শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি : বিএনপি

বাংলাদেশ-ভারতের চুক্তির প্রতিক্রিয়া

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

ভারত সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে যেসব সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি হয়েছে সেগুলো দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সমুদ্র বন্দর, ফেনী নদীর পানি, উপকূলীয় এলাকায় রাডার বসিয়ে পর্যবেক্ষণের নামে সার্বভৌমত্ব হুমকীর মধ্যে ফেলা এবং জ্বালানী সঙ্কটময় দেশের গ্যাস ভারতের হাতে তুলে দেয়ার যে চুক্তি করা হলো, তা সুস্পষ্টভাবে দেশবিরোধী এবং সংবিধান পরিপন্থী।


দেশ বিক্রি করে দিয়ে হলেও ক্ষমতায় টিকে থাকতেই আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের হাতে নিঃস্বার্থভাবে সব তুলে দিয়েছে। এটা বাংলাদেশ সংবিধানের ১৪৫ক অনুচ্ছেদের গুরুতর লংঘন। যা সংবিধানের ৭ক অনুচ্ছেদের অধীনে সংবিধান লংঘনজনিত রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধের শামিল বলেও অভিযোগ করেন তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে চারটি সমঝোতা স্মারক, একটি স্ট্যান্টার্ড অপারেশন প্রসিডিউর, একটি চুক্তি এবং অপরটি একটি কর্মসূচির নবায়ন করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- সমুদ্র উপক‚লে নজরদারি, ভারতের পণ্য পরিবহনে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার, ত্রিপুরায় সাবরুম শহরে পানি সরবরাহের জন্য ফেনী নদী থেকে থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহার, গ্যাস রপ্তানি।


এসব চুক্তির খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই সমালোচনায় মুখর বিএনপির নেতারা। গণমাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং দলীয় বৈঠকেও এসব বিষয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা। বিশেষ করে দেশের মানুষের বহুল কাক্সিক্ষত তিস্তা চুক্তি অধরা থাকার পরও ফেনী নদীর পানি ভারতে দেয়া, দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে পর্যবেক্ষণের জন্য ভারতের রাডার স্থাপন এবং গ্যাস রপ্তানিকে দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি বলে অভিহিত করেছেন তারা।


দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে গত ৫ অক্টোবর চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার পরদিনই গত রোববার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, এগুলো চুক্তি নয় যেন শেখ হাসিনা আরেকটি দাসখত দিলেন। এর মাধ্যমে মুলত: স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সমুদ্র বন্দর, ফেনী নদীর পানি এবং জ্বালানী সঙ্কটময় বাংলাদেশের গ্যাস হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও নিজেদের নিরাপত্তার কথা না ভেবে উপকূলীয় নজরদারির জন্য বাংলাদেশে রাডার স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তার বদলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেয়েছেন ক্ষমতার মসনদে থাকার গ্যারান্টি আর ‘ঠাকুর শান্তি পুরস্কার’। তবে বাংলাদেশের জনগণের বদনসিব, বিনিময়ে বাংলাদেশ কিছুই পায়নি।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ফেনী নদীর পানির দামে কী ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতায় থাকাটা কী পাকাপোক্ত হলো? গত ১২ বছরে যা যা দিলেন তারপর আর বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের কিছু অবশিষ্ট থাকল? আসলে এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে জনগণ ও দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করতো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাতো রাতের অন্ধকারে বিনা ভোটে ক্ষমতা দখল করেছেন। তাই জনগণের প্রয়োজন নেই। দেশ বিক্রি করে হলেও ক্ষমতা তার প্রয়োজন।


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ফেনী নদীর পানি প্রস্তাহারের চুক্তি আমাদের দেশের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে ওই এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে পানির সঙ্কট হবে। এমনিতেই আমাদের তিস্তার পানি পাইনি, ৫৪টি নদীতে বাঁধ দেয়া হয়েছে। সেখানে ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহারের অনুমতি দিয়ে যে ক্ষতি করা হলো তা শুষ্ক মৌসমে দেশের মানুষ বুঝতে পারবে। রাডার স্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সীমানায় যুদ্ধ কাজে ব্যবহৃত যেকোন ধরণের স্থাপনা করা দেশের জন্য মঙ্গলজনক না। এসব চুক্তি বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী।


ভারতের সাথে বাংলাদেশ যে চুক্তি করেছে তা অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবদীন ফারুক বলেন, ফেনী নদীর দুই কিলোমিটার দূরে আমার বাড়ি। সেই নদীর পানি প্রয়োজনে ভারত অবশ্যই নিবে। কিন্তু সেই পানির বিনিময়ে তিস্তার পানির সমঝোতা কোন হলো না? কেন বাংলাদেশ তিস্তার পানি পেলো না? তিনি বলেন, চুক্তির পর আমি গ্রামের বাড়িতে ছিলাম, সেখানে গ্রামে-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায় মানুষের প্রশ্ন- দিয়ে আসলাম কিছু পেলাম না। কিছু পাওয়া উচিত ছিল। প্রধানমন্ত্রীর কিছু আনা উচিত ছিল। তবে অবস্থা দৃষ্টে যা মনে হচ্ছে দিয়ে যাচ্ছি, কিছু পাওয়ার আশা খুব ক্ষীণ। এটাকে গ্রহণ করতে পারছি না। দুটি বন্ধুপ্রতীম দেশের মধ্যে যেটা দেয়ার সেটা সমানতালে পেলে দেশের মানুষ খুশি হতো। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতা স্বীকার করে ফারুক বলেন, এখন এসব সহযোগিতার কথা মানুষ ভুলে যাচ্ছে, অস্বীকার করছে। কারণ যখন সকলে দেখছে শুধু বাংলাদেশ দিয়েই যাচ্ছে কিছুই পাচ্ছে না। যা পাচ্ছি তা কাগজে কলমে। তিনি আরও বলেন, যারা গণতন্ত্র, ভোটাধিকারের জন্য লড়াই করে, যারা দেশদ্রোহী ও জনগণবিরোধী কোন চুক্তি বাইরে করেনি এবং জনগণবিরোধী চুক্তির বিরোধিতাকারী এসব দলের মধ্যে অন্যতম হলো বিএনপি


জানতে চাইলে রুহুল কবির রিজভী বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ভারতের কাছে তিস্তার ন্যায্য হিস্যা বুঝে পেতে চায়। দেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে তিস্তার পানি নিয়ে সুখবর জানতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি সেখানে এ বিষয়টি উত্থাপনই করেননি। উল্টো ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহার, ভারতকে চট্টগ্রাম আর মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেয়া, গ্যাস রপ্তানি করার কথা বলা হয়েছে। এইসব চুক্তির বিস্তারিত কি জনগণের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে? জনগণকে কি জানতে দেয়া হয়েছে? ভারতের সঙ্গে এইসব চুক্তির বিনিময়ে কি পেলো বাংলাদেশ? ভারত ভারতের স্বার্থ বুঝে নিচ্ছে আর ক্ষমতালোভী নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ সরকার বারবার নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিচ্ছে। এই আওয়ামীলীগ ও শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকলে কখনোই বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষিত হবেনা। রিজভী অবিলম্বে ফেনী নদীর পানিসহ সকল দেশবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি জানান।


যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশ যে চুক্তিগুলো করেছে তা সম্পূর্ণভাবে দেশের স্বার্থের পরিপন্থী। দেশের জনগণ দেশবিরোধী এসব চুক্তিতে ক্ষুব্ধ, অসন্তুষ্ট। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে, চাপাবাজী করে আওয়ামী লীগ সরকার যেসব চুক্তি করেছে তা দেশের মানুষ মেনে নেবে না।


তিনি বলেন, আমরা যেখানে তিস্তার পানির জন্য হাহাকার করছি সেখানে এই বিষয়ে কোন এজেন্ডাই ছিল না। আর সকলকে অবাক করে দিয়ে ফেনী নদীর পানি দেয়া হলো। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বিদেশে গ্যাস রফতানি করতে রাজি হইনি বলে ২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে পারিনি। খালেদা জিয়া গ্যাস রফতানির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। আমরা মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসার শিক্ষা পাইনি। আমরা দেশের সম্পদ বিদেশীদের দিয়ে জনগনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারবো না। আজ প্রশ্ন কেন গ্যাস দিলেন? ক্ষমতায় থাকার জন্যই কী এ গ্যাস দেওয়া? এছাড়া উপকূলীয় এলাকায় রাডার স্থাপনের মাধ্যমে নজরদারির সুযোগ করে দেয়া হলে দেশ এবং দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আলাল অভিযোগ করে বলেন, সরকার মক্ষমতার লোভে দেশের স্বার্বভৌমত্বকে কেটে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে।


ঢাকা জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক বলেন, ভারতের সাথে যে চুক্তি করা হয়েছে তা বর্তমান অবৈধ সরকারের নীল নকশার অংশ। সরকার প্রয়োজনে দেশকে বিক্রি করে হলেও ক্ষমতায় থাকতে চায়। এ চুক্তি বিএনপিসহ দেশের ১৮ কোটি মানুষ মানে না। তারা এই চুক্তির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আমরা এই দেশবিরোধী চুক্তি মানি না। তিনি অবিলম্বে এসব চুক্তি বাতিলের দাবি জানান।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন