শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

উইঘুর মুসলিমদের ওপর দমনপীড়ন : সমগ্র বিশ্ব নিঃশ্চুপ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০১৯, ৪:৫৭ পিএম

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান নিজ দেশে ইসলামিক মূল্যবোধ তথা ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিকভাবে নিজের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছেন। মুসলিম বিশ্বের নানা ইস্যুতেও তাকে বিভিন্ন সময় সোচ্চার দেখা গেছে। কিন্তু চীনের উইঘুরে মুসলিমদের ওপর দেশটির সরকারের কঠিন নজরদারি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে তিনি একদমই চুপ। এ বছরের জুলাইতে বেইজিং সফর করেন তিনি। এ সময় তিনি চীনের সিল্ক রোডের পরিকল্পনার পক্ষে নিজের অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করেন। তার দেশে চীনের বিনিয়োগের প্রস্তাবও উৎসাহের সঙ্গে স্বাগত জানান।

এরদোগান যখন উইঘুরের মুসলিমদের নিয়ে কথা বলেছিলেন তার প্রায় এক যুগ পেরিয়ে গেছে। এরপর তিনি এ ইস্যু যেন বেমালুম ভুলে গেছেন।
শুধু এরদোগানই নয়, সমগ্র বিশ্বই যেন শিনজিয়াং নিয়ে একদম চুপ হয়ে গেছে। সেখানে চীন বিশ্বের অন্যতম বড় বন্দিশিবির তৈরি করেছে এবং সমগ্র এলাকাকে রেখেছে কঠিন নজরদারির আওতায়। গত দুই বছর ধরে উইঘুর মুসলিমদের রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত, ধর্মনিরপেক্ষ ও কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থক হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যাপক পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে চীন।

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর পরই দেশটির প্রধানমন্ত্রী জ্যাসিন্ডা আর্ডেন বেইজিং সফর করেন। অনেকেরই ধারণা ছিলো ওই সফরে উইঘুরদের বিষয়ে চীনকে কিছুটা হলেও চাপ দেবেন তিনি। কিন্তু সফর শেষে এরকম কিছুই ঘটেনি। কারণ কারোরই অজানা নয়। নিউজিল্যান্ডের জন্য চীন একটি বড় বাজার। দেশটি চীনে ব্যাপক পরিমাণে দুধ, মাংস ও ওয়াইন বিক্রি করে থাকে। তুরস্কের ক্ষেত্রেও বিষয়টি একইরকম। গত বছর চীন শক্তি ও যোগাযোগ খাতে উন্নয়নের জন্য তুরস্ককে ৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে। এরদোগান যখন চীন সফরে ছিলেন তখন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং চীনা স্বার্থ রক্ষায় তাকে বাহবা দিয়েছিলেন। চীনের কাছ থেকে প্রশংসিত হওয়া অনেক শাসকের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
নিজের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে চীন তার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সমালোচনাকে দমিয়ে রেখেছে। উল্টো উইঘুরে মুসলিমদের মানবাধিকার হরণ প্রসঙ্গে চীনকে সমর্থন দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বেশিরভাগ মুসলিম রাষ্ট্রই। এমনকি জাতিসংঘেও যাতে বিষয়টি আলোচনা হয় তার পথও আটকে দিয়েছে চীন। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা বিষয়ক আলোচনায়ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প উইঘুরদের নিয়ে কোনো শব্দ উচ্চারণ করেননি। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স চীনে খ্রিষ্টানদের ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে উইঘুরদের বিষয়ে খুব সামান্যই প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

চীন প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে, উইঘুরদের বিষয়ে তারা যা করছে তা ইসলামি মৌলবাদের বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধ। দেশটি উইঘুরে ওইসব প্রতিষ্ঠানকে বোর্ডিং স্কুল হিসেবে দাবি করছে। বলছে, যেসব মানুষ ওই বন্দিশিবিরে আটক রয়েছে তারা সবাই স্বেচ্ছায়ই রয়েছে সেখানে। সম্প্রতি চীন জানিয়েছে, শিংজিয়াংয়ের সকল বন্দি শিবির বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে বিশ্বব্যাপী চীনের এ দাবি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। জাতিসংঘে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, গত ৩ বছরে চীনে একটিও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেনি। এইসব শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো উইঘুরের মুসলিমদের সন্ত্রাসবাদ থেকে দূরে রাখছে ও তাদেরকে কর্মদক্ষ হিসেবে গড়ে তুলছে।
উইঘুরে চীনের আচরণ নিয়ে যারা নিন্দা জানাচ্ছেন তাদের মধ্যে অন্যতম যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প সরকার। প্রথম থেকেই চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে সক্রিয় দেশটি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ইতিমধ্যে একে শতাব্দীর বড় কলঙ্ক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তার একজন সহকারী জন সালিভান মঙ্গলবার জাতিসংঘ অধিবেশনের সাইডলাইনে বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনা দমন-পীড়ন নিয়ে কথা বলেন তিনি। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে উইঘুর ইস্যুতে কিছু বলতে দেখা যায়নি। কোনো এক অদ্ভুত কারণে তিনিও বিষয়টি এড়িয়ে চলছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের এই সীমিত পদক্ষেপের একটি বৈশ্বিক প্রভাব রয়েছে। যদি ওয়াশিংটন উইঘুরদের ওপর দমন-পীড়ন নিয়ে কিছু না করে তাহলে অন্যান্য দেশও এই ইস্যুতে চাপ বোধ করবে না। অর্থনৈতিক কারণে বেশিরভাগ দেশই চীনের বিষয়ে সাবধানে কথা বলে। ওবামা প্রশাসনের ইস্ট এশিয়ান অ্যান্ড প্যাসিফিক অ্যাফায়ার্সের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ড্যানিয়েল আর রাসেল বিষয়টি স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, অনেক সরকারই এখন চীনের এই ইস্যুতে সেলফ-সেন্সরিং করছে। বেইজিং তার নিজের স্বার্থের বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। আর তাই জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে চীন যখন তার দেশের মানবাধিকারের বিষয়ে প্রেজেন্টেশন দিলো তখন ১২০টিরও বেশি দেশ তাতে ইতিবাচক রিভিউ দিয়েছিল। বিশ্বের খুব কম দেশই রয়েছে যে মুখ ফসকেও কিছু বলে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করার ঝুঁকি নিতে চাইবে। তাই কোনো রাষ্ট্র যখন চীনের সমালোচনা করেও তখনো দেখা যায় তারা কোনো একটি দল হয়ে করছে। এবং এই সমালোচনাটাও তারা করছে যতখানি নিরাপদ থেকে সম্ভব।
(নিউ ইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
jack ali ৫ অক্টোবর, ২০১৯, ৭:২৪ পিএম says : 0
These so called muslim leaders are all hypocrite and cowards...they don't fear Allah [SWT] but they fear so called super power..i.e: russia/china...America is no more superpower any more the fear Iran [shia]. Allah [SWT] mentioned in The Qur'an that you are the best nations because you forbade the evil and enjoin the good...now all muslims is doing opposite. before we used to defeat all the superpower because they used to oppressed theirpeople as such muslim used to fight these super power and release people from the hand of the oppressed rulers. Now we muslims are the most corrupted nations on earth as such all the kafir/munafiqs are killing/raping our muslim brothers/sisters around the wordl.
Total Reply(0)
মোঃ আককাছ আলি মোল্লা ৫ অক্টোবর, ২০১৯, ৮:১২ পিএম says : 0
চিন ভারত আমেরিকা এইসব শাষকদের জন্যই।আললাহর এই বানী কোথায় সেই শাষকেরা।যাহারা আমাকে অশিকার করেছিল।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন