বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

৯ দিন আটকে রেখে কিশোরীকে গণধর্ষণ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

নরসিংদীতে অপহরণের পর ৯ দিন আটকে রেখে কিশোরীকে গণধর্ষণের অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে পাবনায় শিশু তানিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যা করে ইট বেঁধে পানিতে নিক্ষেপের ঘটনায় গ্রেফতার হয়নি কেউ। এ ঘটনার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী। অন্যদিকে যশোরে বিয়ের প্রলোভনে যুবলীগ নেতার কাছে ধর্ষণের শিকার হয়েছে এক তরুণী। এ ঘটনায় মামলা হলেও আসামীকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপ-সচিব এ কে এম রেজাউল করিম রতনকে। গাজীপুরে প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণের দায়ে ২ জনের যাবজ্জীবন দেয়া হয়েছে। 

নরসিংদী : গত রোববার রাতে অপহরণকারী দলের মূলহোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে গত ৫ অক্টোবর ওই কিশোরীকে মাধবদী থানার দরগাবাড়ি এলাকা থেকে অপহরণ করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার দেবাই গ্রামের বিল্লাল হোসেনের ছেলে সুজন (২৭), সাতগ্রাম গ্রামের মধু মিয়ার ছেলে রুবেল মিয়া (২৬), ময়মনসিংহ সদর উপজেলার রহমতপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে মো. ফয়সাল মিয়া (২০), লালমনিরহাট সদর উপজেলার চরকুলাঘাপ গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে আছাদুল ইসলাম (১৯) ও মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চালা গ্রামের নিশাত মোল্লার ছেলে শাকিল মোল্লা (২২)।
পুলিশ ও নির্যাতনের শিকার কিশোরীর পরিবার জানায়, গত ৫ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই কিশোরীকে মাধবদীর দরগাবাড়ি এলাকার রাস্তা থেকে মাইক্রোবাসযোগে অপহরণ করে অপহরণকারীরা। অপহরণের চার দিন পর ৯ অক্টোবর কিশোরীর বাবার মোবাইলে কল করে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। অন্যথায় কিশোরীকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়। কিশোরীকে উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে তার বাবা বাদী হয়ে গত ১২ অক্টোবর মাধবদী থানায় মামলা করেন।
মামলার পর মুক্তিপণ দাবি করা মোবাইল নম্বর ট্র্যাকিং শুরু করে পুলিশ। পরে অপহরণকারী চক্রের এক সদস্য মুক্তিপণের টাকা নিতে আশুলিয়ার নরসিংহপুর এসে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। তার দেয়া তথ্যমতে সাভারের গোমাইল উত্তরপাড়ার একটি বাড়ি থেকে অপহৃত কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়।
এ সময় অপহরণে সহায়তাকারী ফয়সাল, শাকিল ও আছাদুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হলেও অপহরণকারী দলের মূলহোতা সুজন পালিয়ে যায়। পরে তাকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।
মাধবদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আববু তাহের দেওয়ান বলেন, কিশোরীকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণ ও গণধর্ষণে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
পাবনা: পাবনার সুজানগরে শিশু তানিয়া হত্যার প্রতিবাদে ও খুনিদের শাস্তির দাবিতে সোমবার মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গত রোববার দুপুরে শরীরে ইট বাঁধা অবস্থায় তানিয়ার মরদেহ একটি পুকুর থেকে উদ্ধার করে সুজানগর থানার পুলিশ। হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোমবার দুপুরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সুজানগর থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) হাদিউল ইসলাম জানান, নিহত তানিয়ার বাবা বাদী হয়ে গত রোববার রাতে মামলা দায়ের করেন। এরপরই এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের বরখাপুর এলাকার হায়দার কাজীর ছেলে আরজু কাজী (২৭), রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে বাবু (২৫) ও রব্বানী বিশ্বাসের ছেলে আক্কাস বিশ্বাস আকাইসহ (৩০) তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সোমবার দুপুরে তাদেরকে পাবনা আমলি আদালতে পাঠানো হয়।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সুজানগর সার্কেল) ফরহাদ হোসেন জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শিশু তানিয়াকে ধর্ষণের পর তাকে হত্যা করে শরীরের সঙ্গে ইট বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়েছিল। এ ঘটনাটি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢাকা : এক নারীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেফতার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপ-সচিব এ কে এম রেজাউল করিম রতনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রোববার তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ।
এ সময় হাজারীবাগ থানায় করা মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওই থানার উপ-পরিদর্শক রাজিব হাসান। অন্যদিকে তার আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। ঢাকা মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসী আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে জামিন শুনানির জন্য ১৬ অক্টোবর দিন ধার্য করেন। এর আগে শনিবার রাজধানীর মধুবাজার এলাকা থেকে রেজাউল করিম রতনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত ৭ অক্টোবর স্থানীয় এক নারী রেজাউল করিম রতনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ করে হাজারীবাগ থানায় একটি মামলা করেন।
গাজীপুর : গাজীপুরে প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণের দায়ে দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের এক লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।
রোববার দুপুরে গাজীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম এল বি মেছবাহ উদ্দিন আহমেদ এ রায় দেন। দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকার ফারুক (৩৩) ও রাজেন্দ্রপুর পূর্বের টেক এলাকার বাদশা মিয়া (৩২)। রায় ঘোষণার সময় দন্ডপ্রাপ্তরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
যশোর : বিয়ের আশ্বাস দিয়ে যশোরের অভয়নগরে এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নাজিম মোল্যা (৩৫) নামের এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বাগেরহাট জেলার এক তরুণীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অভয়নগরে এনে ধর্ষণ করার অভিযোগে মামলাটি হয়েছে। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন যুবলীগ নেতা নাজিম মোল্যা।
অভিযুক্ত নাজিম মোল্যা অভয়নগর উপজেলার সিদ্ধিপাশা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি। তিনি সোনাতলা গ্রামের মৃত নওশের মোল্যার ছেলে।
ঘটনার শিকার মেয়েটি জানায়, তার বাড়ি বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার দেবুরহাট গ্রামে। মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে নাজিম মোল্যার পরিচয় হয়। এরপর দুইজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত (৯ অক্টোবর) বুধবার তাকে বাগেরহাট থেকে বিয়ে করার কথা বলে অভয়নগরে নিয়ে আসেন নাজিম। এরপর নাজিম তার নিজ গ্রাম সোনাতলার সাহিদুল সরদারের বাড়িতে নিয়ে যান। ওইদিন থেকে নাজিম তার ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করেন। বৃহস্পতিবার গ্রামবাসী তাকে উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
মেয়ের বাবা বলেন, অভয়নগর থেকে পুলিশ খবর দিলে তিনি চলে আসেন। তার মেয়ের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। তিনি নাজিম মোল্যার মতো প্রতারকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
এ ঘটনায় স্থানীয় আমতলা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই গৌতম মন্ডল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ওই মেয়েটির পরিবারকে খবর দেয়া হয়েছে। শনিবার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এদিনই নাজিম মোল্যাসহ দু’জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Abdul Hamid Khokon ১৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১:২৪ এএম says : 0
গুম খুন হত্যা ধর্ষন থেকে শুরু করে যত অপকর্ম সব জায়গায় হয় ছাত্রলীগ না হয় যুবলীগ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই বলেই এধরনের নোংরা অপকর্ম বেড়েই চলছে আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন এবং হেদায়েত দান করুন
Total Reply(0)
A. H. Azad ১৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১:২৪ এএম says : 0
আচ্ছা ৪৮ বছর আগের মা বোনের ইজ্জত লুটের জন্য যদি ফাসি হয় তাইলে এদের কেন কোন বিচার হয়না..??
Total Reply(0)
JoYnul IslAm ১৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১:২৪ এএম says : 0
বিয়ের যযদি এতো লোভ, তাইলে পরিবারকে বলতে পারত
Total Reply(0)
AJ M Saifur Rahman ১৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১:২৪ এএম says : 0
কি যে শুরু হয়েছে বাংলাদেশে
Total Reply(0)
লুৎফর রহমান ১৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১:২৫ এএম says : 0
Dhorshon khub Kharap kaj. ...tay tader kotin sashti aktay cross fiar...
Total Reply(0)
Kabir Humayun ১৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১:২৬ এএম says : 0
সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে ,তাহলেই মহামারী আকার থেকে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কোন দেশ ই এটা চিরতরে বন্ধ করতে পারে নাই হয়তোবা সম্ভব ও নয়।
Total Reply(0)
শফিক রহমান ১৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১:২৬ এএম says : 0
কর্মক্ষেত্রে, পরিবহনে, স্কুল, মাদ্রাসায় এমন কি কোচিং সেন্টারেও নারীর শীলতাহানী করা হচ্ছে। ধর্ষণের পর হত্যাও করা হচ্ছে। এ সকল ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ অভিযোগ নিতে টালবাহানা করে। অন্যদিকে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সালিশের নামে অভিযুক্তকে রক্ষা করার চেষ্টা করে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন