রংপুরের পীরগঞ্জে ভেন্ডাবাড়ি পুলিশ তদন্ত ফাঁড়ির হাজতে শামছুল হক (৫৫) নামে এক আসামির রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (১৬ অক্টোবর) সকালে হাজতে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় ওই আসামির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২৩ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুঁড়ে। এতে পথচারীসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়।
এদিকে মৃত্যুর বিষয়টি জানাজানি হলে পুলিশকে ঘটনার জন্য দায়ী করে বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী সকালে ভেন্ডাবাড়ি পুলিশ তদন্ত ফাঁড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। দুপুর সাড়ে বারোটার পর বিক্ষোভে স্থানীয়দের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে লক্ষ্য ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হলে পুলিশ ২৩ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে। প্রায় ঘন্টাব্যাপী পুলিশ ও উত্তেজিত জনতার মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রেণ আসে। ঘটনাস্থলে রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সহ অতিরিক্ত পুলিশের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে।
এদিকে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় পুলিশ, ভিক্ষুক ও পথচারীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়। এদের মধ্যে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজ উদ্দিন রয়েছেন।
ভেন্ডাবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, নিহত শামছুল হককে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) রাতে পীরগঞ্জ উপজেলার বড়দরগাহ্ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাকে ভেন্ডাবাড়ি ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে আটক রাখা হয়।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে ফাঁড়ির হাজতখানায় তাকে গ্রিলের সাথে ফাঁস দেয়া অবস্থায় দেখ পায় পুলিশ। পরে তার মরদেহ সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়। এদিকে মৃত্যুর ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা সাথে পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় লিপ্ত হয়।
এদিকে নিহতের পরিবারের দাবি, ফাঁড়ির ইনচার্জ দুই লাখ টাকা দাবি করেছিল। সেই টাকা না দেয়ায় শামছুল হক পিটিয়ে হত্যা করেছে পুলিশ। একজন পশু ব্যবসায়ীকে অন্যায়ভাবে ধরে নিয়ে মাদক ব্যবসার আসামি হিসেবে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। এখন মৃত্যু হওয়াতে বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতেই আত্মহত্যার কথা বলা হচ্ছে।
ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আমিনুল ইসলাম বলেন, সকাল ৯ টার দিকেও শামছুলের সাথে কথা বলেছি। কিছুক্ষণ পরেই গিয়ে দেখি থানা হাজতের গ্রিলের সাথে গামছা ও পাঞ্জাবী গলায় পেচিয়ে সে আত্মহত্যা করেছে। তাকে কোন নির্যাতন করা হয়নি। তার কাছে কোন চাঁদাও দাবি করা হয়নি। আসামিকে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল বলেও জানান তিনি।
এব্যাপারে রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আসামির মৃত্যু নিয়ে যেহেতু সন্দেহ রয়েছে। একারণে লাশ ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন