শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সব উৎসব সবার নয়

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ঘটনা ও প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলে ফলাফল ভিন্ন হতে বাধ্য। খোদা না করুন একজন মেয়রের নিরীহ পিতাকে যদি এলাকার মাস্তানরা কুপিয়ে হত্যা করে। পরদিন এ হত্যাকান্ডের বিজয় উল্লাস হয়, তারা মৌজ মাস্তি করে উৎসব পালন করে, আর এ দিকে মেয়র তার পিতাকে লাশকাটা ঘর থেকে ফিরিয়ে নেয়, দাফন-কাফন করে তাহলে কি এখানে দু’টি জায়গায় দু’টি ঘটনা ঘটল না? এখন যদি কেউ বলে ‘ঘটনা যার যার উৎসব সবার’, তাহলে বিষয়টি শুনতে কেমন লাগবে? কতটা যৌক্তিক হবে? আর সবার কাছেই কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে? এটা শুধু উদাহরণস্বরূপ বলা। চিন্তা করুন ভারতে হিন্দুদের যে অংশ গো-হত্যা মহাপাপ মনে করে, নিজের মাকে জবাই করা মনে করে, কোনো পর্যায়ে যদি সেসব হিন্দুকে মুসলমানরা ঈদ নামক ইবাদতের সময় বলে, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ তখন বিষয়টি শুনতে কেমন লাগবে? এমনই একটি ঘটনা মূর্তিপূজা, যা ইসলাম ধর্মে সবচেয়ে বড় গুনাহ। সনাতন ধর্মেও কোনো প্রামাণ্য উৎসে পৌত্তলিকতা বা মূর্তিপূজা নেই। এটি পরবর্তীকালে পূজারীদের তৈরি সংস্কৃতি মাত্র। যার নানা ব্যাখ্যা রয়েছে কিন্তু মূল অস্তিত্ব নেই। এখানে ইসলামের বক্তব্য স্পষ্ট। মুসলমানরা অন্য ধর্মের মানুষকে সামাজিকভাবে সহায়তা করবে। রাষ্ট্র পূজা পার্বণে নিরাপত্তা ও অন্যান্য দেখভাল করবে। মুসলিম আইনশৃঙ্খলারক্ষী বাহিনীর সদস্যরা পূজায় পাহারা পর্যন্ত দিতে পারবে। সরকারের দায়িত্ব নিরাপদে নির্বিঘ্নে সব ধর্মের মানুষের উপাসনার ব্যবস্থা করা। ধর্মস্থানের রক্ষা করা। ধর্মীয় গুরুদের হেফাজত করা। কিন্তু যে মুসলমান সে আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করতে পারবে না। মূর্তিপূজা করতে পারবে না। অন্য ধর্মের উপাসনার কোনো পর্যায়েই অংশগ্রহণ করতে পারবে না। দেবদেবীর নামে উৎসর্গকৃত প্রসাদ বা খাদ্য গ্রহণ করতে পারবে না। এসব বিষয় কুরআন-হাদিসে স্পষ্ট। কুরআন শরীফে আছে, ‘আল্লাহর সাথে শিরক করো না, নিশ্চয়ই শিরক মারাত্মক ধরনের জুলুম।’ - আল কুরআন।


অন্য জায়গায় আছে, ‘আল্লাহ তার সাথে শিরক করলে এ অপরাধ ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্য যে কোনো অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে থাকেন।’ - আল কুরআন। নবী করীম সা. বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি অন্য ধর্মের লোকদের মতো আচরণ করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আরেক হাদিসে এসেছে- ‘যে মুসলমান অন্য ধর্মের উৎসবে গিয়ে তাদের সমাবেশকে বড় করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।’ - আল হাদিস। হযরত ওমর রা. বলেছেন- ‘তোমরা মুশরিকদের উপসনালয়ে তাদের উৎসবের দিনগুলোতে প্রবেশ করো না। কারণ, সেই সময় তাদের ওপর আল্লাহর গজব নাজিল হতে থাকে।’ - বায়হাকি। নবী করীম সা. বলেছেন- ‘এক সময় আমার উম্মতের লোকেরা শিরকে লিপ্ত হবে, তাদের অনেকে মুশরিকদের সাথে মিশে যাবে।’ - তাবারানী। অন্য ধর্মের উৎসবে সামাজিকভাবে তাদের সাথে সদাচরণ, পূজা ছাড়া সাধারণ নিমন্ত্রণ খাওয়া কিংবা সৌজন্যমূলক চলাফেরা ইসলামেও আছে। তবে আল্লাহর সাথে শিরক, কবিরা গুনাহ, কোনোরূপ পাপাচার করা যাবে না। নির্দোষ সামাজিকতা ও নিষ্কলুষ অসাম্প্রদায়িকতা কিংবা মানবিক সম্প্রীতি ইসলামের চেয়ে উত্তম আর কোথায় আছে?


এবার ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম সাহেব যেভাবে নারী-পুরুষ ভক্ত ও পূজারী পরিবেষ্টিত হয়ে পূজার ঢোল বাজালেন, কেউ না চিনলে সোজা মনে করবে তিনি একজন ঢুলি। পূজায় এমন উদ্দাম অংশগ্রহণ তার ধর্মীয় বোধ-চেতনার অভাব থেকেই হয়েছে। তিনি সৌহার্দ্য, দায়িত্ব আর পূজায় অংশগ্রহণের মধ্যকার ভেদরেখা সম্পর্কে কোনো জ্ঞানই রাখেন না। তার আচরণে সচেতন মানুষ কষ্ট পেয়েছেন। যদি তিনি শুধু একজন আতিকুল ইসলাম হতেন তাহলে তেমন মাথাব্যথা ছিল না। কিন্তু পরিভাষায় বলে- মেয়র নাকি নগরপিতা, এ জন্য তার কান্ডকারখানা নাগরিকদের মাথাব্যথার কারণ হতেই পারে। রাষ্ট্র ও সরকারের দায়িত্বশীল কিংবা জনপ্রতিনিধি পূজামন্ডপ পরিদর্শনও করতে পারেন। তাই বলে মূর্তিপূজা করে ফেলা কিংবা শিরকি কথাবার্তা বলা কিছুতেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের আরো সতর্কতা ও প্রজ্ঞা নাগরিকরা আশা করতেই পারে। কিছু লোক পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাপের কাজ আল্লাহর সাথে শিরক তথা মূর্তিপূজা করবে, ইসলামের দৃষ্টিতে যা মানবহত্যার চেয়েও ছোট অপরাধ নয়। আর এ ঘটনাটির ফলে সৃষ্ট উৎসবটিকে বলা হবে এটি মুসলমানদেরও উৎসব। হাদিস শরীফে এসেছে- প্রকৃত ঈমানের অবস্থা বা স্বাদ তখনই একজন মুসলমানের মধ্যে আসে, যখন তাকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পূজা করার কথা বললে কিংবা ইসলাম ত্যাগ করার নির্দেশ দিলে এ কাজ করা তার জন্য জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়ার চেয়েও কষ্টকর বলে গণ্য হবে। -আল হাদিস। অতএব, বড়-ছোট যত মুখ দিয়েই বলা ও বলানো হচ্ছে, মানুষের কানে কথাটি পৌঁছাতে পৌঁছাতে অভ্যস্ত করে ফেলা হচ্ছে যে, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। এটি মূলত ঈমানবিরোধী একটি অনৈসলামিক কথা। এ বার্তাটি শুদ্ধ নয়। শরীয়তসম্মত নয়। প্রতিটি মুসলমান, আলেম-উলামা, ইমাম, খতিব, শিক্ষিত মানুষ, সচেতন নাগরিকের খুব ভালো করে বুঝতে হবে, অনেক বেশি বেশি বলতে হবে- সব উৎসব সবার নয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (22)
শাহিন ৬ অক্টোবর, ২০১৯, ৯:১০ পিএম says : 1
উপস্থাপনা টা অকেন সুন্দর ও তথ্যবহুল হয়েছে। জাজাকাল্লাহ,,
Total Reply(0)
শাহিন ৬ অক্টোবর, ২০১৯, ৯:১০ পিএম says : 0
উপস্থাপনা টা অকেন সুন্দর ও তথ্যবহুল হয়েছে। জাজাকাল্লাহ,,
Total Reply(0)
Salman ৬ অক্টোবর, ২০১৯, ৯:৫৯ পিএম says : 0
Anek anek dami kotha amader so kole sir theke Allah hepajot koruk AMIN
Total Reply(0)
Salman ৬ অক্টোবর, ২০১৯, ৯:৫৯ পিএম says : 1
Anek anek dami kotha amader so kole sir theke Allah hepajot koruk AMIN
Total Reply(0)
mohammad Sirajullah ৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:০৮ পিএম says : 1
The article is correct. Islam allows tolerance and respect for other religion, but does allow performing other religious rituals. It is true even for so calleed kpbor puja and peer puja and many such things going on in Bangladesh.
Total Reply(0)
আমিন ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৮ এএম says : 0
৫০ বছর পূর্বে এই জাতিকে একটা ভূতে ধরছিলো, ভূত মারা গেছে কিন্তু প্রেতাত্মায় এই জাতিকে ছারে নাই. আল্লাহ তুমি সাহায্য করো, প্রেতাত্মা থেকে মুক্তি দাও. আমিন..আমিন..আমিন
Total Reply(1)
Md.Kanchol Molla ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ৯:৩১ এএম says : 4
Thanks
Mohammad Moin Uddin ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪২ এএম says : 0
সময়োপযোগী একটা লেখা।। অসংখ্য ধন্যবাদ।।
Total Reply(0)
Moyen Uddin ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৩ এএম says : 0
Every religious have their own festival, but country for all
Total Reply(0)
Mohammed Ali ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৩ এএম says : 0
ধন্যবাদ স্লোগানটি এভাবে দেওয়ার জন্য,, ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার,
Total Reply(0)
Md Almas Ali ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৩ এএম says : 0
ধন্যবাদ ঠিক সময়ে ঠিক কথা গুলো তুলে ধরার জন্য
Total Reply(0)
hossain ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ২:১৫ এএম says : 0
nice interpretation from my dear scholar
Total Reply(0)
Farzana Gazi ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ২:২০ এএম says : 0
Thank you so much for the important article.This is very true that we should respect the different religion but we should also remember that which religion we belong to.
Total Reply(0)
Mohammad Tanvir ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ৯:৩০ এএম says : 0
Every religious have their own festival it should be like that .but our country is for all people of different religion those who are the nationality of Bangladesh .উপস্থাপনা টা সুন্দর ও তথ্যবহুল হয়েছে। জাজাকাল্লাহ,,
Total Reply(0)
Zakiul Islam ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:৫০ এএম says : 0
Every Muslim should take lesson from this articles. May Allah long live you.
Total Reply(0)
Md.Kamal Hossain ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ২:৪৪ পিএম says : 0
ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার,সব উৎসব সবার নয়,
Total Reply(0)
মোঃ আব্দুল কাদির ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ৪:৩২ পিএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ। অনেকদিন যাবত এরকম একটি তথ্যবহুল লেখার অপেক্ষায় ছিলাম।
Total Reply(0)
saidul islam ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ৫:২১ পিএম says : 0
Erokom lekha shob somaie lehak uchit karom amra muslemra bhule jaie who are we ?
Total Reply(0)
MD:RUBEL MIAH ৮ অক্টোবর, ২০১৯, ৫:০৬ পিএম says : 0
VALO BOLSEN
Total Reply(0)
Md. Yousuf ১০ অক্টোবর, ২০১৯, ৯:১৯ এএম says : 0
কথাটা এমন হলে কেমন হয়, ধর্ম যার যার উৎসব তার তার
Total Reply(0)
Yourchoice51 ২১ অক্টোবর, ২০১৯, ৫:১৮ পিএম says : 0
হুজুর, আমাদের শাসকরা তো বরাবরই বলছেন "ধর্ম যার যার, উৎসব সবার"। তাই একটু খাস করে দোআ করেন যেন আল্লাহপাক আমাদের মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী আর তার সহযোগীদের এ বিষয়টি সঠিকভাবে বোঝার তৌফিক দেন।
Total Reply(0)
habib ৪ মার্চ, ২০২০, ১১:১১ এএম says : 0
মেয়র আতিকুল ইসলাম ki Muslim ?
Total Reply(0)
জামসেদ ১৫ মার্চ, ২০২০, ৫:১৩ পিএম says : 0
ধর্ম যার যার উৎসব সবার নয়।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন