শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

থামছে না নদীভাঙন

যমুনা, পদ্মা, তিস্তা, সন্ধ্যা, মধুমতি পাড়ের মানুষ দিশেহারা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

নদী ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদী পাড়ের হাজার হাজার মানুষ। যমুনা, তিস্তা, পদ্মা, মধুমতির ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে মানুষের ঘর-বাড়ি, মসজিদ, মাদরাসা, স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। হারিয়ে যাচ্ছে আবাদী জমি। পদ্মা, তিস্তা ও যমুনার কয়েকটি স্পটে এখনো ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। যমুনার টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পদ্মার শরিয়তপুর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুরের মধুমতির ভাঙনে আলফাডা উপজেলার অনেক বাড়ি-ঘর, স্কুল-রাস্তা, মসজিদ-মাদ্রাসা, ঈদগাহ, কবরস্থান নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। শুধু শরীয়তপুরে পদ্মা নদীর ৩৯ কিলোমিটার তীর রয়েছে। ভাঙনে এবার ৮ হাজার পরিবার গৃহহীন হয়ে গেছে। গত পাঁচ বছরে পদ্মার ভাঙনে ওই জেলায় গৃহহীন হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার। ইনকিলাব প্রতিনিধিরা জানান, চরম দুর্দশায় পড়ে গেছেন নদী ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ।

যমুনার ভাঙন চলছেই
টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান- যমুনা নদীর পানি কমে যাওয়ায় এবং নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড়ে টাঙ্গাইলের বেলটিয়া ও গরিলা বাড়ি এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে করে ফসলি জমি, রাস্তা ঘাটসহ ইতোমধ্যেই প্রায় ২৮টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়ছে নদী পাড়ের মানুষজন। ভাঙনের তীব্রতা এতো বেশি যে মানুষ তাদের বাড়ি ঘর সরানোর সময়টুকু পাচ্ছেন না। ভাঙন রোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে ভাঙনকবলিত বিপন্ন মানুষ। স্থানীয়রা জানান, গত বুধবার থেকে হঠাৎ করে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড়ের বাঁধের বেলটিয়া বাড়ি এলাকায় নদী ভাঙন শুরু হয়। ক্রমান্বয়ে সে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। বেলটিয়া গ্রামের সোলায়মান হাসান জানান, ভাঙনের কবলে পরে তার দু’টি ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ এলাকায় বাঁধ হলে পরবর্তীতে ভাঙন রোধ করতে সম্ভব হতো।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সেখানে দ্রæত জিও ব্যাগ ফেলা হবে। ভাঙন রোধে যা-যা করা দরকার সবই করা হবে। কিন্তু এলাকাবাসীর অভিযোগ ভাঙন রোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপই নেয়া হচ্ছে না।

গ্রাম গেছে মধুমতির পেটে
ফরিদপুর সংবাদদাতা জানান- মধুমতির ভাঙনে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় অনেক বাড়িঘর, স্কুল-রাস্তা, মসজিদ-মাদরাসা, ঈদগাহ, কবরস্থান নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সারেজমিন গিয়ে ভাঙন দৃশ্য দেখা যায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারের কর্মকর্তারা জানান ভাঙন পরিস্থিতির কথা স্বীকার করেন। আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এনাম হাসান শিপন বলেন, তার ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামে দুই কিলোমিটারজুড়ে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই শিখাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দারুল সালাম দাখিল মাদরাসা, একটি মসজিদ ও বড় কবরস্থান নদীগর্ভে চলে গেছে।
আমার ইউনিয়নের একটি গুচ্ছগ্রাম ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬৫টি ঘর নদীতে চলে গেছে। আংশিক ভাঙনের স্বীকার হয়েছে শিকারপুর সড়ক ও চরডাঙ্গা-চরআজমপুর সড়কটি।

এছাড়া গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ভাঙনকবলিত ১১৮টি পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানান চেয়ারম্যান এনাম হাসান।
পাঁচুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সরদার বলেন, দক্ষিণ পাঁচুড়িয়া পুরো গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। উত্তর চর-নারানদিয়া গ্রামের কয়েকশ’ বাড়িঘর, ফসলি জমি, বাঁশতলা বাজার থেকে বোয়ালমারি উপজেলায় যাতায়াতের পাকা সড়কের তিন কিলোমিটার নদীগর্ভে চলে গেছে। পশ্চিম চর-নারানদিয়া গ্রামের প্রাথমিক সরকারি বিদ্যালয় ও দক্ষিণ চর-নারানদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। পঞ্চিম চর-নারানদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নাব খাতুন জানান, তাদের বিদ্যালয়টি ভাঙনের ৩০ ফুটের মধ্যে রয়েছে। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ভয়েই স্কুলে পাঠাচ্ছে না।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম জাহিদ হাসান ভাঙনকবলিত ২০ গ্রামে মানুষের অসহায়াত্বের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দ্বিতীয় দফায় মধুমতির পানি বৃদ্ধির ফলে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনকবলিত মানুষগুলো অসহায়ের মত তাদের বসতবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন। পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের বাঁশতলা সড়কের অধিকাংশ এবং টগরবন্দ এলাকার দুটি পাকা সড়কের অংশিক নদীরগর্ভে চলে গেছে।

এ বিষয়ে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমাদ বলেন, নদীতে এখন প্রচুর স্রোত। এর মধ্যে জরুরি কাজ করা কঠিন। স্রোত না কমলে কাজ করা যাবে না। এই ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধ করতে ব্যয় হবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। প্রয়োজনমত অর্থ বরাদ্দ পাচ্ছি না। এটাই সমস্যা।

সন্ধ্যা নদীতে বিলীন স্কুলঘর
বরিশালের উজিরপুর সংবাদদাতা জানান, বরিশালের উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের ৯০ নম্বর আশোয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত ৮ অক্টোবর থেকে ভাঙন শুরু হলে এখন নদীর পেটে বিদ্যালয়টি বিলীন হয়ে গেছে। নদীর এ ভাঙন দেখে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নদীর তীরের অনেক মানুষই ইতোমধ্যে তাদের স্থাপনা, বসতঘর ও মালামাল সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। তারা জানায়, উজিরপুরে সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে গত কয়েক বছরে গুঠিয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের বসতঘর, আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এ বছর নদী ভাঙনে বিলীন হলো বিদ্যালয়টি।

আশোয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জগদিশ চন্দ্র হালদার জানান, গত বছরের শুরুতে বিদ্যালয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল। তবে ভাঙন শুরু হওয়ায় শিক্ষার্থী কমে গেছে। এখন বিদ্যালয়ে মাত্র ৫৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এদিকে, গুঠিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ডা. দেলোয়ার হোসে বলেন, আগে থেকেই স্কুলটি নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে ছিল। বেশ কয়েকদিন আগে স্কুলের ভবনের কিছু জায়গায় ফাটল ধরে। দুদিন আগে ভবনটির ধসে পড়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন