গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের কোচাশহর হোসিয়ারী পল্লীর শ্রমিকদের দমফেলার ফুসরৎ নেই; শীতকে সামনে রেখে দেশের সর্বমোট চাহিদার এক তৃতীয়াংশ শীতবস্ত্র উৎপাদনকারী এ এলাকার ব্যবসায়ীরা নয়ারহাটে প্রতিদিন বিক্রি করছে কোটি কোটি টাকার শীতবস্ত্র। চলতি শীত মৌসুমে এখানে উৎপাদিত শীতবস্ত্রের বেচা বিক্রি ৫শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে দেশের প্রায় সকল এলাকা থেকে আসা শত শত ছোট-বড় ব্যবসায়ী এখান থেকে কিনতে শুরু করেছেন সকল বয়সী মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রকারের শীতবস্ত্র। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলা এ শীতবস্ত্রের হাটে পাইকারী ব্যবসায়ীরা কেনাকাটা করে ট্রাক-বাস-পিকআপ-ট্রেনসহ বিভিন্ন যানবাহনযোগে এ সব মালামাল নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে । সরকারী সহায়তা ছাড়াই স্বউদ্যোগে গড়ে ওঠা কুটির শিল্পাঞ্চলের প্রধান বিপনণকেন্দ্র এ বাজারটির অবস্থান গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কোচাশহর ইউনিয়নের পেপুলিয়া গ্রামের নয়ারহাট। নয়া মিয়া সরকার নামের একজন উদ্যোক্তার ব্যাক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা ছোট্ট বাজারটি এখন সারা দেশে পরিচিতি লাভ করেছে শীতবস্ত্রের পাইকারী বাজার হিসেবে।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, পাকিস্তান শাসনামলের প্রথম পর্যায়ে এই পেপুলিয়া গ্রামের এক যুবকের হাত ধরে এখানে সূত্রপাত হয় হোসিয়ারী শিল্পের। মোজা তৈরীর ছোট্ট দুটি হাত মেশিনের সূত্র ধরে এখানকার মানুষ পথ দেখেন শুধু কৃষিজমিতে ফসল ফলানো, মাছ ধরা বা কুলি-মজুরের কাজ নয়- অন্যধরনের কাজ বা ব্যবসা করেও জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি অনেক বড় কিছু করার। গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে পূর্ব দিকে কোচাশহর ইউনিয়নের ছোট্ট একটি গ্রাম পেপুলিয়া। এ গ্রামেরই এক যুবক আব্দুর রহিম ভাগ্যান্বেষণে তৎকালীণ পূর্ববঙ্গের রাজধানী ঢাকায় গিয়ে এক মাড়োয়ারী ব্যবসায়ীর মোজা কারখানায় কাজ করেন। বৃটিশ শাসনামলের শেষ পর্যায়ে দেশ ভাগের কারণে ওই মাড়োয়ারী ব্যবসায়ী ভারতে চলে যাওয়ার সময়ে আব্দুর রহিমকে দান করে যান দুটি মোজা তৈরীর ছোট্ট হাত মেশিন(হ্যান্ড লুম) আর সামান্য কিছু সুতো। এ নিয়েই বাড়ি ফিরে মোজা তৈরী করে বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে প্রসার ঘটে তার এ ব্যবসার। উন্নয়ন ঘটে তার ভাগ্যের। এখানে কাজ শিখে নিজেরাও মেশিন কিনে মোজা তৈরী এবং বিক্রি শুরু করেন এখানকার আরো অনেকে। পাকিস্তান আমলেই এ জনপদ পরিচিতি পায় কুটির শিল্পের এলাকা হিসেবে।
সরেজমিনে ওই হাটে গিয়ে দেখা যায়, ছোট-বড় শতাধিক দোকানে এখন চলছে পুরোদমে বেচাকেনা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকাররা ঘুরে ঘুরে কিনছেন তাদের প্রয়োজনীয় নানা প্রকারের শীতবস্ত্র। তবে নয়ারহাট হোসিয়ারী শিল্প মালিকরা অভিযোগ করেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাট সহ ভাঙ্গাচোরা রাস্তার কারনে পন্য উৎপাদন ও বিপননে ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের। কারন বিদ্যুৎ না থাকলে পাওয়ার লুম গুলো বন্ধ থাকে আর ভাঙ্গা রাস্তার কারনে বড় গাড়ী যাতায়াত করতে পারেনা। নয়ারহাটের ব্যবসায়ীরা জানালেন, এখানে কোন ব্যাংক না থাকায় ব্যাংকিং সেবা বঞ্চিত উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র মালিকরা বিভিন্ন এনজিও এবং দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তারা আরো জানান, সারা বছর ধরে উৎপাদিত শীতবস্ত্র অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায়। হোসিয়ারী শিল্প মালিকদের অভিযোগের বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামকৃষ্ণ বর্মন জানান, শিল্পক্ষেত্রে অনগ্রসর গাইবান্ধার জেলার শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত এই এলাকার কুটির শিল্প শীতবস্ত্র তৈরীতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন