বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দেশ বিক্রি করে হলেও শেখ হাসিনার ক্ষমতা প্রয়োজন

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

দেশ বিক্রি করে হলেও শেখ হাসিনার ক্ষমতা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
তিনি বলেন, ভারত সফরে গিয়ে চুক্তি নয়, যেন শেখ হাসিনা আরেকটি দাসখত দিলেন। এর মাধ্যমে মূলত: স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সমুদ্র বন্দর, ফেনী নদীর পানি এবং জ্বালানি সঙ্কটময় বাংলাদেশের গ্যাস ভারতের হাতে তুলে দিয়েছেন। এছাড়াও নিজেদের নিরাপত্তার কথা না ভেবে উপকূলীয় নজরদারির জন্য বাংলাদেশে রাডার স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তার বদলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেয়েছেন ক্ষমতার মসনদে থাকার গ্যারান্টি আর ‘ঠাকুর শান্তি পুরস্কার’। তবে বাংলাদেশের জনগণের বদনসিব, বিনিময়ে বাংলাদেশ কিছুই পায়নি। গতকাল (রোববার) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ফেনী নদীর পানির দামে ক্ষমতায় থাকাটা কী পাকাপোক্ত হলো? গত ১২ বছরে যা যা দিলেন তারপর আর বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের কিছু অবশিষ্ট থাকল? আসলে এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে জনগণ ও দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো রাতের অন্ধকারে বিনা ভোটে ক্ষমতা দখল করেছেন। তাই জনগণের প্রয়োজন নেই। দেশ বিক্রি করে হলেও তার ক্ষমতা প্রয়োজন। তাই সব দেশের প্রধানমন্ত্রীই বিদেশ সফরে কিছু না কিছু আনতে যায়। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে যান সবকিছু উজাড় করে দিয়ে আসতে! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বিশাল লটবহর-লোক লস্কর নিয়ে ভারতে গিয়ে সবকিছু দিয়ে আসার প্রেক্ষিতে কবিগুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের একটি কবিতার চরন যেন মিলে যাচ্ছে- ‘যত চাও তত লও তরণী-পরে। আর আছে? আর নাই, দিয়েছি ভরে। এতকাল নদীকূলে যাহা লয়ে ছিনু ভুলে সকলি দিলাম তুলে থরে বিথরে এখন আমারে লহো করুণা ক’রে।’

রিজভী বলেন, আমরা আগেই বলেছিলাম প্রধানমন্ত্রী যতবার ভারত যান কেবল উজাড় করে দিয়ে আসেন। আনতে পারেন না কিছুই। এভাবে কী স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক হয়, না ভাই বোনের সম্পর্ক হয়? ফারাক্কার চালু অনুমতি দিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পিতা। এখন কন্যা ফেনী নদীর পানি দিয়ে নিজেকে সার্থক প্রতিপন্ন করলেন। তিনি কেবল দিতেই যান ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘটা করে। ভারতের সাথে বাংলাদেশের এই সরকারের নাকি পর্বতের শৃঙ্গের মতো সম্পর্ক। কিন্তু বারবার আমরা হতাশ হই। আমাদের সীমান্তে হত্যার সমস্যার সমাধান হয় না, আমাদের তিস্তার পানির সমস্যার সমাধান হয় না, বর্ষায় ফারাক্কার বাঁধ খুলে দিলে প্রবল বন্যার সৃষ্টি করা হয়, এখনও ভাসছে উত্তরাঞ্চল- এই সমস্যার সমাধান হয় না, বাণিজ্যের মধ্যে বিশাল ভারসাম্যহীনতা সেটার সমাধান হয় না। এর আগে ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে গর্বভরে এই প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমরা ভারতকে যা যা দিয়েছি তারা তা সারা জীবন মনে রাখবে।’ আর এবারে জনগণকে পানিতে ও ভাতে মেরে প্রধানমন্ত্রীর উৎসাহ ও প্রণোদনায় ফেনী নদীর পানি দান ইতিহাসে শেখ হাসিনার নাম স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি নিজ দেশের জনগণকে নিজ দেশের নদীর পানি থেকেও বঞ্চিত করলেন।

বিএনপি নায্য প্রাপ্য চায় মন্তব্য করে দলটির মুখপাত্র বলেন, আমরা কারো সঙ্গেই শত্রæতা চাই না। সকলের সঙ্গে সমমর্যাদা ও সার্বভৌম সমতার ভিত্তিতে মিতালীই আমাদের পরম আরাধ্য। এই ভিত্তিতেই আমাদের স্বার্থ বজায় রেখে ন্যায্য প্রাপ্যটুকু শুধু বুঝে নিতে চাই। বন্ধুত্ব ও অধীনতামূলক মিত্রতার মধ্যেকার ফারাক যে আকাশ-পাতাল তা-কি আমাদের মনে থাকে?

তিনি বলেন, বন্ধুত্ব হয় সমতার ভিত্তিতে লেনদেনের ওপর। কিছুই না পেয়ে শুধু একতরফা দিয়ে যাওয়াকে কি বন্ধুত্ব বলে? এটাতো একমুখি একতরফা প্রেম। নিজেদের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে চুক্তি করার চেয়ে কোনো চুক্তি না থাকাও যে ভালো, সেটাও আজ আমরা পুরোপুরি ভুলে বসে আছি। জাতীয় স্বার্থ বজায় রেখে ন্যায়সঙ্গত পাওনাটুকু বুঝে নেয়ার কথা বলার মতো দেশপ্রেম ও সাহস যাদের নেই, তারা কীভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারে?

বিএনপির এই নেতা বলেন, শেখ হাসিনা ভারত সফরে গেলেই দেশের জনগণ আতঙ্কে থাকে। কারণ সেখানে গেলে তিনি কি বলেন আর কি করেন ঠিক থাকে না। স¤প্রতি হঠাৎ করেই ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়ে দেশের পেঁয়াজের বাজার অস্থির করে তুলেছে। মানুষের নাভিশ্বাস দশা হয়েছে। অথচ, এমন একটি সিরিয়াস বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দিল্লিতে গিয়ে যেভাবে হাস্যরস করলেন, এতে দেশের জনগণ বিব্রত।

রিজভী বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জনগণ ভারতের কাছে তিস্তার ন্যায্য হিস্যা বুঝে পেতে চায়। কিন্তু আপনারা দেখলেন, ফেনী নদীর ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করতে পারবে ভারত। ভারত এই পানি তারা ত্রিপুরা সাবরুম শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্পে ব্যবহার করবে। ভারতকে দেয়া হয়েছে, চট্টগ্রাম আর মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ। এইসব চুক্তির বিস্তারিত কি জনগণের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে? জনগণকে কি জানতে দেয়া হয়েছে? এমনকি মধ্যরাতের ভোটে নির্বাচিতদের দিয়ে গঠিত সংসদের আলোচনা হয়নি। ভারতের সঙ্গে এইসব চুক্তির বিনিময়ে কি পেলো বাংলাদেশ? আসলে এসব চুক্তির বিপরীতে, আমাদেরকে ধরিয়ে দেয়া হলো একটি পদক আর জনগণের সামনে ঝুলিয়ে রাখা হলো মুলা। ভারত ভারতের স্বার্থ বুঝে নিচ্ছে আর ক্ষমতালোভী নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ সরকার বারবার নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিচ্ছে। এটা কেমন বন্ধুত্ব?
তিনি বলেন, এই আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকলে কখনোই বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষিত হবে না। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জন্য নিরাপদ নয়। তাই বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা আর দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন ভারত সফরে যান তখন দেশের জনগণ আশা করেছিলেন, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি, বাণিজ্য ভারসাম্য এবং সীমান্ত হত্যা সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু চুক্তিপত্র ও সমঝোতাগুলোতে এই প্রসঙ্গে কোন টু শব্দই আমরা দেখলাম না। এসব নিয়ে কোনো কার্যকর আলোচনাই হলো না! দিল্লি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী তিস্তার পানি তো চাইতেই পারলেন না। বরং উল্টা ফেনী নদীর পানি দিয়ে আসলেন ভারতকে। ভারত শুষ্ক মৌসুমে ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক (প্রতি সেকেন্ড) পানি তুলে নিয়ে গেলে মরুভূমিতে পরিণত হবে ফেনী নদী অববাহিকা। যেমনি হচ্ছে তিস্তা এলাকা। এখনো ৭০%-এর উপরে দেশের মানুষ গ্যাস সংযোগ পাচ্ছেন না। সেখানে দেশের মানুষকে বঞ্চিত করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে গ্যাস পাঠানো হবে।

রিজভী বলেন, গত বছরেরর ৭ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘বিদেশে গ্যাস রফতানি করতে রাজি হইনি বলে ২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে পারিনি। খালেদা জিয়া গ্যাস রফতানির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। আমরা মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসার শিক্ষা পাইনি। আমরা দেশের সম্পদ বিদেশীদের দিয়ে জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারব না।” আজ প্রশ্ন কেন গ্যাস দিলেন? ক্ষমতায় থাকার জন্যই কী এ গ্যাস দেয়া? এবার অস্বীকার করবেন কোনমুখে?

স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সমুদ্র বন্দর, ফেনী নদীর পানি এবং জ্বালানি সঙ্কটময় দেশের গ্যাস ভারতের হাতে তুলে দেয়ার চুক্তি সংবিধান পরিপন্থী মন্তব্য করে সাবেক এই ছাত্র নেতা বলেন, এটা বাংলাদেশ সংবিধানের ১৪৫ক অনুচ্ছেদের গুরুতর লঙ্ঘন। যা সংবিধানের ৭ক অনুচ্ছেদের অধীনে সংবিধান লঙ্ঘনজনিত রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধের শামিল। রাষ্ট্রবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থ পরিপন্থী এইসব চুক্তি করে প্রধানমন্ত্রী তার সাংবিধানিক শপথ ভঙ্গ করেছেন। নিজ দেশের স্বার্থের চাইতে বিদেশি রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার সাংবিধানিক সকল অধিকার হারিয়েছেন। তাই এ মুহূর্তে শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করছি। আমরা ফেনী নদীর পানিসহ সকল দেশবিরোধী চুক্তির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে চুক্তি বাতিলের জোর দাবি জানাচ্ছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন