শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঋণ পুনঃতফসিলের সময় বাড়ল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

খেলাপি ঋণ দীর্ঘদিন থেকে দেশের ব্যাংকিং খাত তথা সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এমনকি এই ঋণকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নীরব ঘাতকও বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে বর্তমানে দেশের খেলাপি ঋণ ১ লাখ কোটি টাকার কিছু বেশি। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদে নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই অর্থনীতিতে গতি ফেরাতে এই নীরব ঘাতক দুরীকরণে নজর দেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। খেলাপি ঋণের লাগাম টানতে বিশেষ সুবিধা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। মন্দ ও ক্ষতি জনিত মানে শ্রেনীকৃত খেলাপি ঋণে ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত স্থিতির উপর ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট জমা প্রদান সাপেক্ষে ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেন। গত ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে সার্কুলারও জারি করে। কিন্তু এই সার্কুলার জারির পর পরই এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট করা হয়। 

রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সার্কুলারকে স্থগিতাদেশ দেয়। পাশাপাশি হাইকোর্টের এই আদেশকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে রুল জারি করা হয়। বর্তমানে এই রুলের চূড়ান্ত শুনানি চলছে। আপিল বিভাগ ২০ অক্টোবর সময় বেঁধে দিয়ে রুল নিষ্পতি করার পরামর্শ দেয়। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য গত রোববার শুনানি শেষে হাইকোর্টের আদেশের মেয়াদ আবারও বাড়িয়ে এক মাস অথবা এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ খেলাপিরা বিশেষ সুবিধায় ঋণ পুনঃতফসিলে আরও এক মাস সময় পাবেন। ২০ নভেম্বর পর্যন্ত তারা সময় পাবেন। তবে এ সময় সুবিধাভোগীরা নতুন কোনো ঋণ নিতে পারবেন না।
বর্ধিত সময় সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, বিশেষ সুবিধার বিষয়টি এখন উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। ২০ অক্টোবর পর্যন্ত সময় ছিল। যেহেতু আদালত সময় বাড়িয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সময় বাড়াবে। বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক-দেড় মাস ধরে ঋণ খেলাপিরা বিশেষ সুবিধা নিতে ব্যাংকে বেশি ভিড় করছেন। এদিকে বিশেষ সুবিধায় ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য বেশি ভিড় দেখা যাচ্ছে সরকারি ব্যাংকগুলোতে। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকে পুনঃতফসিলের জন্য আবেদন করেছে সাত শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকটির পাওনা ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এছাড়া বিশেষ সুবিধার জন্য সোনালী ব্যাংকে আবেদন করেছে এক হাজার, বেসিক ব্যাংকে ৫২০, অগ্রণীতে ৩০০ এবং রূপালী ব্যাংকে আবেদন পড়েছে প্রায় আড়াইশ।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিভিন্ন ব্যাংকের অনুষ্ঠানে বলেছেন, খেলাপি ঋণ কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে। খেলাপিরা এ সুযোগ নিয়ে ঋণ নিয়মিত করবেন। কেউ যদি এ সুযোগও গ্রহণ না করেন বা ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ খেলাপি হয়ে বসেন, তাহলে তাদের ছাড় দেয়া হবে না। ব্যাংকের টাকা নিয়ে ফেরত দেবে না আবার সেই কাটা দিয়ে আরাম-আয়েস করবে, এটা তো হতে দেয়া যাবে না।
পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মো. এহসান খসরু বলেন, দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে অনেক খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে আমাদের কাছে আবেদন করছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার মতো ঋণ রিশিডিউলিংয়ের জন্য আমরা বোর্ডে পাঠিয়েছি। বোর্ড যাচাই-বাছাই করে এটা অনুমোদন দেবে। আরও অনেকে আবেদন করছেন। পরিমাণ আরও বাড়বে। তিনি বলেন, একদিকে খেলাপিদের কাছ থেকে বিভিন্ন কৌশলে ঋণ আদায় করা হচ্ছে। অন্যদিকে পুনঃতফসিলের মাধ্যমে ঋণ নিয়মিত করা হচ্ছে। আশা করছি, সব মিলিয়ে ডিসেম্বর শেষে আমাদের খেলাপি এখন যা আছে তার অর্ধেকে নেমে আসবে।
সরকারের নির্দেশনায় চলতি বছরের ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা জারি করে। এতে মাত্র দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সরল সুদে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ টানা ১০ বছর ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয়া হয়। এরপর ওই সার্কুলারের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আদালতে একটি রিট দায়ের করা হয়।
এদিকে বিশেষ এ সুবিধা গ্রহণকারীরা ব্যাংক থেকে আবার নতুন করে ঋণ নিতে পারবেন। প্রচলিত নিয়ম মেনে সতর্কতার সঙ্গে ঋণ দিতে বলা হয়েছে। নতুন ঋণের কিস্তির পরিশোধ না করলে পুনঃতফসিল সুবিধা বাতিল হবে। সুবিধাগ্রহণের পর নিয়মিত অর্থ পরিশোধ না করলেও তাদের খেলাপি করা যাবে না। এখানে ছাড় দেয়া হয়েছে। নয়টি মাসিক কিস্তির তিনটি এবং ত্রৈমাসিক তিন কিস্তির একটি পরিশোধ না করলেও নিয়মিত থাকা যাবে। তবে মাসিক কিস্তির মধ্যে ছয়টি ও ত্রৈমাসিক কিস্তির দুটি পরিশোধ না করলে পুনঃতফসিল সুবিধা বাতিল করা হবে।
স্বাধীনতার পর থেকে যারা ঋণখেলাপি তাদের এককালীন এক্সিট সুবিধা দেয়া হবে। এক্ষেত্রে তাদের খেলাপি ঋণের হিসাব হবে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের এককালীন হিসাবায়ন ভিত্তিতে। অর্থাৎ ১৯৭১ সালের পর থেকে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যত খেলাপি ঋণ আছে তার হিসাব করা হবে। কোনো ঋণখেলাপি যদি মনে করেন এককালীন ঋণ পরিশোধ করে খেলাপির তালিকা থেকে বেরিয়ে যাবেন, সে ব্যবস্থাও রাখা হয় সার্কুলারে।
এতে বলা হয়, ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ঋণখেলাপিরা ঋণ পরিশোধের জন্য এক বছর পর্যন্ত সময় পাবেন। আগের সব সুদবাবদ পাওনা মওকুফ করা হবে। এককালীন পরিশোধের জন্য সুদহার আরও কম- ব্যাংকের কস্ট অব ফান্ডের সমান। তবে এক বছরের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করলে সুবিধা বাতিল হবে।##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
আবুলহোসেন ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩৯ এএম says : 0
এখন কি আমি ২%ডাউন পেমেন্টদিয়ে আবেদন করতে পারবো আমি আজ এ সার্কুলার দেখলাম ৪০০০০০টাকা ঋন খেলাপি হয়ে পুলিশের হয়রানিতে সাবাবিক ভাবে বসবাস করতে পারিনা পালিয়ে থাকতে হয় তাই আবেদনের তারিক ২০/১০/২০১৯ থেকে আর একমাস বারানো যায়
Total Reply(0)
আবুলহোসেন ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩৯ এএম says : 0
এখন কি আমি ২%ডাউন পেমেন্টদিয়ে আবেদন করতে পারবো আমি আজ এ সার্কুলার দেখলাম ৪০০০০০টাকা ঋন খেলাপি হয়ে পুলিশের হয়রানিতে সাবাবিক ভাবে বসবাস করতে পারিনা পালিয়ে থাকতে হয় তাই আবেদনের তারিক ২০/১০/২০১৯ থেকে আর একমাস বারানো যায়
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন