বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

তলানীতে শেয়ারবাজার

ডিএসইএক্স তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

নানামুখী পদক্ষে নিলেও কোনো পদক্ষেপেই শেয়ারবাজারের পতন ধারা আটকানো যাচ্ছে না। পতন ঠেকাতে নেয়া সব পদক্ষেপই যেন ব্যর্থ হচ্ছে। অব্যাহত দরপতনের কবলে পড়ে গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমেছে।
মূল্য সূচকের ধারাবাহিক পতনের সঙ্গে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে তারল্য সংকট। কমতে কমতে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ আবার ২০০ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে। এর মাধ্যমে চলতি বছরের জুলাইয়ের পর ডিএসইর লেনদেন আবারও ২০০ কোটি টাকার ঘরে নামল।
শেয়ারবাজারের এমন দুরবস্থায় দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা। প্রতিনিয়ত তারা পুঁজি হারাচ্ছেন। দিন যত যাচ্ছে পুঁজি হারানোর শঙ্কা ততো বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের হাহাকার। এমন করুণ দশা দেখা দিলে সরকারের হস্তক্ষেপে সম্প্রতি শেয়ারবাজারের জন্য বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে রেপোর (পুনঃক্রয় চুক্তি) মাধ্যমে অর্থ সরবরাহের সুযোগ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর)।
এদিকে শেয়ারবাজারে তারল্য বাড়ানোর লক্ষ্যে ২ হাজার কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন বাংলাদেশ (আইসিবি)। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি সরকারি ৫টি ব্যাংকের কাছে এ টাকা চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবুল হোসেন বলেন, সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী এবং বিডিবিএলের কাছে ২০০ কোটি করে মোট এক হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আরও এক হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো এ টাকা দিলে তা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হবে।
পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে এসব পদক্ষেপ নেয়া হলেও শেয়ারবাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। গত কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায় গতকালও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সবকটি মূল্য সূচকের বড় পতন হয়েছে।
ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ৪৮ পয়েন্ট কমে চার হাজার ৭৬১ পয়েন্টে নেমেছে। এর মাধ্যমে ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বরের পর সূচকটি সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গেল। ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর সূচকটি ছিল চার হাজার ৭৫০ পয়েন্টে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি চালু হওয়া ডিএসইএক্স শুরুতে ছিল চার হাজার ৫৫ পয়েন্টে। এরপর উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে সূচকটি ২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর প্রথম পাঁচ হাজার পয়েন্ট স্পর্শ করে। এক পর্যায়ে ২০১৭ সালের ২৬ নভেম্বর সূচকটি ছয় হাজার ৩৩৬ পয়েন্টে উঠে। এরপর কয়েক দফা উত্থান পতন হলেও সূচকটি চলতি বছরের আগে আর পাঁচ হাজার পয়েন্টের নিচে নামেনি। তবে চলতি বছরের জুলাইতে সূচকটি পাঁচ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে যায়। এর কিছুটা উত্থান-পতন হলেও বাজারে পতনের প্রবণতায় থাকে বেশি। ফলে বাজারের গতি ফেরাতে তৎপর হয়ে উঠে সরকার। কিন্তু সব বাঁধ (পতন ঠেকানোর প্রতিবন্ধকতা) ভেঙে দিয়ে পতনের মধ্যেই রয়েছে শেয়ারবাজার। এর ধারাবাহিকতায় ডিএসইএক্স তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গেল।
প্রধান সূচকের পাশাপাশি এদিন পতন হয়েছে অপর দুই সূচকের। এর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ ১১ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৯৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই-৩০ সূচক ১৫ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৩৭৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এর মাধ্যমে টানা পাঁচ কার্যদিবস সবকটি সূচকের পতন হল।
মূল্য সূচক ধসে পড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। লেনদেনে অংশ নেয়া মাত্র ৪১ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ২৬৭টির। আর ৩৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এদিকে চলতি বছরের ১৬ জুলাইয়ের পর ডিএসইতে আবারও তিনশ কোটি টাকার কম লেনদেন হয়েছে। গতকাল দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৯৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এর আগে গত ১৬ জুলাই ডিএসইতে ২৭১ কোটি ৭৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এরপর গত তিন মাসের মধ্যে ডিএসইতে আর তিনশ কোটি টাকার নিচে লেনদেন হয়নি।
অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্য সূচক সিএএসপিআই ১৪৫ পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার ৫১০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৩৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩০টির দাম বেড়েছে। কমেছে ১৮১টির। আর ২৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন