শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

‘কাশ্মীরেও আছে এমন এক টুকরো গ্রাম, যার নাম বাংলাদেশ!’

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১১:২৯ এএম

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে নিহত হওয়ার পর আলোচনায় আসে তার কয়েকটি ফেসবুক স্ট্যাটাস। নিহত হওয়ার ৭ ঘণ্টা আগে শনিবার বিকালে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন আবরার।

ভারতকে সমুদ্রবন্দর, পানি ও গ্যাস দেয়ার চুক্তির বিরোধিতা করে দেয়া ওই স্ট্যাটাসটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।

এরপরই ফেসবুক ইউজাররা আবরারের প্রোফাইলে ঢুকতে শুরু করেন।

আবরারের প্রোফাইলে গিয়ে আরও কয়েকটি স্ট্যাটাস দেখা যায়, যেগুলো কাশ্মীরের মুসলমানদের নির্যাতনের প্রতিবাদ নিয়ে। সে স্ট্যাটাসগুলোও ভাইরাল হয়ে যায়।

গত ১৬ আগস্ট ‘কাশ্মীরেও আছে এমন এক টুকরো গ্রাম, যার নাম বাংলাদেশ!’ শিরোনামে একটি সংগৃহীত পোস্ট দেন আবরার।

যাতে লেখা ছিল- ‘সম্রাট জাহাঙ্গীরের একটি প্রিয় অভ্যাস ছিল। গ্রীষ্মের দিল্লি যখন তীব্র দাবদাহে ভারি হয়ে উঠত তখন হাওয়া বদলের জন্য মোঘল সম্রাট আসতেন কাশ্মীরে। কাশ্মীরকে তিনি ভূস্বর্গ বলেছিলেন, বলেছিলেন এক ইচ্ছার কথাও। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস এই কাশ্মীরের ভূমিতেই তিনি ফেলতে চেয়েছিলেন।

কাশ্মীরের সৌন্দর্য বর্ণনা দিতে গিয়ে অনেকেই আবেগে বিহ্বল হন। কাশ্মীর নিয়ে উন্মাদনা তো কম হয় না। এখন তো বাংলাদেশি অনেক পর্যটকদেরও অন্যতম প্রিয় জায়গা এই কাশ্মীর। কিন্তু বাংলাদেশিরা কি জানেন, পৃথিবীর ভূস্বর্গ খ্যাত এশিয়ার সুইজারল্যান্ড কাশ্মীরেও আছে এমন এক টুকরো গ্রাম, যার নাম বাংলাদেশ!

কাশ্মীরের ২২টি জেলা সর্বমোটে। শ্রীনগর থেকে ৮০ কি.মি উত্তর দিকে গেলে যে জেলা পড়বে তার নাম বান্ডিপুরা। এই বান্ডিপুরা জেলার আলুসা তহশিলে একটি গ্রামের নাম বাংলাদেশ। বিখ্যাতউলার হ্রদের তীরে ভাসমান এই গ্রামে বাইরের মানুষ খুব একটা যান না অবশ্য। বান্ডিপুরা- সোপুরের মধ্যখান দিয়ে মাটির রাস্তা ধরে পাঁচ কিলোমিটার হাঁটলেই এই গ্রামটি দেখা যাবে।

কিন্তু কেন ‘বাংলাদেশ’ হল এই গ্রামের নাম? আপনি জেনে অবাক হবেন, কাশ্মীরের এই গ্রামটির সঙ্গেও ১৯৭১-এর যোগসূত্র রয়েছে। ১৯৭১ সালে জুরিমন নামক এক গ্রামের ৫-৬টি ঘরে আগুন লাগে। আগুনের শিখায় জ্বলে-পুড়ে যায় ঘরগুলো। গৃহহীন হয়ে পড়েন নিরীহ সাধারণ এই মানুষগুলো। তারা তখন পুড়ে যাওয়া জায়গা থেকে কিছুটা দূরে পার্শ্ববর্তী ফাঁকা জায়গায় সবাই মিলে ঘর তোলেন। সেই বছরই ডিসেম্বরে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়। সেই একই সময় গৃহহীন মানুষগুলো দুঃসময় মোকাবেলা করে শুরু করেন তাদের নবজন্ম। তাই তারাও তাদের নতুন গ্রামের নাম রাখেন বাংলাদেশ।

উলার হ্রদের তীরে এই গ্রামটি সৌন্দর্যে কিন্তু কম যায় না! চারদিকে জল, পেছনে সুউচ্চ পর্বত, সব মিলিয়ে অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এই গ্রামটির। কিন্তু, নাগরিক কিছু সাধারণ সুবিধা এখনও ঠিক ঠাকভাবে পৌঁছে না গ্রামবাসীর কাছে। ভিনদেশি মানুষ তাদের কাছে আশ্চর্য এক ব্যাপার। বাইরে থেকে সচরাচর কেউ যায় না সেখানে। তাই হঠাৎ কেউ গেলেই তারা খুব অবাক এবং আশ্চর্য হয়।

যদিও তারা গ্রাম হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে বেশিদিন হয়নি। বান্ডিপুরার ডিসি অফিস ২০১০ সালে এই বাংলাদেশ নামক গ্রামটিকে আলাদা গ্রামের মর্যাদা দেন। ৫/৬ ঘর থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশ গ্রামে এখন আছে পঞ্চাশেরও বেশি ঘর! যদিও এই প্রজন্মের অনেকে গ্রামটির জন্ম ইতিহাস জানেন না। মাছ ধরা মূলত প্রধান জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম তাদের। পাশাপাশি পানি বাদাম সংগ্রহ করাও গ্রামবাসীর অন্যতম প্রধান কাজ।

ভাসমান এই গ্রাম, বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, কাশ্মীর সব মিলিয়ে যেন আশ্চর্য কাকতালীয় যোগাযোগ! কোথায় যেন একটা মায়া কাজ করে শুনলে, বিশেষ করে যে গ্রামটির জন্ম একাত্তরে, যে “বাংলাদেশ” গ্রামটি জন্মেছিল স্বাধীন বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটি জন্মের বছরে! এই বর্ষার ঝুপ ঝুপ বৃষ্টি পরা রাতে ঢাকা, বাংলাদেশ থেকে সেই “বাংলাদেশ”- এর প্রতি শুভকামনা। ভালো থাকুক, বাংলাদেশ ।’

এর পাঁচদিন আগে ১১ আগস্ট কাশ্মীরের মুসলমানদের নির্যাতন নিয়ে বিবিসির একটি ভিডিও শেয়ার করে বুয়েটের এই শিক্ষার্থী লেখেন, ‘একাত্তরে বিরূপ পরিবেশের মধ্যেও কিন্তু বিবিসি মুক্তিবাহিনীর খবর প্রচার করে গেছে। কাশ্মীর নিয়ে ভারতীয় বাহিনীর অপপ্রচার আর তাদের মিডিয়াতে শান্ত কাশ্মীরের যে খবর প্রচার করছে একাত্তরে পাকমিডিয়াও একই কাজ করেছিল।’

এ ছাড়া ভারত সরকার কর্তৃক কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ মর্যাদা বাতিলের প্রতিবাদে ৯ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত কাশ্মীরের শিক্ষার্থীরা জাতীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ করেন। এই বিক্ষোভের একটি ভিডিও শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, ‘এই ছেলে-মেয়েগুলা জানে না তারা কি অসাধ্য কাজ করেছেন। শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে তাকবির ধ্বনি!

কোনো ইসলামপন্থী কাউকে শহীদ মিনারের আঙিনায় দেখলেই তেড়ে আসা মুখোশধারী নাস্তিকদের উপেক্ষা করে এই ধ্বনি বাংলার জন্যও মাইলফলক।’

বুয়েটে অধ্যয়নরত ‘এক কাশ্মীর শিক্ষার্থীর আকুতি’ শিরোনামে একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে আবরারের প্রোফাইল থেকে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Md. Humyun Kabir ৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১১:৪৭ এএম says : 0
Solid word.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন