বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

লালবাগ থেকে বুয়েট কতদূর?

বুয়েট ভিসির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

রাজধানীর লালবাগ থেকে বুয়েট কতদূর? পুঁজার ছুটিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম ক্যাম্পাসের বরাদ্দকৃত বাংলো থেকে লালবাগের বাসায় যান। ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার পৈচাসিক নির্যাতনে মেধাবী ছাত্র আরবার ফাহাদের মৃত্যুর পর ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে ক্যাম্পাস। কিন্তু লালবাগের বাসা থেকে বুয়েট ক্যাম্পাসে আসতে ভিসির সময় লেগে যায় ৩৬ ঘন্টা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যখন উপাচার্যের কার্যালয়সহ বুয়েটের প্রশাসনিক সকল কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়; তখন ভিসি ক্যাম্পাসে হাজির হয়ে প্রথমে ৮টি হলের প্রভোস্টদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। অতপর উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের সামনে এলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে এসে ভিসি ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি তোমাদের অভিভাবক, তোমরা আমার সন্তান। আবরারের সাথে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা অনাকাঙ্খিত। এ কথা শোনার পর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, ‘সন্তান হলে ৩৬ ঘন্টা কোথায় ছিলেন? মুত্যু সন্তানকে দেখতে এবং নাজাজে জানাজায় এলেন না কেন? এটা একটা খুন, ছাত্রলীগ খুন করেছে, আপনাকে স্বীকার করতে হবে।’ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শান্ত হলে ভিসি বলেন, ‘আমি শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি। তারা দেশের বাইরে আছেন। সেখান থেকে তারা যেভাবে নিদের্শনা দিচ্ছেন আমি তা পালন করছি। আমি তোমাদের দাবিগুলো দেখেছি। আমি সব দাবি মেনে নিয়েছে।’ এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী উত্তেজিত হয়ে ভিসিকে বলেন, ‘আবরার খুন হওয়ার পর আপনি কই ছিলেন? কেন এখানে আসেননি?’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে মধ্যযুগীয় পৈচাসিক কায়দায় পিটিয়ে হত্যা করেছে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। বর্বরোচিত ওই ঘটনা দেশের ১৬ কোটি মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর লাখ লাখ ছাত্রছাত্রী খুনিদের বিচারের দাবিকে সোচ্চার। কেউ কেউ বুয়েটে ছাত্রলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হাজার হাজার শিক্ষক প্রতিবাদ করছেন এবং অভিযুক্তদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু একজন ব্যাক্তি ছিলেন নীরব। তিনি হলেন বুয়েটের ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম। ক্যাম্পাসে ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার মতো ঘটনায় অভিভাবক হিসেবে যাকে সবার আগে এগিয়ে এসে পরিস্থিতি শান্ত করা এবং অপরাধীদের বিচার এবং বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীদের সান্তনা দেয়ার কথা; সেই ভিসি পর্দার আড়ালে থেকেছেন ৩৬ ঘন্টা। দেশের সর্বচ্চো বিদ্যাপীঠের দায়িত্বে থাকা ভিসি সাইফুল ইসলামের বিবেকে কি বর্বরোচিত হত্যাকান্ড সামান্য নাড়া দেয়নি? নাকি আবরার ফাহাদ তিস্তা চুক্তির বদলে ফেনি নদীর পানি ভারতকে দেয়ার প্রতিবাদ করে ফেসবুকে স্ট্র্যাটাস দেয়ায় নিহত ছাত্রের উপর তিনি ক্ষুব্ধ? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বরাদ্দকৃত বাসভবন বাংলোতে ছিলেন না। তিনি ছিলেন লালবাগের বাসায়।

ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার খুনের বিচারের দাবিতে বুয়েট-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের ছাত্রছাত্রীরা যখন পথে নেমে এসেছে; দেশের বিভিন্ন মহাসড়ক অবরোধ করেছে; প্রচার করা হয় ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম অসুস্থ। পরে জানানো হয় তিনি পুঁজার ছুটি কাটাচ্ছেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আবরারের হত্যাকারীদের ফাঁসিসহ ৮ দফা দাবিতে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা ভিসিকে ক্যাম্পাসে এসে জবাবদিহিতা করার দাবি জানান।

মেধাবী ছাত্র আরবার ফাহাদের কয়েক দফা জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয়েছে কুষ্টিয়ার নিজ গ্রামে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে আসেন ৩৬ ঘন্টা পর। তিনি ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবক দাবি করলেও আবরারের নামাজে জানাজা ও দাফনেও অংশ নেননি। দেখা তো দূরের কথা, কথা বলেননি আবরারের অভিভাবক, স্বজন বা সহপাঠিদের সঙ্গে। তাকে দেড় দিন ফোনেও পাওয়া যায়নি।

ছাত্রলীগের কিছু নেতার হাতে আবরার নিহতের পর সময় গড়িয়েছে, আর হত্যার লোমহর্ষক নিষ্ঠুর কাহিনী বেরিয়ে এসেছে, পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। এই খুন বিশ্ববিদ্যালয়, রাজধানীর গন্ডি পেরিয়ে আবরার রাষ্ট্র হয়ে গেছে। দলমত নির্বিশেষে ফুঁসে ওঠেছে সারা দেশের ছাত্রসমাজ। দেশ ছাড়িয়ে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। সামাজিক মাধ্যমজুড়ে আবরার বন্দনা আর ভালোবাসায় শোকাভিভূত, ক্ষুব্ধ, প্রতিবাদ মুখর মানুষ। ঘৃণার বিষবাষ্প ছুঁড়ে দিয়েছে খুনীদের প্রতি। অথচ ভিসি সাইফুল ইসলাম পর্দার লাড়ালেই ছিলেন।

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, স্বয়ং ছাত্রলীগ খুনের ঘটনায় জড়িত নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, বহিস্কার করেছে, শাস্তি চেয়েছে। তবে অভিযুক্ত অমিত সাহা নামের একজন রহস্যজনকভাবে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। এসবে সাড়া মেলেনি ভিসির। তিনি চুপ, নির্লিপ্ত। প্রয়োজন মনে করেননি ঘটনাস্থলে যাওয়ার, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার, আবরারের অভিভাবক-স্বজনদের সান্তনা দেয়ার। ফোন করে খোঁজ-খবর নেয়ার সাধারণ সৌজন্যবোধটুকুও দেখাননি। ধরেননি ফোনও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই লিখেছেন বুয়েটের ভিসির বিবেক দিল্লির কাছে বন্ধক রেখেছেন। আবরার যেহেতু ভারতকে ফেনি নদীর পানি নেয়ার বিরোধিতা করে স্ট্র্যাটাস দিয়েছেন; তাতেই ভিসি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এ জন্য তার বিবেক কাঁদেনি। তাছাড়া দলবাজ ভিসি অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতাদের গ্রেফতার হওয়ায় মনের দুঃখে নিরব হয়ে গেছেন।

ছাত্রলীগের পৈচাসিকতায় নিহত এক দুখিনী মায়ের সন্তান আবরার এখন লক্ষ মায়ের সন্তান হয়ে গেছেন। আবরারের পিতার চোখের পানি গড়িয়েছে লক্ষ পিতার চোখ বেয়ে। আবরার এখন আর কুষ্টিয়ার ওই গ্রামের এক পরিবারের নেই। অসংখ্য পরিবার তার, সারা দেশের ছাত্রসমাজ তার সহপাঠি, ভাই, বন্ধু। অথচ যার অভিভাবকত্বে উচ্চশিক্ষার এই বিদদ্যাপীঠে পা রেখেছিলেন আবরার, সেই ভিসির ভূমিকায় সবাই হতবাক!

প্রশ্ন ওঠেছে ভিসি ড. সাইফুল ইসলামের এই নির্লিপ্ততার রহস্য কি? লালবাগ থেকে বুয়েট ক্যাম্পাস ১০ মিনিটের পথ আসতে তার ৩৬ ঘন্টা লাগলো কেন? #

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (13)
Md.Harun al Rashid ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৩৩ এএম says : 0
His first delivery on the murder was a immatured death instead of murder therefore he did pay proper attention to the incident.
Total Reply(0)
Kabir Islam ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ২:৩১ এএম says : 0
He needs to apologize and resign first.
Total Reply(0)
Anisur Rahman Ripon ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ২:৩৭ এএম says : 0
আজ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের জীবনের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সকাল দায়দায়িত্ব সাংবিধানিক ভাবে উক্ত প্রতিষ্ঠন ও রাষ্ট্রকে প্রদান করতে হবে।
Total Reply(0)
Kamrul Islam ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ২:৩৭ এএম says : 0
যে ভিসি তার ছাত্রের লাশ দেখতে আসতে পারেনি, তার ভিসি পদে থাকার কোনো অধিকার নেই।তাই তার নিজে থেকে পদত্যাগ করা উচিত, নয়তো অপসরণ করা হোক এই .... ভিসি কে।
Total Reply(0)
Bellal Hossain ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ২:৩৮ এএম says : 0
আপনি দেশের সর্বচ্ছো বিদ্যাপিঠের ভিসি, সাধারন মানুষ হিসাবে আমরা আপনার নিকট সততা প্রত্যাশা করি। আমরা কমনা করি সাধারন মানুষ যেন আপনার সম্পর্কে প্রশ্ন তুলতে না পারে।
Total Reply(0)
Main Uddin Siblu ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ২:৪১ এএম says : 0
কাজ করতে করতে উনি আবরারের লাশ পর্যন্ত দেখতে আসতে পারেন নাই!!! এক জন বুয়েট ভিসি এত দলিয় আর নির্লিপ্ত কেমনে হয়?
Total Reply(0)
Zahid Arafat Shuvo ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ২:৪২ এএম says : 0
সবাই হাতে তালি দাও ভাই.. ভিসি সাহেব আসছে.. ফুলের মালা দিয়ে বরন করো তাকে.. জিজ্ঞেস করো সারাদিন কিছু খেয়েছে কিনা..?
Total Reply(0)
Rezaul karim ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ৪:৪২ এএম says : 0
Botomane manus namer ......./.........
Total Reply(0)
Abduloahed ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ৬:৪৬ এএম says : 0
এ কিসের ভিসি! এতো এক .... এতো আওয়ামী লীগের ..... এর অপসরন চাই
Total Reply(0)
আবদুর রাজ্জাক ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ৬:৫১ এএম says : 0
সঠিক বিচার হওয়া উচিত।
Total Reply(0)
HABIB ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:৫০ এএম says : 0
Dark future begin in the country... no Bangladesh university made it to the academic ranking of world universities 2019. which announce ranked 1000 universities globally. the reason why international education database are did not included Bangladesh university. the recent ongoing Abrar Fahad incident in BUET shaking the whole nation. and this is cause of huge negative impact education systems in the country. and it could be further damage Bangladesh good reputation.
Total Reply(0)
dr. m. islam medicine deptt. king saud university saudi arab. ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১১:৪৪ এএম says : 0
vc !how much cruel and irresponsible! by prompt action he could easily save the life of his student!
Total Reply(0)
Nannu chowhan ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১১:৫৩ এএম says : 0
Eai shob ojoggo dolkana shikkhokder dara desher shorbocho shikkha protishtan theke shorbo nimno shikkha protishtan goli porichalito kore desher medha shoktir vobishoter shu nagorikder dhongsho kore dichse...
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন