শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা গ্রামীণফোনের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

কল করলেই কথা শুনতে পাননা ঠিকমতো। এক প্রান্তের গ্রাহক কথা শুনলে অন্যপ্রান্তে শোনেন না। আবার কল করলে মিনিট সচল আছে কিন্তু কোন কোথা শোনা যাচ্ছে না, কেটে নেওয়া হচ্ছে ব্যালান্স এমন অভিজ্ঞতাও পাচ্ছেন বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের গ্রাহকরা। ফলে মোবাইল অপারেটরটির ভয়েস সেবার মান নিয়ে অতিষ্ট হয়ে ওঠেছেন গ্রাহকরা। বাদ যাচ্ছেন না ইন্টারনেট গ্রাহকরাও। গতি নিয়ে প্রতারণা, কারণে অকারণে বিল কেটে নেয়া, ফোরজি সেবার কথা বলে টুজি’র কচ্ছপ গতি, প্যাকেজ প্রতারণাতে অভিযোগে অন্ত নেই গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে। এছাড়া গ্রাহকদের না জানিয়েই এসএমএসের মূল্য বৃদ্ধিরও অভিযোগ রয়েছে গ্রাহকদের। বিরক্ত গ্রাহকরা এই খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থাতে (বিটিআরসি) অভিযোগ জানিয়েও সুফল পাচ্ছেন না। তারপরও অনেকই অভিযোগ দিচ্ছেন এই প্রতিষ্ঠানে। প্রতিদিনই যথার্থ সেবা না পাওয়া, বিড়ম্বনা ও প্রতারণার অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়ছে বিটিআরসিতে। গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ কলড্রপ, ধীরগতির ইন্টারনেট, অকারণে টাকা কেটে নেয়া। এজন্য বিটিআরসির পাশাপাশি প্রতিদিন অসংখ্য গ্রাহক অভিযোগ করছেন গ্রামীণফোনের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এবং তাদের কাস্টমার কেয়ার সেন্টারগুলোতেও। আবার অনেক গ্রাহক প্রতিকার না পেয়ে বদলে ফেলছেন অপারেটর। গত এক বছরেই গ্রামীণফোনের সেবায় অসন্তুষ্ট হয়ে অন্য অপারেটরে চলে গেছেন ২ লাখ ৭৪ হাজার গ্রাহক। দেশের ৫ মোবাইল অপারেটরের মধ্যে গ্রাহকের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে।
হামজা মোহাম্মদ নবী নামে এক গ্রামীণফোন গ্রাহকের অভিযোগ তার ফোনে রিচার্জ করলেই ১০ টাকা করে কেটে নেয়, কিন্তু কেটে নেয়ার কারণ উল্লেখ করা হয় না। এমনকি কোন এসএমএস দিয়েও জানানো হয় না। ছায়াবৃক্ষের রাজকন্যার অভিযোগ গ্রামীণফোনের গ্রাহক মানেই প্রতারণার শিকার। ভয়েস, এসএমএস সবই ব্যয়বহুল। তাহসিন সুমনের অভিযোগ হোয়াটস অ্যাপের জন্য প্যাক কিনলেও তার মূল ব্যালান্স থেকেই টাকা কেটে নেয় গ্রামীণফোন। আনন্দের অভিযোগ তার নাম্বার থেকে প্রতিদিন দুই টাকা করে কেটে নেয়া হয়। যদিও তিনি ব্যবহার করেন ফিচার ফোন। ওয়াইবিএস শাহিনের অভিযোগ তার ব্যালান্স থাকার পরও কল করতে পারছেন না। প্রতিবারই বলা হচ্ছে পর্যাপ্ত ব্যালান্স নেই। রকিবুল ইসলামের অভিযোগ কোন ধরণের নোটিশ ছাড়াই গ্রামীণফোন এসএমএসের চার্জ বৃদ্ধি করেছে। গ্রাহককে না জানিয়ে টাকা কেটে নেয়া গ্রামীণফোনের পলিসি নাকি গ্রাহক হয়রানি করার জন্য করা হয় সে জিজ্ঞাসাও রেখেছেন তিনি। সায়েম হাসান ইন্টারনেটে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, তার সিমে মাঝে মাঝে ইন্টারনেট আসে আবার চলে যায়। এধরণের অভিজ্ঞতায় তিনি বিরক্ত। ওমর ফারুক জানিয়েছেন রাজধানীর উপকন্ঠে অবস্থিত কেরাণীগঞ্জেই তিনি ফোরজি সেবা পান না। আবার রাজবাড়ির রুহসাফা বিন রুকাইয়ার অভিযোগ তার এলাকায় গ্রামীণফোনের কোন নেটওয়ার্কই পান না।
গ্রাহক সংখ্যার দিক দিয়ে শীর্ষে থাকা এই অপারেটরের বিরুদ্ধে শহরে-গ্রামে সব জায়গার মানুষই এরকম অভিযোগ করছেন। বিটিআরসির জরিপেই ওঠে এসেছে, ফোরজি সেবায় মানসম্মত যে গতিসীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে তিন অপারেটর (গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক)। কোন অপারেটরেই গতিসীমা নেই বেঞ্চমার্কের ধারের কাছে। কল সেটআপেও ব্যর্থতার বৃত্তে তিনটি অপারেটর (গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও টেলিটক)। আর কলড্রপে বেঞ্চমার্কে নেই গ্রামীণফোন। বিটিআরসির সর্বশেষ ‘কোয়ালিটি অব সার্ভিস (কিউওএস) ড্রাইভ টেস্টের’ প্রতিবেদনে জানা যায়, কলড্রপে সর্বোচ্চ হার ২ শতাংশ, পরীক্ষায় অন্য তিন অপারেটর উত্তীর্ণ হলেও গ্রামীণফোন ব্যর্থ হয়েছে। গ্রামীণফোনের কলড্রপের হার ৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ। যেকোন কল করার ক্ষেত্রে ৭ সেকেন্ডের মধ্যে সেই কল সংশ্লিষ্ট নম্বরে পৌঁছে যাওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানেও বেশি সময় নেয় গ্রামীণফোন। ফোরজি স্পিডেও ব্যর্থ এই অপারেটরটি। কোয়ালিটি অব সার্ভিসের বেঞ্চমার্ক অনুযায়ি, থ্রিজিতে ডাউনলোডের সর্বনিম্ন গতি ২ মেগাবাইট প্রতি সেকেন্ড (এমবিপিএস) আর ফোরজিতে ডাউনলোডের সর্বনিম্ন গতি হওয়ার কথা ৭ মেগাবাইট প্রতি সেকেন্ডে (এমবিপিএস)। ফোরজিতে গ্রামীণফোন নির্ধারিত এই মান পূরণ করতে পারেনি।
মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, বর্তমানে টেলিযোগাযোগ সেবার কোয়ালিটি অব সার্ভিস সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। এর অন্যতম কারণ অপারেটরদের গ্রাহক অনুপাতে তরঙ্গ কম থাকা। ফলে গ্রাহকদের প্রতিনিয়ত নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনা, কলড্রপ, ডাটা ব্যবহারে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গ্রামীণফোনের ৩৭ মেগাহার্টজ তরঙ্গ দিয়ে সেবা দিচ্ছে ৭ কোটি ২৫ লাখ গ্রাহককে। প্রায় ২০ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে ১ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। অথচ ১ মেগাহার্টজ তরঙ্গের বিপরীতে গ্রাহক শ্রীলঙ্কায় ২ লাখ ৭০ হাজার, পাকিস্তানে ১ লাখ ৪০ হাজার, আফগানিস্তানে ২ লাখ ৯০ হাজার, নেপালে ৫ লাখ ২২ হাজার, মালয়েশিয়ায় ২ লাখ, অস্ট্রেলিয়ায় ১ লাখ ২০ হাজার, জার্মানিতে ৩ লাখ ৯৯ হাজার। অন্যদিকে দেশের খুবই কম তরঙ্গ ব্যবহার করে গ্রাহক সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এত কম পরিমাণ তরঙ্গ ব্যবহার করার ফলে একদিকে যেমন বাড়ছে কলড্রপ, তেমনি নেটওয়ার্ক কভারেজ বাড়াতে যত্রতত্র বিটিএস বসানোয় তেজস্ক্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রাহকদের সেবার মান নিম্নমুখী হবার সাথে সাথে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে।
বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, দেশে যে হারে মোবাইল গ্রাহক বেড়েছে, সে হারে পর্যাপ্ত স্পেকট্রাম (তরঙ্গ) নেয়নি অপারেটররা। এ ছাড়া সময়মতো নেটওয়ার্ক উন্নয়ন, হালনাগাদ বা স¤প্রসারণ করেনি। দীর্ঘদিন যাবৎ স্পেকট্রাম কেনার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বিনিয়োগ করছে না অপারেটরগুলো। এসব কারণে অধিক গ্রাহকের চাপ নেটওয়ার্ক নিতে পারছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোবাইল নেটওয়ার্কে গ্রাহকের জন্য মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত হচ্ছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির। বিটিআরসি সেবার গুণগত মানের একটা ‘মানদন্ড’ নির্ধারণ করতে পারে এবং সেই মানদন্ড কতটা রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে, সেটি বিচার করতে পারে। কিন্ত বাস্তবে বিটিআরসি সে দায়িত্ব পালন করছে কিনা এ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিটিআরসির ভিত্তিহীন বিধিনিষেধ ও কারণ-দর্শানোর নোটিশটি এখনও বলবৎ থাকায় গ্রামীণফোনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও গ্রাহকসেবা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বিটিআরসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন খান বলেন, অপারেটরদের সেবা প্রদানের জন্য যে পরিমাণ স্পেকট্রাম চাহিদা সেটা এখন পর্যাপ্ত না। তাদেরকে স্পেকট্রাম কেনার জন্য বলা হচ্ছে। এছাড়া গ্রাহকরা যেসব অভিযোগ করেন তা পর্যালোচনা করে সমাধান করা হয়। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট অপারেটরকে নোটিশও দেয়া হয়। #

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (13)
NANI GOPAL ADHIKARI ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৪৩ এএম says : 0
IT'S QUIET CHEATING TO ALL PEOPLES IN BANGLADESH.
Total Reply(0)
Mohamad Rafiqul Islam ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৫৯ এএম says : 0
শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ থেকে কেহ যদি বিদেশে মিসড কল দেয় সেখানেও টাকা কেটে নেয়া হয়। এটা অনেক বড়ো প্রতারনা, পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এই প্রক্রিয়া আছে কিনা সবার কাছে প্রস্ন রইল।
Total Reply(0)
আনিসুর রহমান নাঈম ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৫৯ এএম says : 0
পোস্ট পেইড এর নামেও হয়রানি হচ্ছি, প্রিপেইড এর মত রিচার্জ করছি কিন্তু নাম দিয়েছে পোস্ট পেইড। দেড় টাকা প্রতি মিনিট কাটে। পোস্ট পেইড থেকে প্রিপেইডে যাওয়ার নাকি কোনো সিস্টেম নাই......আমি খুবই হয়রানি হচ্ছি
Total Reply(0)
Muhibur Rahman ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ২:০০ এএম says : 0
বিচার দেওয়ার কোনও জায়গা নাই।সবাই দূর্নীতিগ্রস্ত।
Total Reply(0)
Mohammed Arab ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ২:০০ এএম says : 0
বন্ধ করে দেওয়া দরকার।
Total Reply(0)
Shahjahan Ahmed ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ২:০০ এএম says : 0
গ্রামীণ ফোন সব থেকে বাজে এখন।
Total Reply(0)
Fazla Rabby ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ২:০০ এএম says : 0
সত্য কথা
Total Reply(0)
Saidul Islam ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ২:০১ এএম says : 0
Asolei sotto amio koidin dhore face korci
Total Reply(0)
রফিকুল ইসলাম ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ৮:৩৭ এএম says : 0
নিউজটি একদম সঠিক
Total Reply(0)
Pharmacist Nazmul ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ৯:১৯ এএম says : 0
Ami mirpure asi ato bar gp cc e phn dea bol lam je room e asle net proble... Kono protiker nai...r sudhu na... Bolun chratery kot se public er sathea...boro company bole ki gov.t kidu bol sr na..? Na ki amar buje ase na...
Total Reply(0)
হাসমত হাসান ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:৪০ এএম says : 0
বিদেশে মিস কল দিলেও প্রতি সেকেন্ডে ৪,৮৭ পয়সা কেটে নেওয়া হচ্ছে, অথচ বিদেশের সেই নম্বরে কোন মিস কলাই যায় নাই
Total Reply(0)
Mahadi Hassan Babu ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১১:৪৯ এএম says : 0
পেটানোর দরকার। কাছে থাকুন ডায়লগ ভুল, নেটওয়ার্ক দুরে চলে যায়।
Total Reply(0)
Md. Shaik Razay Rabby ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ৪:৩১ পিএম says : 0
রবি পোস্টপেইডে সবচেয়ে দূর্নীতি করে আসছে। বলছে ৪৮ পয়সা মিনিট কিন্তু কাটছে ৭৪/৭৫ পয়সা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন