মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

সড়ক দুর্ঘটনা ও ভোগান্তি লাঘবে নাগরিক সচেতনতা জরুরি

| প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

নিরাপদ সড়ক এখন নাগরিক সমাজের অন্যতম আকাক্সক্ষা। সড়ক দুর্ঘটনা, নিরাপত্তাহীনতা, যানজটসহ সড়ক-মহাসড়ক ও রাজপথে জনভোগান্তি নিরসনে নাগরিক সমাজের দাবী দীর্ঘদিনের। এই দাবি কখনো কখনো সময়ে গণবিস্ফোরণে পরিনত হতে দেখা গেছে। গত বছর আগস্টের প্রথম দিকে রাজধানীতে বাসের চাকায় পিস্ট হয়ে দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর রাজধানীসহ সারাদেশের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবীতে রাস্তায় নেমে এসেছিল। চার-পাঁচদিনের সেই আন্দোলন সরকার, প্রশাসন ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় বড় ধরনের কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল। নিরাপদ সড়কের জন্য শিক্ষার্থীদের সব দাবী মেনে নিয়ে তা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার। এক বছর পর সে বিষয়ে কতটা অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে তা নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ না করেও এটুকু বলা যায় যে, নিরাপদ সড়কের নাগরিক প্রত্যাশা পুরণ এখনো যেন বহুদূরের পথ। বলা বাহুল্য, সড়কে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকায়ণ, শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নাগরিক সমাজেরও বিশেষ দায়িত্ব ও ভূমিকা রয়েছে। সড়কে চলাচল, রাস্তা পারাপার, গাড়ী পার্কিং, ফুটপাথ, ওভারব্রীজ ও ফ্লাইওভার ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলার আইনগত বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত না হলে শুধুমাত্র ট্রাফিক পুলিশ বা অবকাঠামো উন্নয়ন করেই সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। কোটি কোটি অসচেতন, বেখেয়াল-বেপরোয়া মানুষকে শুধুমাত্র পুলিশি ব্যবস্থায় নিরাপত্তা বলয়ে আবদ্ধ রাখা সম্ভব নয়। ট্রাফিক শৃঙ্খলা এবং সিভিক সেন্স সম্পর্কে নাগরিক সচেতনতাই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জরুরী বিষয়।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের মতামতসহ গণমাধ্যমে অনেক কথাই বলা হচ্ছে। দীর্ঘদিনে বেড়ে ওঠা এই সমস্যা কোনো সরকারী ফরমান বা আইনী বা প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় রাতারাতি নিরসন হওয়া সম্ভব নয়। আমাদের সমাজের ভেতর থেকেই এ বিষয়ে শিক্ষা, সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা গড়ে উঠলে তবেই তার স্থায়ী প্রতিকার সম্ভব। শুধু সড়ক দুর্ঘটনা, যানজট বা সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায়ই নয়, নগরকেন্দ্রিক আধুনিক সমাজব্যবস্থায় নানা ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজের পারস্পরিক মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতা, শৃঙ্খলা ও দায়িত্বশীল ভ’মিকার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের পরিবর্তমান সমাজবাস্তবতায় এ বিষয়গুলো সামনে রেখেই সামগ্রিক পরিবর্তনের উদ্যোগ নিতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা, যানজট, পরিবেশ দূষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্য সচেতনতার মত বিষয়গুলোকে আমাদের সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অন্যতম বিষয় হিসেবে অন্তভর্’ুক্ত করতে হবে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকেই। শান্তি-শৃঙ্খলা ও নাগরিক নিরাপত্তার সাথে যুক্ত এসব বিষয় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে ধারাবাহিকভাবে পাঠ্যক্রমভুক্ত করার গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। সেই সাথে প্রয়োজন বিদ্যমান ট্রাফিক আইনের সঠিক মাত্রায় যথাযোগ্য বাস্তবায়ণ।

পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন, মহাসড়কের লেনবৃািদ্ধ, ফ্লাইওভার নির্মান, মেট্টোরেলসহ বেশকিছু মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু সড়ক-মহাসড়কে মানুষ যে হারে দুর্ঘটনা, প্রাণহানী ও ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, তা এ খাতে সরকারের সব অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার প্রতিটি সেক্টরে ও প্রতিটি স্তরে সংশ্লিষ্ট মালিক-শ্রমিকদের স্বেচ্ছাচারিতা, মালিক সমিতির নামে চাঁদাবাজি, যথেচ্ছ ভাড়া আদায়, ফিটনেসবিহিন গাড়ী, ভুয়া লাইসেন্সধারী অদক্ষ ও নিরক্ষর চালকের বেপরোয়া আচরণের ভয়াবহ ঝুঁকি থেকে যাত্রীদের মুক্ত করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। দৈনিক চুক্তিভিত্তিক ড্রাইভার নিয়োগের বিদ্যমান ব্যবস্থা বাতিল করে মাসিক বেতনভিত্তিক ড্রাইভার হেল্পার নিয়োগের আইনগত বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে হবে। সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নাগরিক জীবনের সর্বস্তরে সচেতনতা এবং নাগরিক সমাজের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন উৎসাহিত করতে সরকারকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। প্রথমেই রাস্তা ও গণপরিবহণ ব্যবহারে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও নাগরিক হিসেবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে ট্রাফিক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গতানুগতিক দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে গিয়ে জনবান্ধব ও বৈষম্যহীন ভূমিকা পালন করতে হবে। নাগরিক নিরাপত্তা শৃঙ্খলা ও দায়িত্বশীলতা গড়ে না উঠলে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও অবকাঠামো উন্নয়ন কোনো কাজে আসবে না। অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের শিক্ষা, নীতি-নৈতিকতা ও শৃঙ্খলাবোধের উন্নয়ন এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ থাকতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন