শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

তীব্র যানজটে স্থবির চট্টগ্রাম

প্রকাশের সময় : ১৬ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : তীব্র যানজটে স্থবির হয়ে পড়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। রাস্তায় রোজাদারদের অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। মহানগরীর প্রধান সড়কে মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত চলছে ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ। বারিকবিল্ডিং মোড় থেকে নিমতলা পর্যন্ত সড়কে চলছে সম্প্রসারণ কাজ। বিমানবন্দরমুখী দু’টি সড়ক অঘোষিত টার্মিনাল হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। ব্যস্ততম মোড়গুলোত সড়ক দখল করে বসেছে হকারের পসরা।
এ কারণে মহানগরীতে যানজট এখন স্থায়ী রূপ নিয়েছে। প্রধান প্রধান সড়কে বিশৃঙ্খলার কারণে যানজট অলিগলি পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে। রমজানে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় যানজট আরও তীব্রতর হয়েছে। যানজট নিরসনে পুলিশের পক্ষ থেকে বেশকিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। ফলে নগরবাসীর দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। সামনের দিনগুলোতে ঈদ বাজার জমে উঠার সাথে সাথে যানজট আরও তীব্রতর হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মহানগরীতে যানজট এখন স্থায়ী রূপ নিয়েছে। মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের জন্য সড়কের একাংশ দখল করা হয়েছে। দুই পাশের সরু অংশ দিয়ে চলছে যানবাহন। যানবাহনের চাপে পুরো সড়কটিতে সারাদিন তীব্র যানজট হচ্ছে। প্রধান সড়কের ওই অংশে তীব্র যানজটের কারণে শাখা সড়কগুলোতেও যানজট বিস্তৃত হচ্ছে। বহদ্দারহাট থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত আসতে কখনও কখনও এক ঘণ্টা সময় পার হয়ে যাচ্ছে। হাজার হাজার যানবাহন আটকা পড়ছে রাস্তার দুইপাশে। এর প্রভাবে ষোলশহর ২নং গেইট থেকে বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক হয়ে অক্সিজেন মোড়, বহদ্দারহাট থেকে কাপাসগোলা হয়ে চকবাজার, ২নং গেইট থেকে মিমি সুপার হয়ে প্রবর্তক মোড় পর্যন্ত তীব্র যানজট হচ্ছে।
নগরীর ব্যস্ততম বিমানবন্দর সড়কের বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে নিমতলা পর্যন্ত অংশে ডান পাশে সম্প্রসারণ কাজ চলছে। সড়ক সম্প্রসারণের জন্য বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণ চলছে। সম্প্রসারণ করা হচ্ছে কালভার্ট ও নালা-নর্দমা। এ সড়কটি এমনিতেই সরু। তার উপর সম্প্রসারণ কাজের জন্য একাংশ বন্ধ করে দেওয়ায় সড়কজুড়ে তীব্র যানজট হচ্ছে। এ অংশের যানজট বারিক বিল্ডিং থেকে আগ্রাবাদ হয়ে দেওয়ানহাট পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে। আবার কাস্টম হাউস মোড় থেকে ইপিজেড পর্যন্ত এর প্রভাবে যানজট হচ্ছে। নিমতলা থেকে এ কে খান গেইট পর্যন্ত সড়কে তীব্র জট লাগছে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
বিমানবন্দরমুখী দু’টি সড়ক এখন অঘোষিত টার্মিনাল। পতেঙ্গা ও কাটগড় এলাকায় গড়ে ওঠা বেসরকারি কন্টেইনার টার্মিনালগুলোর সারি সারি কন্টেইনার মোভার ও লং ভেহিক্যাল সড়ক দখল করে রাখা হচ্ছে। সড়কের দুইপাশে ভারী যানবাহন পার্কিং করে রাখায় যানবাহন চলাচলের জন্য যেটুকু সড়ক অবশিষ্ট থাকছে তাতে তীব্র যানজট হচ্ছে। বিমানবন্দর সড়কে ১৪ নং জেটিঘাট থেকে শুরু করে কাফকো জেটি পর্যন্ত দুইপাশে হাজার হাজার ভারী যানবাহন রাখা হচ্ছে। একই অবস্থা কাটগড় সড়কেও। পতেঙ্গা সৈকত থেকে শুরু করে কাটগড় মোড় পর্যন্ত প্রধান সড়কের দুইপাশ দখল করেছে বেসরকারি টার্মিনালের ভারী যানবাহন।
ভারী যানবাহনের চাপে কাটগড় মোড় থেকে পতেঙ্গা সৈকত পর্যন্ত সড়কের দুইপাশ ধসে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ট্রাফিক পুলিশ মাসোহারা নিয়ে বেসরকারি কন্টেইনার মালিকদের টার্মিনাল হিসাবে ব্যবহার করার জন্য ওই দু’টি সড়ক উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় প্রায় প্রতিটি সড়কে ভারী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ। এ চাপের কারণে সড়কে সকাল থেকে গভীর রাত অবধি যানজট স্থায়ী হচ্ছে। রমজানের কারণে আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ বেড়ে গেছে। এ কারণে যানজট এখন আরও তীব্রতর হচ্ছে। নগরীর বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে মাদারবাড়ি হয়ে মাঝিরঘাট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত সড়কে শত শত ট্রাক, কার্ভাড ভ্যান পার্কিং করে রাখা হয়। এ কারণে ওই সড়কটিতে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল বিঘিœত হচ্ছে।
ব্যস্ততম মোড়ের ফুটপাত এমনকি সড়ক পর্যন্ত দখল করে নিয়েছে হকারেরা। ব্যস্ততম এসব মোড়ে অঘোষিত টেম্পো, টেক্সিস্ট্যান্ড এবং রিকশার জট। ফলে এসব মোড়ে তীব্র যানজট এবং জনজট হচ্ছে। এসব মোড়পার হতে যানবাহনগুলোকে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তীব্র যানজটে আটকা পড়ে নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এসব এলাকায় হাঁটারও অবস্থা নেই।
বন্দর এলাকা ছাড়া মহানগরীতে দিনের বেলা ট্রাকসহ ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ট্রাফিক পুলিশকে বিশেষ টোকেন দেখিয়ে দিনদুপুরে ভারী যানবাহন ঢুকে পড়ছে নগরীতে। এতে করে মহানগরীর বিভিন্ন সড়কে যানজট আরও তীব্র হচ্ছে। কদমতলী মোড়ে গভীর রাত পর্যন্ত যানজট হচ্ছে। অথচ ওই এলাকায় ফ্লাইওভার চালু হওয়ার পর যানজট হওয়ার কথা নয়।
বাকি যেটুকু সড়ক অবশিষ্ট থাকছে তার একাংশে রেয়াজুদ্দিন বাজার অভিমুখী তরকারি বোঝাই ট্রাক এবং স্টেশন অভিমুখী ফলবোঝাই ট্রাক পার্কিং করা হচ্ছে। ট্রাফিক সার্জেন্টদের উপস্থিতিতেই শত শত ট্রাক রাস্তা দখল করে পার্কিং করা হচ্ছে।
সড়কে শৃঙ্খলা আনতে রমজানের আগে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয় ট্রাফিক পুলিশ। কিন্তু এর কোনটাই বাস্তবায়ন হয়নি। হকারদের সুশৃঙ্খলভাবে ফুটপাতে বসতে বলা হয়। এখন ফুটপাত ছেড়ে তারা রাস্তায় চলে এসেছে। বড় বড় মার্কেট ও বিপণি বিতানগুলোতে নিজস্ব কর্মী নিয়োগ করে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়। এ সিদ্ধান্তও এখনও কার্যকর হয়নি। ফলে মার্কেট এলাকায় বিশৃঙ্খলা অবস্থা বিরাজ করছে।
তীব্র যানজটের কারণে নগরীতে গণপরিবহনের সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সকালে অফিস শুরুর সময় এবং বিকেলে অফিস শেষে পরিবহন সংকট চরম আকার ধারণ করছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন