা বিগত দিনের অভিজ্ঞতা থেকেই এমনভাবে পণ্য বিক্রি করছি। বছরজুড়ে বেশি করে পণ্য দেয়া হলে তার একাংশ বাইরে বিক্রি করে দিলে কিছু করার থাকবে না।
স¤প্রতি পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করেই বেশ বেড়ে গেলে রাজধানীতে প্রথমে ১৬টি পরে ৩৫টি ট্রাকসেলে ৩৫টি স্পটে পেঁয়াজ বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয় টিসিবি। এর বাইরে চট্টগ্রামে ১০টি ও সব বিভাগীয় শহরে বিক্রি হচ্ছে টিসিবির পেঁয়াজ। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিক্রি চলবে বাজার স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত। যদিও সরকারের কড়াকড়ির ও অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আসতে শুরু করায় ইতোমধ্যে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে।
ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন ৬ হাজার টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। দেশের প্রধান পেঁয়াজ উৎপাদনকারী অঞ্চল ফরিদপুর, পাবনাসহ সারাদেশে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ৩ লাখ টন পেঁয়াজ চাষি ও ব্যবসায়ীদের কাছে মজুদ আছে। যা দিয়ে আগামী ৫০ থেকে ৫৫ দিন দেশের পেঁয়াজের চাহিদা মেটানো সম্ভব। আর এই সময়ের মধ্যে দেশে নতুন পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। ফলে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতার কোনো কারণ নেই। তবে চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজ কম থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছেন রাজধানীর গ্রাহকরা। অনেকেই বাজারের থেকে অর্ধেক দামে পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে কয়েকঘণ্টা নষ্ট করতে হচ্ছে। কারণ লাইনে থাকা দুইশ’ মানুষকে জনপ্রতি দুই কেজি করে পেঁয়াজ দেয়া হয়। তাই এরপরে সিরিয়ালে থাকলেই নিশ্চিত খালি হাতে ফিরতে হবে। যে কারণে সকাল আটটার দিকেই অনেকে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন। রাজধানীর বেশ কিছু পয়েন্টে এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে গুদাম থেকে পেঁয়াজ নিয়ে স্পটে আসতে ট্রাকগুলো নির্ধারিত সময় নয়টার অনেক পড়ে আসে বলে জানান পেঁয়াজ কিনতে আসা সাধারণ মানুষ। একথা স্বীকার করলেও গুদামে সিরিয়াল পাওয়া এবং মালামাল নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সময় নষ্ট হয় যে কারণে বিলম্বে পৌঁছতে হয় বলে জানিয়েছেন ডিলাররা।
গতকাল ফার্মগেটের খামার বাড়ি স্পটে সকাল আটটা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাহেব আলী । কিন্তু বেলা ১২টার পর আসে ট্রাক। এরমাঝে দশটার দিকে বৃষ্টি হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, পেঁয়াজ কেনার জন্য অন্য সব কাজ বাদ দিয়ে আসতে হয়। একটু কম দামে পাওয়ার জন্য এখানে আসি। কিন্তু চার থেকে পাঁচঘণ্টা পর হাতে পেঁয়াজ পেলাম। এদিকে নীলক্ষেতের নির্ধারিত জায়গায় বেলা ১১টার দিকে গিয়ে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করেও ট্রাকসেলে টিসিবির পেঁয়াজ কিনতে পারেননি বলে জানিয়েছেন জাহিদ হাসান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন