শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সড়ক পরিবহন আইনে গেজেট প্রকাশ

১ নভেম্বর থেকে কার্যকর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

একজন চালক দৈনিক পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালাবেন না। সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এমন বিধান রেখে সড়ক পরিবহন আইনের গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার, যা ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয়।
সড়ক-মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত গতকাল বুধবার এই আইনের গেজেট প্রকাশ করা হয়। গেজেটে বলা হয়েছে, এসআরও নং-৩৩৩-আইন/২০১৯, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ (২০১৮ সনের ৪৭ নং আইন)-এর ধারা ১-এর উপধারা (২)-এ ক্ষমতাবলে সরকার চলতি বছরের ১ নভেম্বর থেকে এই আইন কার্যকর করবে। এই গেজেট অনুযায়ী আগামী ১ নভেম্বর থেকে সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করার ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা রইল না। এই আইনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যাকান্ডের জন্য মৃত্যুদন্ডের বিধানসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপ‚র্ণ ধারা রাখা হয়েছে। এসব ধারার মধ্যে অধিকাংশের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন পরিবহন শ্রমিক-মালিকরা।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-বিলটি সংসদে তোলা হয়। পরে ১৯ সেপ্টেম্বর তা সংসদে পাস হয়। প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের পর ৮ অক্টোবর আইনটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। এর আগে একই বছরের ৬ আগস্ট মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়া হয় ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’। তবে আইনটির ১-এর (২) ধারায় বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্টের গেজেটের পর আইনটি কার্যকর করতে সরকারের পক্ষ থেকেও গেজেট প্রকাশ করতে হবে। কিন্তু মালিক- শ্রমিকদের আপত্তির কারণেই এতদিন সরকার সে গেজেট প্রকাশ করেনি। এ কারণেই এতদিন কার্যকর হয়নি আইনটি। অবশেষে সেই গেজেট প্রকাশ করল সরকার।
এদিকে, গত ৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী ৬টি নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনাগুলো হলোÑ দূরপাল্লার গাড়িতে বিকল্প চালক রাখতে হবে। একজন চালক দৈনিক পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালাবেন না, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। গাড়ির চালক ও তার সহকারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্দিষ্ট দূরত্বে সড়কের পাশে সার্ভিস সেন্টার বা বিশ্রামাগার তৈরি করতে হবে। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে রাস্তা পারাপার বন্ধ করতে হবে বা সিগন্যাল মেনে পথচারী পারাপারে জেব্রাক্রসিং ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট বাঁধা নিশ্চিত করতে হবে। সড়ক পরিবহন আইনে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হচ্ছে- এই আইনের ১০৫ ধারায় বেপরোয়া ও অবহেলাজনিত গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে এবং সেই দুর্ঘটনায় কেউ আহত বা নিহত হলে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদন্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, ৯৮ ধারায় সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। আর গাড়ি চালিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হত্যা করলে বা ইচ্ছাকৃত দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ক্ষেত্রে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে সড়ক পরিবহন আইনে।
আইনের ৬ ধারার (ক) উপধারায় বলা হয়েছে, অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে বয়স হতে হবে ন্য‚নতম ১৮ বছর, পেশাদারদের ক্ষেত্রে ২০ বছর। একই ধারার (গ) উপধারায় বলা হয়েছে, চালকের শিক্ষাগত যোগ্যতা হতে হবে কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাস। অন্যদিকে, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির জন্য ৯৮ ও ১০৫ ধারায় শাস্তির বিধান রয়েছে। ড্রাইভিং লাইসেন্সের যোগ্যতার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে এই আইনের ৬ ধারায় ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে পেশাদার চালককে ৮ম শ্রেণি পাস ও বয়স ২১ বছর হতে হবে। এছাড়া, অপেশাদার চালকের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১৮ বছর বয়সের বিধান রাখা হয়েছে।
আইনে বলা হয়েছে, হত্যার উদ্দেশ্যে গাড়ি চালানো হয়েছে বলে প্রতীয়মান হলে দন্ডবিধির ৩০২ ধারায় মামলা হবে। এই আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড। এক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সাপেক্ষে নির্ধারণ করা হবে দুর্ঘটনার প্রকৃতি। প্রতিবেদনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যাকান্ডের প্রমাণ পেলে দন্ডবিধির ৩০২ ধারায় মামলা হবে। এই ধারায় শাস্তি সর্বোচ্চ মৃত্যুদন্ড।
আর তদন্ত প্রতিবেদনে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে হতাহতের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে সড়ক পরিবহন আইনের ১০৩ ধারায় মামলা হবে। এই ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ৫ বছর জেল অথবা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ড হতে পারে। অর্থদন্ডের পরিমাণ আদালত নির্ধারণ করবেন। তবে এই আইনে কয়েকটি ধারায় আপত্তি তুলেছিল মালিক শ্রমিকরা। আইনের বিষয়ে শ্রমিকদের দাবি ছিল সড়ক পরিবহন আইনের সব ধারা জামিনযোগ্য করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনায় শ্রমিকের কারাদন্ডের মেয়াদ ৫ বছরের বিধান বাতিল করতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণির বদলে পঞ্চম শ্রেণি করতে হবে। আর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা ইচ্ছাকৃত দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মৃত্যুদন্ডের বিধানেও পরিবর্তন আনতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন