মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পাতাল রেলের যুগে বাংলাদেশ

একনেকে মেট্রোরেলের দু’টি লাইনসহ ১০ প্রকল্প অনুমোদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

পাতাল রেল এখন আর স্বপ্ন নয়। অনুমোদন পেয়েছে ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টের (এমআরটি) লাইন-১ ও লাইন-৫ প্রকল্প। এর মাধ্যমে আমেরিকা, ইউরোপ, সিঙ্গাপুর মতো উন্নত দেশের ন্যায় পাতাল রেলের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। কারন এই লাইনের বড় অংশ যাবে মাটির নিচ দিয়ে বা পাতাল। এজন্য ৯৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে আলাদা দুটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। প্রকল্প দুটিতে বড় অংকের ঋণ সহায়তা দেবে জাপানের সংস্থ জাইকা। যদিও এই ব্যয় ভারত সহ বিশে^র অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশী। এ বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, জমি অধিগ্রহনে তিনগুন ব্যয় বেশী ও অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে। ফলে ব্যয় বেশী হওয়া অস্বাভাবিক নয়।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) বৈঠকে মেট্রোরেলর দুই প্রকল্পসহ মোট ১০ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট (এমআরটি) লাইন-১ ও লাইন-৫ এর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পটির মাধ্যমে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর স্টেশন এবং নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণ হবে। এটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১৩ হাজার ১১১ কোটি টাকা এবং জাইকা থেকে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা ঋণ হিসাবে পাওয়া যাবে। চলতি বছর থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। একই সঙ্গে এমআরটি লাইন-৫ আওতায় নর্দান রুটটি হবে হেমায়েতপুর-আমিনবাজার-গাবতলি-মিরপুর ১-মিরপুর ১০-কচুক্ষেত-বনানী-গুলশান ২-নতুন বাজার-ভাটারা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার। এটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১২ হাজার ১২১ কোটি টাকা এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা) থেকে ২৯ হাজার ১১৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। ডিএমটিসিএল চলতি বছর থেকে ২০২৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

১২ শতাংশ ডিসকাউন্ট রেট ধরে প্রকল্প দুটির আর্থিক ও অর্থনৈতিক আয়-ব্যয় বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বিশ্লেষণ অনুযায়ী, দুটি প্রকল্পই আর্থিকভাবে লাভজনক নয়। তবে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। এ অবস্থায় আর্থিক আয়-ব্যয় বিশ্লেষণের ফল বিবেচনায় না নিয়ে অর্থনৈতিক আয়-ব্যয় বিশ্লেষণের ফল বিবেচনায় নেয়া হয়েছে প্রকল্প দুটির ক্ষেত্রে। আর্থিক ক্ষতি হিসেবে একটিতে দেখানো হচ্ছে দুই হাজার ৪২৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা এবং অন্যটিতে সাত হাজার ৩২৭ কোটি ৯৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তবে অর্থনৈতিক দিক থেকে একটি প্রকল্পে ৯৪৯ কোটি ৯৭ লাখ এবং অন্যটিতে পাঁচ হাজার ৩০ কোটি ৪৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা লাভ দেখানো হচ্ছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেলের বাস্তবায়নকারী সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এন সিদ্দিকী আমাদের আশস্থ করেছেন যথা সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের আগে এবং যতটা সম্ভব অর্থ সাশ্রয় করে প্রকল্প দুটি সমাপ্ত করা হবে। এই মেট্রোরেল হবে ব্যয় সাশ্রয়ী, আরামদায়ক। ইলেকট্রনিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে ফলে নির্দিষ্ট সময় এমনকি সেকেন্ডের হিসাবও ঠিক থাকবে।

প্রকল্পের বাড়তি ব্যয় নিয়ে প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুসারে জমি অধিগ্রহনে বাজারমূল্যের তিনগুন দাম দেয়া হয়। এছাড়া আমাদের এ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে। ফলে ভারত বা অন্য দেশের চেয়ে ব্যয় বেশী হওয়াটা একেবারে অয়ৌক্তিক নয়। তিনি বলেন, প্রকল্পগুলোকে সড়কের সবচেয়ে বেশি ব্যয়ের প্রকল্প বলা যায়। তবে নির্মাণ শেষ হলে ঢাকা হবে বিশ্বমানের শহর। তবে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনার বিষয়ে মন্ত্রী জানান, মেট্রোরেলের জন্য হাতিরঝিল যেন নষ্ট না হয়। এছাড়া, মেট্রোরেলের কারণে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হলেও কোনো ব্যাঘাত ঘটানো যাবে না। বর্তমানে জাপানের অর্থায়নে ঢাকার উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা। ২০২১ সাল নাগাদ শেষ হতে পারে।

সভায় মেট্রোরেলের এই দুটি প্রকল্প ছাড়াও আরও ৮টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩০ হাজার ৪৬৬ কোটি, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৬৯ হাজার ৪৩ কোটি টাকা খরচ করা হবে এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৫১৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, ফেনী-নোয়াখালী জাতীয় মহাসড়কের বেগমগঞ্জ থেকে সোনাপুর পর্যন্ত ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৮৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ডোমার-চিলাহাটি-ভাউলাগঞ্জ-জলঢাকা এবং জলঢাকা-ভাদুরদরগাহ-ডিমলা জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪২১ কোটি টাকা। কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ-চামড়াঘাট জেলা মহাসড়ক যথাযথমানে উন্নীতকরণসহ ছয়না-চৌদ্দশত বাজার সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭৩১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। ঢাকাস্থ মিরপুর পাইকপাড়ায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। ঢাকার আজিমপুরে বিচারকদের জন্য বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১২৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ইরিগেশন ম্যানেজমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট ফর মুহুরী ইরিগেশন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৫৮০ কোটি টাকা। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব নিরসনে সিলেট বন বিভাগ পুন:বনায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭০ কোটি টাকা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব নুরুল আমিন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এবং ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গীস।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Salim Malik ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:২৮ এএম says : 0
Excilent.
Total Reply(0)
Rasel Hossain ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 0
শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে এসব করা সমভাব
Total Reply(0)
Mohamed Sabbir ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 0
সবকিছু ঢাকা কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। প্রদেশ গঠন করা খুবই জরুরী হয়ে পরেছে। না হলে চরম বৈষম্যের শিকার হবে দেশের ৬৩ জেলার মানুষ।
Total Reply(0)
সরকার কালাম বাউল ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ২:০৪ এএম says : 0
শুভ কামনা রইলো
Total Reply(0)
Bhuiyan Saiful Azim ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ২:০৫ এএম says : 0
বাংলাদেশ ন্যায়বিচার মানবতা সমান অধিকার মিথ্যা আর প্রতারণামূলক উন্নয়ন দুর্নীতি দখলমুক্ত সভ্য দেশে কখন প্রবেশ করবে ?
Total Reply(0)
মিনার মুর্শেদ ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ২:০৬ এএম says : 0
অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে পাতালে রেলের যে নক্সা করা হয়েছে প্রাকৃতিক দূর্যোগ বিশেষ করে ৬ মাত্রার ভুমিকম্প হলেই পাতালে হারিয়ে যাবে রেল লাইন সহ গোটা ঢাকা শহর......
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন