শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সরকারি সম্পত্তি ‘বরাদ্দ’ দিচ্ছেন দিলু হাতিয়ে নেয়া হয়েছে ৩শ’ কোটি টাকা

ডিএসসিসি’র তিন মার্কেটের অনুসন্ধান করবে দুদক

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

সরকারি সম্পত্তি ‘বিক্রি’ ও ‘বরাদ্দ’ দেখিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকা। সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গড়ে একটি চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে এ অর্থ। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চক্রের সদস্যরা নানা কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে অন্তত: ৩শ’ কোটি টাকা। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দায়েরকৃত একটি অভিযোগ থেকে বেরিয়ে এসেছে এই ভয়াবহ চিত্র।

তথ্যমতে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অধীন ৩টি মার্কেট। নগর ভবন সংলগ্ন মার্কেট তিনটি রাজধানীর ফুলবাড়িয়ায় অবস্থিত। এগুলো হচ্ছে- ‘ফুলবাড়িয়া সিটি প্লাজা, ‘নগর প্লাজা’ এবং ‘জাকের সুপার মার্কেট’। সিটি করপোরেশন মার্কেট থেকে প্রাপ্ত দোকান ভাড়ায় কর্মচারীদের বেতন-ভাতা মেটায়। ভাড়া ওঠানোর দায়িত্বে রয়েছে ডিএসসিসি’র রাজস্ব বিভাগ। নকশা অনুযায়ী মার্কেটগুলোতে ৫ হাজার দোকান থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে দোকান রয়েছে ৮ হাজারের মতো। নকশাবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত ৩ হাজার দোকান বসানো হয়। মার্কেটগুলোতে এগুলো ‘এক্সট্রা দোকান’ হিসেবে পরিচিত। নকশায় কোনো অস্তিত্ব না থাকায় এক্সট্রা দোকানের কোনো হোল্ডিং নম্বরও নেই। বিনা দলিলে কখনো বা সাদা কাগজে টাকার অংক উল্লেখ করে ‘বিক্রি’র লেনদেন হয়। লেনদেনের পর ক্রেতাদের দেয়া হয় ‘অস্থায়ী বরাদ্দ’। নানা অজুহাতে এ বরাদ্দ বাতিলও করা হয়। না হয় নানা ছুতোয় আদায় করা হয় মোটা অংকের অর্থ। এভাবে এক দশকে হাতিয়ে নেয়া হয় ৩শ’ কোটি টাকা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগ এ অর্থের দেখা পায় না।

মাতুয়াইল নিবাসী আনোয়ার হোসেন অভিযোগটি দায়ের করেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, মার্কেটগুলোর কথিত সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দিলু একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তিনিই তিন মার্কেটের স্বঘোষিত সভাপতি। তারাই তিনটি মার্কেট জিম্মি করে রেখেছে। সরকারি সম্পত্তি থেকেই হাতিয়ে নিচ্ছেন অর্থ। দেলোয়ার হোসেন দিলু সিন্ডিকেটের শক্তি খাটিয়ে তিন মার্কেটে নকশাবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত ৩ হাজার দোকান তৈরি করে নিজের মতো করে ‘অস্থায়ীভাবে’ বরাদ্দ দিয়েছেন। দোকান প্রতি ৩০/৩৫ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেন। অর্থে তিনি মালয়েশিয়ায় ‘সেকেন্ডে হোম’ গড়ে তুলেছেন। রাজধানীর পল্টন খালপাড় শত কোটি টাকায় নির্মাণ করেছেন বাণিজ্যিক ভবন। দেশের ভেতরও নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন বিপুল সম্পত্তি। জাকের সুপার মার্কেটের কথিত সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ, সিটি প্লাজা মার্কেটের সেক্রেটারি মাহবুব, নগর প্লাজা মার্কেটের সেক্রেটারি মাসুদ, স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মীর মাহবুব রনি, ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আহাদ বাপ্পী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল ওরফে বড় দাড়িওয়ালা দিলু সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য। তাদের পক্ষে ‘কালেক্টর’ হিসেবে কাজ করেন মার্কেট সমিতির কেরানি মো. আবুল কাশেম।

অভিযোগের তথ্যমতে, এই সিন্ডিকেট গতবছর মার্কেটের ১২শ’ দোকান বরাদ্দগ্রহিতার কাছ থেকে ৬ থেকে ১৫ লাখ টাকা আদায় করে। অতিরিক্ত এ অর্থ দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ১২শ’ দোকান দীর্ঘদিন তালা দিয়ে রাখেন দিলু সিন্ডিকেট। যারাই টাকা দিতে পেরেছেন তাদের দোকানের তালা খুলে দেয়া হয়। এভাবে জিম্মি করে ‘অস্থায়ী বররাদ্দ গ্রহিতা’দের কাছ থেকে এক বছরে হাতিয়ে নেয়া হয় প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। মৌখিকভাবে কখনো বা সাদা কাগজের ওপর স্বাক্ষর দিয়ে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা নেয়া হয়। বরাদ্দ বাতিল হয়ে যাওয়ার ভয়ে এ বিক্রির কথা গ্রহিতা গোপন রাখেন। বরাদ্দ বৈধ করার আশ্বাসে কিছুদিন পরপরই দিলুর লোকেরা দোকানের ক্রেতার কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ আদায় করেন। অন্যদিকে ডিএসসিসি’ রাজস্ব বিভাগও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ‘অবৈধ দোকান’ উচ্ছেদের ধোঁয়া তুলে দোকান বরাদ্দ গ্রহিতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। আর তখনই ‘নগর ভবন ম্যানেজ’র কথা বলে দিলু সিন্ডিকেট তাদের চাঁদাবাজি বৈধ করে নেন। নগর ভবনের রাজস্ব কর্মকর্তা এবং দিলু সিন্ডিকেট পরস্পর সমঝোতায় দেড় দশক ধরে লুটে নেন সরকারি সম্পত্তির শত শত কোটি টাকা।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দেলোয়ার হোসেন দিলুকে ফোন দেয়া হয়। কিন্তু তার ফোন রিসিভ হয়নি। তার সিন্ডিকেট সদস্য আতিকুর রহমান স্বপনকে ফোন দেয়া হয়। তিনিও ধরেননি। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি। তিন মার্কেটের একটির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ হাসান। তাকে ফোন দেয়া হলেও তিনি ধরেননি। ক্ষুদে বার্তায়ও কোনো সাড়া দেননি।

দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত বলেন, সরকারি সম্পত্তি আত্মসাৎ দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ। সরকারি সম্পত্তির মাধ্যমে কেউ অবৈধ সম্পদ অর্জন করলে দুদক এটির বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে। এর সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকলে সেটিও দুদক অনুসন্ধান করবে।
উল্লেখ্য, এর আগে নীলক্ষেত লেপতোষকের মার্কেটে ছাদের ওপর ছাদ বরাদ্দ দিয়ে প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় একটি চক্র। ওই ঘটনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটির তৎকালিন প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ওই মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়। মামলাটি এখন বিচারাধীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন