শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ন্যায় কাজের আদেশ ও অন্যায় কাজের প্রতিরোধ করা

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

উম্মতে মুহাম্মদের উৎকৃষ্ট গুণ বা পরিচিতি হচ্ছে ন্যায় কাজের আদেশ দান করা এবং অন্যায় কাজ প্রতিরোধ করা। এ প্রসঙ্গে আল কুরআনে এরশাদ হয়েছে- ‘তোমরাই হলো সর্বোত্তম উম্মত। তোমাদেরকে মানুষের কল্যাণ সাধনের জন্য পৃথিবীতে আবির্ভূত করা। তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে এবং অন্যায় ও পাপ কাজ হতে মানুষকে বিরত রাখবে। (সূরা আল ইমরান : আয়াত ১৬৮)।

বস্তুত: মানুষের জীবন বহুমুখী কর্মব্যস্ততার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ন্যায় কাজের আদেশ এবং অন্যায় কাজের প্রতিরোধ দিয়ে সকলেই যদি ব্যাপৃত হয়ে যায়, তাহলে রাষ্ট্রে, সমাজে ও জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে আসা স্বাভাবিক ব্যাপার। এই অভিপ্রেত অবস্থাকে সামাল দেয়ার জন্য আল্লাহপাক রাষ্ট্র, সমাজ ও জনগণের মধ্য হতে কতিপয় লোককে এ দায়িত্ব পালন করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল-কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক অবশ্যই থাকতে হবে যারা কল্যাণ ও মঙ্গলের দিকে আহ্বান করবে, ন্যায় ও সৎকাজের নির্দেশ দিবে এবং অন্যায় ও পাপ কাজ হতে বিরত রাখবে। যারা এ কাজ আঞ্জাম দেবে পরিণামে তারা সফল হবে।’ (সূরা আল ইমরান : আয়াত ১০৪)।

পরিবার, সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্র নারী ও পুরুষের দ্বারাই গঠিত হয় এবং এই উভয় শ্রেণীর লোকের দ্বারাই এই পৃথিবী ফুলে ফলে, রস গন্ধে, সুশোভিত হয়ে ওঠে। তবে নারী ও পুরুষের মধ্যে যারা ঈমানদার ও বিশ্বাসী তাদের মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব এবং গুণাবলী একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। এ প্রসঙ্গে আল-কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘অবশ্যই মুমিন পুরুষ ও মুমিন স্ত্রীলোক পরস্পর পরস্পরের দোসর, সঙ্গী ও বন্ধু। তারা যাবতীয় ভালো কাজের নির্দেশ দেয়, সকল অন্যায় ও পাপ কাজ হতে বিরত রাখে। (সূরা তাওবা : আয়াত ৭১)।

মুমিন নর এবং মুমিন নারীদের উচিত নম্রতা ও ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন করা এবং মূর্খ লোকদের এড়িয়ে চলা। আল-কোরআনে এই বিশেষত্বটি এভাবে তুলে ধরা হয়েছে, ‘তোমরা নম্রতা ও ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন করো, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খ ও অজ্ঞ লোকদের এড়িয়ে চলো।’ (সূরা আরাফ : আয়াত ১৯৯)।

ন্যায় কাজের আদেশ ও অন্যায় কাজে প্রতিরোধ না করার দরুন প‚র্ববর্তী উম্মত বনি ঈসরাইলের সদস্যরা কুফুরীর পথে গা ভাসিয়ে দিয়েছিল এবং হযরত দাউদ আ. ও হযরত ঈসা আ.-এর প্রতি বিদ্রোহ প্রকাশ করেছিল। এতে তারা খুবই বাড়াবাড়ি করেছিল এবং পরস্পরকে পাপ কাজ হতে বিরত না রেখে অত্যন্ত জঘন্য কর্মপন্থা গ্রহণ করেছিল। আল-কোরআনে তাদের এই পাপের কথা এভাবে তুলে ধরা হয়েছে, ‘বনী ইসরাইলের মধ্যে যারা কুফরির পথ অবলম্বন করেছে, তাদের প্রতি দাউদ ও ঈসা ইবনে মরিয়ম এর জবানিতে অভিশাপ বর্ষণ করা হয়েছে। কারণ তারা বিদ্রোহী হয়ে পড়েছিল এবং অত্যন্ত বাড়াবাড়ি শুরু করে দিয়েছিল। তারা একে অপরকে পাপ কাজ হতে বিরত রাখা পরিহার করে ছিল, অত্যন্ত জঘণ্য কর্মপন্থাই তারা অবলম্বন করেছিল।’ (সূরা মায়েদা : আয়াত ৭৮-৭৯)।

আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত নবী মুহাম্মদ সা. কে ন্যায় কাজের আদেশ ও অন্যায় কাজের প্রতিরোধ করার সার্বিক দায়িত্ব প্রদান করেছিলেন। তিনি বিশ্বনবীকে সরাসরি বলে দিয়েছেন, হে নবী, যে জিনিসের হুকুম আপনাকে দেয়া হচ্ছে তা উচ্চকণ্ঠে জানিয়ে দিন। (সূরা হিজর : আয়াত ৯৪)।

তবে, যারা কুফরীতে নিমগ্ন হবে তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির হাত হতে রেহাই পাবে না। আল-কোরআনে ঘোষণাই জারি করা হয়েছে- ‘আমি এমন লোকজনদেরকে মুক্তি প্রদান করলাম, যারা খারাপ কাজ হতে বিরত থাকত। যারা সীমালঙ্ঘনকারী জালেম ছিল তাদেরকে তাদের বিপর্যয়মূলক কাজের জন্য কঠিন আযাবে পাকড়াও করলাম। (সূরা আরাফ : আয়াত ৯৫)।

হাদীস শরীফে ন্যায় কাজের আদেশ ও অন্যায় কাজে প্রতিরোধের বিষয়টি খোলসা করে বয়ান করা হয়েছে। হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা: হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন কোনো খারাপ কাজ হতে দেখে সে যেন হাত দিয়ে তা বন্ধ করার প্রচেষ্টা চালায়, যদি সে ক্ষমতা না রাখে তবে যেন মুখের ভাষা দ্বারা তা বন্ধ করে দেয়, যদি সে এতোটুকু ক্ষমতাও না রাখে তবে যেন সে অন্তরের ধারা তা ঘৃণা করে। আর এটা হল ইমনের দুর্বলতম স্তর। (সহিহ মুসলিম)।

এই হাদিসে ঈমানের দুর্বলতম স্তরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই স্তরে অবস্থানকারীরা মুমিন থাকবে কি-না এই সন্দেহের নিরসন করেছেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সা.। হযরত ইবনে মাসউদ রা: হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন. আমার পূর্বে কোনো জাতির নিকট যে নবীকেই পাঠানো হয়েছে, তার সহযোগিতার জন্য তার উম্মতের মধ্যে একদল সাহায্যকারীও নির্ধারণ করা হতো। তারা তার সুন্নতকে আঁকড়ে ধরত এবং তার নির্দেশ অনুসরণ করত। তাদের পরে এমন কিছু লোকের উদ্ভব হলো, নবীরা যা বলতো তা নিজেরা করত না এবং এমন কাজ করতো যা করার নির্দেশ দেয়া হয়নি। অতএব, এই শ্রেণীর লোকদের বিরুদ্ধে যে ব্যক্তি হাত দিয়ে জিহাদ করবে সে মুমিন, যে ব্যক্তি মুখ দিয়ে এদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে সেও মুমিন, আর যে ব্যক্তি অন্তর দিয়ে এদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে সেও মুমিন বলে গণ্য হবে। এরপর আর সরিষার দানা পরিমাণও ঈমানের স্তর নেই। (সহীহ মুসলিম)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Taimur Rahman Rasel ১৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
‘‘তোমাদেরকে উত্তম জাতি হিসাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমাদের কাজ হলো মানুষদের সৎ পথে আহবান করবে এবং অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে।’’ -সূরা আলে ইমরান: ১১০.
Total Reply(0)
Mir Irfan Hossain ১৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
‘‘মুমিন পুরুষ ও মুমিন স্ত্রী লোক এরা পরস্পর বন্ধু ও সাথী। যাবতীয় ভালো কাজের নির্দেশ দেয়, সব অন্যায় ও পাপ কাজ হতে বিরত রাখে, নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এরা এমন লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর রহমত অবশ্যই নাযিল হবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্বজয়ী, সুবিজ্ঞ ও জ্ঞানী।’’ -সূরা আত-তওবা: ৭১.
Total Reply(0)
Jahangir Alam ১৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৬ এএম says : 0
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা নির্দেশিত ন্যায়ের আদেশ করা আর অন্যায়ের নিষেধ করার ক্ষমতা ও দায়িত্ব কার? ব্যক্তির? রাষ্ট্রের?
Total Reply(0)
Nahid-ul Karim ১৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৬ এএম says : 0
কোনভাবেই কোন সমাজেই ন্যায়ের আদেশ করার কাজ ও অন্যায়ের প্রতি বাধা-নিষেধ আরোপের প্রচেষ্টা বন্ধ করা যাবে না। যদি এ কাজ বন্ধ করা হয় তবে শান্তিপূর্ণ বসবাস ও জীবন-ধারন করা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব হবে না। সামাজিক ও আইন-শৃক্মখলাগত নৈরাজ্য নেমে আসবে।
Total Reply(0)
M N Ahmed ১৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৬ এএম says : 0
কিন্তু ন্যায় বা ভালো কাজের আদেশ করা বর্তমানে কতটুকু কঠিন কাজ হয়ে গেছে তা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে।
Total Reply(0)
Jalal Uddin Ahmed ১৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৭ এএম says : 0
রাষ্ট্র বা রাজনৈতিক দিকের অবস্থা আরও ভয়াবহ। বিভিন্ন ক্ষমতাসম্পন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তির ছত্রছায়াতেই বসবাস করছে অপরাধীরা। যে বা যাদের কাজ অপরাধীকে শাসন করা তিনি বা তারাই যদি অপরাধী লালন করেন, তাহলে পরিস্থিতির অবনতি হতে বাধ্য। আর বাংলাদেশে এখন চলছে সেই অবনতিশীল পরিস্থিতি। যে কারণে সাধারণ মানুষও উৎসাহ আর সাহস হারাচ্ছে ন্যায়ের আদেশের আর অন্যায়ের নিষেধের। সমাজ সংহতি ও শান্তির জন্যে এটি একটি বড় ধরনের দুঃসংবাদ।
Total Reply(0)
Badrul Haque ১৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৭ এএম says : 0
আমরা আইনের কথা বলি; বলি আইন প্রয়োগের কথাও। কিন্তু এসব কে করবে? মানুষই তো? মানুষ যদি ভয়ে পিছিয়ে যায় তাহলে কিভাবে এ সকল অপকর্মের প্রতিবিধান করা সম্ভব হবে? আমি দায়িত্ব নেবো না, অথচ চাইবো সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাক! এতো বেশ মজার আবদার!
Total Reply(0)
Nazmul Huda ১৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৮ এএম says : 0
আমরা কি খারাপ পরিস্থিতির বাধ্যগত দাস হয়ে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবো; নাকি পবিত্র কোরআনের নির্দেশানুযায়ী দেশবাসী সবাই অন্যায়ের প্রতিরোধ করে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত হবো? আমাদের ব্যক্তিগত জীবন ও সামষ্টিক সমাজকে নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্ন রাখতে হলে আমাদেরকে শেষোক্ত পথই বেছে নিতে হবে।
Total Reply(0)
Dr.Noor Mohammad ১৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১১:০৬ এএম says : 0
সৎকাজের আদেশ দিতে হলে ক্ষমতা দরকার।ক্ষমতা না থাকলে আদেশ দেয়া যায়না।তেমনি নিষেধ করতে হলেও ক্ষমতা দরকার। ক্ষমতা না থকলে আদেশ নিষেধ কিছুই করা যায়না। এ কাজটি ইসলামী রাস্ট্র প্রধানের কাজ।এ কাজের ক্ষমতা লাভ করতে হলে মুসলিম সমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসলামের রাজ কায়েম করতে হবে।অন্যথায় আদেশ নিষেধ কিছুই করা যাবেনা।শুধু তেলমারা যাবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন