মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রতি চারে একজন দরিদ্র

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশে দারিদ্র্য পরিমাপ প্রতিবেদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

ছয় বছরের ব্যবধানে রংপুর ছাড়া দেশের সব বিভাগে দারিদ্র্য কমেছে। ২০১০ সালে রংপুরে দারিদ্র্য হার ছিল ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৬ সালে এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭ দশমিক ৩ শতাংশ। ওই ছয় বছরে সবচেয়ে দারিদ্র্য কমেছে বরিশাল বিভাগে। বরিশাল বিভাগে দারিদ্র্যের হার ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে নেমে ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগেও উল্লেখ্যযোগ্য হারে দারিদ্র্য কমেছে। রাজশাহী ও খুলনায় দারিদ্র্যের হার কমার প্রবণতা কম। মোটকথা বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বাড়লেও দারিদ্র্য বিমোচনের গতি কমেছে। তাই দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের প্রথাগত ও নতুন উপায় উভয়ই দরকার বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

গতকাল সোমবার বনানীর হোটেল আমারিতে বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত বাংলাদেশ পভার্টি অ্যাসেসমেন্ট প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জরিপের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। রাজধানীর এক হোটেলে প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
তবে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তক্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের সঙ্গে কিছুটা দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, তিন বছরের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। হালনাগাদ তথ্য ব্যবহার করলে আরও ইতিবাচক চিত্র পাওয়া যাবে বলে তিনি মনে করেন। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বিশ্বব্যাংকের এই তথ্য অনেক পুরনো। গত ১০০ বছর আগে বাংলাদেশে কোথায় ছিল আর এখন কোথায় সেটা ভাবতে হবে। এই প্রতিবেদনে ২০১৭ সালের আগের তথ্য উঠে এসেছে। এই প্রতিবেদনের তুলনায় বাংলাদেশের বর্তমান চিত্র অনেক ভিন্ন বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকারের যেভাবে কাজ করছে সেটার আলোকে ২০৩০ সালের মাঝে আমাদের যে স্বপ্ন সেটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবো।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমাদের টার্গেট ২০২৪ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা। আমরা স্বাভাবিকভাবেই জিডিপিতে ৮ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন এবং তরুণ মানবসম্পদকে কাজে লাগিয়ে বাকি ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবো।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, প্রতিবেদনে যেসব এলাকাকে দারিদ্র্য বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে, আপনারা দেখতে পাবেন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে আমরা সেসব এলাকাকে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিকল্পনায় রেখেছি।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচন ও মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। যার বেশিরভাগই সম্ভব হয়েছে শ্রম আয় বৃদ্ধির কারণে। তাই ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময়ে ৮০ লাখ বাংলাদেশি দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে। তবে দেশে অসমভাবে দারিদ্র্য কমেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষি নয়, গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র্য হার কমাতে শিল্প ও সেবা খাত বেশি অবদান রেখেছে। আলোচ্য সময়কালে কৃষি প্রবৃদ্ধি ধীর ছিল এবং আগের চেয়ে দারিদ্র্য বিমোচনে কম অবদান রেখেছে। শহর অঞ্চলে ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন খাতে বিশেষত তৈরি পোশাক খাত দারিদ্র্য কমাতে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রেখেছে। এদিকে উৎপাদন খাতে কর্মসংস্থানে ধীরগতির কারণে সুবিধা পেতে পারতো এমন পরিবারের অংশ সীমিত হয়েছে। অন্যদিকে সেবা খাতে আত্ম-কর্মসংস্থানে নিয়োজিতদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে, যা নগর দারিদ্র্য কমানোর ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে বলেছে, ২০১০ সাল থেকে দেশের পূর্বাঞ্চলে দারিদ্র্য কম এবং পশ্চিমাঞ্চলের বেশি-এই পরিস্থিতি আবার ফিরে এসেছে। এ জন্য আয়বর্ধক কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ গঠনে জোর দেওয়ার সুপারিশ করেছে বিশ্বব্যাংক। এ ছাড়া নগর দারিদ্র্য মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের পক্ষে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সংস্থার পভার্টি অ্যান্ড ইক্যুইটি গেøাবাল প্র্যাকটিসের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ মার্সিয়া জেনুনি। তিনি বলেন, প্রতিবেদনে প্রথাগত বিভিন্ন চালিকাশক্তি দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখছে। কিন্তু অগ্রগতির ক্ষেত্রে কিছু চালকের ক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, বিগত দশকে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। কিন্তু এখনো বাংলাদেশে প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন দরিদ্র বাস করছে। বাংলাদেশকে আরও অনেক কিছু করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশেষ করে দারিদ্রের নতুন ক্ষেত্রগুলোর দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। শহর এলাকায় দারিদ্র্য মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ, কেননা ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে দরিদ্র মানুষের অর্ধেক শহরে বসবাস করবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আরও বলেন, দারিদ্র বিমোচনের ৯০ শতাংশ কর্মসূচি গ্রামে রয়েছে। শহরে দারিদ্র্য কমেছে সীমিত হারে এবং অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে শহরের লোকের অংশ একই রয়ে গেছে। ফলে জাতীয় দারিদ্র্য বিমোচনের হার কমেছে।
অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বিকাশ কিশোর দাস, বিশ্বব্যাংকের পভার্টি অ্যান্ড অ্যান্ড ইক্যুইটি গেøাবাল প্র্যাকটিসের পরিচালক ক্যারোলিনা সানচেজ পারামো প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন