বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের ডেপুটি ডাইরেক্টর পরিচয়দানকারী প্রতারক গ্রেফতার

গাজীপুরে র‌্যাবের অভিযান

গাজীপুর জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ৬:০৫ পিএম | আপডেট : ১০:৪৭ পিএম, ৯ অক্টোবর, ২০১৯

গায়ে এস এস এফ জ্যাকেট কোমড়ে পিস্তল হাতে ওয়াকি টকি আর ব্যবহৃত গাড়িটিতে সামনে পিছন মিলিয়ে নয়টি স্টিকার যাতে গণ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, আইসিটি ডিভিশন লেখা আছে। যার ফলে সাধারণ মানুষ থেকে প্রশাসনের লোকরা তাকে দেখে সন্মান না দিয়ে কোন উপায় ছিল না। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দিনের পর দিন প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছেন মানুষের কোটি কোটি টাকা। তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগে র‌্যাবের অভিযানে শেষ রক্ষা হয়নি। আটক করা হয়েছে প্রতারক ইল্লাম শাহরিয়ার (৩৭)কে।

মঙ্গলবার রাতে ভুক্তভোগীদের সাথে নিয়ে গাজীপুর মহানগরের শিমুলতলী কাঁচাবাজার রোডের মৌবাগের ৪২৪/১৩ এর দোতলায় ইল্লামের ভাড়া বাসায় প্রবেশ করে র‌্যাব। অভিযান শেষে রাত আনুমানিক ১০ টায় তাকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন অভিযানে নেতৃত্বদানকারী র‌্যাবের কোম্পানীর কোম্পানী কমান্ডার লেঃ কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল-মামুন।

প্রতারক ইল্লাম শাহরিয়ার ঢাকা ডিওএইচএস বারিধারার ১৩৭ নম্বর বাড়ির সাদিক হাসানের ছেলে।

র‌্যাবের পাঠানো তথ্যমতে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের ডেপুটি ডাইরেক্টর পরিচয়দানকারী প্রতারক ইল্লাম শাহরিয়ার মহানগরের শিমুলতলী কাঁচাবাজার রোডের মৌবাগের ৪২৪/১৩ এর বাসায় অবস্থান করছেন এমন তথ্যর ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করেন র‌্যাব।

র‌্যাব জানায়,গ্রেফতারকৃত ইল্লাম শাহরিয়া পেশায় একজন আইটি বিশেষজ্ঞ। কিন্তু উক্ত পেশার আড়ালে সর্বসাধারণের কাছে সে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আইটি সেকশনের ডেপুটি ডাইরেক্টর পরিচয়দানের পাশাপাশি তার ব্যবহৃত গাড়ী যার নম্বর-ঢাকা মেট্টো-চ ১১-৯৫৯৫, যাহাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বিভিন্ন ষ্টিকার, মনোগ্রাম, ওয়াকি-টকি সেটসহ এসএসএফ এর ব্যবহৃত পোষাক ও ক্যাপ ব্যবহার করে আসছিল।

র‌্যাব আরও জানায় গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে যে, সে দীর্ঘদিন যাবৎ নিজেকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আইটি সেকশনের ডেপুটি ডাইরেক্টর হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারী কর্মকতা,কর্মচারীদেরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সাধারণ মানুষের নিকট হতে চাকুরী, পদোন্নতি, বদলী, বিদেশে প্রেরণের কথা বলে প্রতারনার মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

এ সময় র‌্যাবের অভিযানে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নকল কাগজ, ১টি লাইটার পিস্তল, ১টি খেলনা পিস্তল, এস এস এফ এবং লিখা চারটি জ্যাকেট, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারির নামে আইডি কার্ড, এডিশনাল ডাইরেক্টর এর নামে আইডি কার্ড, ডেপুটি ডাইরেক্টর এর নামে কাগজের প্রিন্ট করা কার্ড, ডেপুটি সেক্রেটারির কার্ড, ডেপুটি ডাইরেক্টর এর নামে ভিজিটিং কার্ড-৫০০ টি,সত্যায়িত প্রজ্ঞাপন-০২ পাতা, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অফিস আদেশ-০৪ পাতা, বিভিন্ন প্রকার ব্যক্তির নামে (এসএসএফ পরিচালক, সচিব, ব্রিটিশ হাইকমিশনার, বিভিন্ন ব্যাংকসহ বিভিন্ন অফিসের নামে)-১৫ টি সীল। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মনোগ্রামের ট্রাকসুট (শার্ট জলপাই রং-০১ টি, সাদাকালো-০১ টি),প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মনোগ্রাম ছোট/বড়-২০ টি, বাংলাদেশের মানচিত্র মনোগ্রাম-০৫ টি, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মনোগ্রাম যুক্ত আইডি কার্ডের ফিতা-০২ টি, এসএসএফ এর মনোগ্রাম সহ ফিতা-০৩ টি, ০২ টি মোবাইল ফোন, টয়োটা আলফার্ড সাদা রঙ্গের মাইক্রোবাস-০১ টি (যার নম্বর-ঢাকা মেট্টো-চ-১১-৯৫৯৫, পিএমও লিখা কালো ক্যাপ, এসএসএফ এর আইডি কার্ড, এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়।

সেইসাথে সরকারী কাজে বাধা প্রদানের জন্য উপস্থিত গাজীপুর জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জনাবা জান্নাতুল ফেরদৌস গ্রেফতারকৃত আসামী ইল্লাম শাহরিয়াকে বাংলাদেশ দঃ বিঃ ১৮৬ ধারা মোতাবেক ০৩(তিন) মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করে কারাগারে প্রেরণ করেন।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আইটি সেকশনের ডেপুটি ডাইরেক্টর পরিচয় দিয়ে সরকারী বিভিন্ন অফিসের আইডি কার্ড ব্যবহার করে প্রতারণার অপরাধে র‌্যাব বাদী হয়ে আসামীর বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, প্রতারক ইল্লাম শাহরিয়ারকে দেখে কখনও বুঝা যায়নি সে প্রতারক। তার কথাবার্তা, চলাফেরা দেখে নিরাপত্তা বাহিনীর অফিসারই মনে হতো। তাছাড়া তার কোমড়ে কাভার করা পিস্তল এবং হাতে থাকা ওয়াকিটকি তাদের বিশ্বাসের জায়গাটি আরও মুজবুত করেছে। স্থানীয় রেন্ট এ কার থেকে মাঝে মধ্যেই তিনি ভাড়ায় গাড়ি ব্যবহার করতেন। সে ক্ষেত্রে তিনি যে গন্তব্যের কথা বলে গাড়ি নিতেন সেখানে কখনই যেতেন না। তার চেয়ে কম দুরত্ব অথবা সম দুরত্বের অন্য জায়গায় যেতেন এবং নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া দিতেন। দৈনন্দিন বাজার করা থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় যে কোন কেনাকাটা করার ক্ষেত্রে প্রতারক শাহরিয়ার বাড়তি টাকা প্রদানের কথাও জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন