ঈদের চাঁদ সম্পর্কিত শরীয়তের সাক্ষ্যবিধি: চাঁদ যখন ব্যাপকভাবে দেখা না যায় বরং ২/৪ জনে দেখে থাকে মাত্র; সেক্ষেত্রে অবস্থা যদি এমন হয় যে, ওই অঞ্চলের আকাশে কোন মেঘ-বৃষ্টি, আবছা-অন্ধকার কিছুই ছিল না; আকাশের দিগন্ত ও চাঁদ উদয়স্থল একেবারে মেঘমুক্ত ও পরিস্কার ছিল। তা সত্তে¡ও আর অন্য কেউ চাঁদ দেখতে পেল না। তা হলে এমতাবস্থায় কেবল ২/৩ জনের দেখা ও সাক্ষ্যদান শরীয়তের বিবেচনায় গ্রহণযোগ্য হবে না। যে পর্যন্ত না মুসলমানদের বড় একটা দল চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দেবে , চাঁদ দেখা প্রমাণিত হবে না । যারা দেখার সাক্ষ্য দেবে, তা তাদের ভুল বোঝাবুঝি, দৃষ্টিভ্রম বা মিথ্যা বলে ধর্তব্য হবে। ( প্রাগুক্ত: পৃ-৩৫২)
হ্যাঁ, যদি চাঁদ দেখা যাওয়ার ওই দিগন্ত বা স্থান মেঘে ঢাকা থাকে, অন্ধকার থাকে, বৃষ্টি-বাদল থাকে, যার কারণে চাঁদ দৃষ্টিগোচর হতে প্রতিবন্ধক হয়ে থাকে; সেক্ষেত্রে মাহে রামাদানের রোযা পালনের জন্য একজন বিশ্বস্ত (মুসলিম) লোকের এবং ঈদ ইত্যাদির ক্ষেত্রে দু’জন বিশ্বস্ত মুসলমানের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে। (প্রাগুক্ত+রাদ্দুল মুহতার: খ-৩, আল্লামা ইবনু আবেদীন র., পৃ-৩৫২-৩৫৩, ৩৫৫-৩৫৬ / আল-বাহরুর রায়িক: আল্লামা ইবনু নুজাইম র., খ-২, পৃ-৪৬০, যাকারিয়া বুক ডিপো, ই.পি. ভারত, তা.বি.)
কিন্তু সরকারের পক্ষে এমন সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে সারা দেশে ঘোষণা করার জন্য তিনটি অবস্থার যে কোন একটি পদ্ধতি অবশ্যই অনুসরণ করে ঘোষণাদান জরুরী হবে। যদি এ সব পদ্ধতির কোনটিই না হয় তা হলে অন্য কোন প্রকার সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ঈদের ঘোষণাদান সরকারের পক্ষে বা অন্য কোন দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান/সংস্থা/দলের জন্য জায়েয নয়। শরীয়ত অনুমোদিত উক্ত পারিভাষিক সেই তিনটি প্রক্রিয়া হল:১
১। (শাহাদাত ‘আলার-রুইয়া)
২। (শাহাদাত ‘আলা শাহাদাতের রুইয়া)
৩। (শাহাদাত ‘আলাল-কাদা)
শাহাদাত ‘আলার রুইয়া: ‘শাহাদাত ‘আলার-রুইয়া’ হল, এমন একজন আলেম বা একদল আলেমের সামনে উক্ত সাক্ষ্যদাতা সরাসরি উপস্থিত হবেন যিনি বা যারা শরীয়তের ফিকাহ্ তথা আইন বিষয়ক বিধি-বিধান এবং ইসলামের সাক্ষ্য-আইন ও নিয়ম-নীতি বিষয়ে অভিজ্ঞ মর্মে দেশের মানুষ আস্থা ও প্রত্যয় রাখেন। আর এই আলেম বা আলেমগণ সর্বসম্মতভাবে তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের ফায়সালা দেন।
শাহাদাত ‘আলাশ্শাহাদাত: ‘শাহাদাত ‘আলাশ্শাহাদাত’ হল, যদি উক্ত সাক্ষী খোদ উপস্থিত না হন অথবা রোগ-ব্যাধি বা সফর করে আসতে না পারেন তা হলে সেক্ষেত্রে তেমন প্রত্যেক সাক্ষীর স্থলে দু’জনকে সাক্ষী বানাবেন যে, আপনারা সাক্ষী থাকুন, আমি আজ সন্ধ্যায় বা রাতে এতটা, এত মিনিটে, এ স্থানে বা অমুকস্থানে নিজ চোখে চাঁদ দেখেছি। এরপর এই দু’জন সাক্ষী উক্ত আলেম বা আলেমগণের সামনে এ মর্মে সাক্ষ্য দেবেন যে, ‘আমাদের সামনে অমুক ব্যক্তি বর্ণনা করেছেন যে, “আমি আজ/অমুক রাতে, অমুক স্থানে, নিজ চোখে চাঁদ দেখেছি”-তারই ভিত্তিতে- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি (অমুকের পুত্র অমুক) আমাকে তাঁর সাক্ষ্যের ওপর/ব্যাপারে সাক্ষী বানিয়েছেন। সে জন্য আমি তাঁর সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে সাক্ষ্য প্রদান করছি।
শাহাদাত ‘আলাল-কাদা: ‘শাহাদাত ‘আলাল-কাদা’ হল, যে-স্থানে চাঁদ দেখা গেছে, সেখানে যদি সরকারের কোন উপ-কমিটি থাকে এবং তাতে কয়েকজন এমন আলেম অন্তর্ভূক্ত থাকেন যাঁদের ফাতওয়াদান ও তেমন যোগ্যতা বিষয়ে অন্যান্য আলেমগণ ও সাধারণ জনগণের আস্থা থাকে এবং যিনি চাঁদ দেখেছেন তিনি তাঁদের কাছে উপস্থিত হয়ে নিজ স্বচক্ষে দেখার বিষয়টি সাক্ষ্য আকারে পেশ করেন আর সেই সাক্ষ্য ওই আলেমগণ গ্রহণ করেন।
তা হলে এই আলেমগণের ফায়সালা এ অঞ্চলের জন্য যথেষ্ট হবে বটে, যে অঞ্চলে চাঁদ দেখা গেল, সাক্ষ্য পাওয়া গেল; কিন্তু বাকী পুরো দেশের বা সকল অঞ্চল ও সব জেলার জন্য তেমন ব্যাপকভাবে প্রযোজ্য হওয়ার নিমিত্তে ঘোষণাদানের জন্য জরুরী হল, সরকারের নিযুক্তিয় কেন্দ্রিয় কমিটির কাছে এ আলেমগণের ফায়সালাটি যেন নিম্নোক্ত শর্ত মোতাবেক উপস্থাপিত হয়:
এ আলেমগণ বা তাঁদের প্রধান এমনটি লিখে পাঠাবেন যে, ‘অমুক সময়ে আমাদের সামনে দু’জন বা ততোধিক সাক্ষীগণ নিজ চোখে চাঁদ দেখার সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। আর আমাদের কাছে এ সাক্ষী গণ এ নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য । যে কারণে তাঁদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে চাঁদ প্রমাণিত হওয়ার ফায়সালা প্রদান করা হয়েছে।’ -এই লেখা দু’জন সাক্ষীর সামনে লিখে মোহরাঙ্কিত করতে হবে এবং এই সাক্ষীগণ লিখিতটি নিয়ে ‘কেন্দ্রিয় চাঁদ দেখা কমিটি’র আলেমগণের বরাবরে নিজসাক্ষ্যসহ পেশ করবে যে, ‘অমুক আলেমগণ এই লেখা আমাদের সামনেই লিখেছেন।’ (মুফতী শফী‘ র., জাওয়াহিরুল ফিকাহ্: খ-১, পৃ-৩৯৫-৪০১; ৯ম সংস্করণ, ১৪০৭হিজরী, মাকতাবা দারুল উলূম, করাচী +আহসানুল ফাতাওয়া:মুফতী রশীদ আহমদ র. খ-৪, পৃ-৪৭৮, যাযকারিয়া বুক ডিপো, ইউ.পি.ভারত; সংস্করণ-১৯৯৪খ্রি.)
কেন্দ্রিয় কমিটির কাছে যদি উক্ত উপ-কমিটির আলেমগণের ফায়সালা শরীয়তসম্মতভাবে হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়; তা হলে সেক্ষেত্রে এই কেন্দ্রিয় কমিটি সরকারীভাবে প্রদত্ত অধিকার বলে পুরো দেশের বেলায় ঘোষণা প্রদান করতে পারেন। এমন ঘোষণা সকল মুসলমানের জন্য মেনে নেয়া ওয়াজিব বলে গণ্য হবে। (প্রাগুক্ত: পৃ- ৪০২)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন